ভোটের দুদিন আগে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমালো সরকার

জেসমিন পাপড়ি
2018.12.27
ঢাকা
181227_INTERNET_1000.jpg মোবাইল ফোনে সংবাদ পড়ছেন বাংলাদেশের একজন ব্যবহারকারী। ২০ ডিসেম্বর ২০১৮।
[এপি]

হঠাৎ করেই সারা দেশে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের (থ্রি-জি ও ফোর–জি) মোবাইল সেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ফলে এখন মোবাইলে শুধুমাত্র ধীর গতির ইন্টারনেট টু-জি সেবা চালু রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর সকল মোবাইল ফোন অপারেটরকে এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ঠিক দুই দিন আগে এই নির্দেশনা এসেছে। তবে ঠিক কতদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। যদিও সপ্তাহখানেক আগে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হবে। তবে কবে থেকে ইন্টারনেটের গতি কমবে তা তিনি নির্দিষ্ট করে তখন বলেননি।

বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়, থ্রি-জি ও ফোর-জির পরিবর্তে মোবাইল ফোনে দেশজুড়ে শুধু দ্বিতীয় প্রজন্মের তথা টু-জি সেবা চালু থাকবে। তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করতে বলা এ নির্দেশনা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বিটিআরটিসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বেনারের কাছে চিঠির একটি কপি রয়েছে।

নির্দেশনায় বিটিআরসি কারণ না উল্লেখ করলেও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। তবে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের গতি কমলেও অপরিবর্তিত আছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি।

এ ব্যাপারে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বেনারকে বলেন, “আমরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত হাতে পাইনি। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক টু–জি হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “৯৫ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার হয় কমার্শিয়াল কাজে। পাঁচ শতাংশ হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।”

ইমদাদ বলেন, “সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু রাখা। যদি বন্ধ করতেই হয় তাহলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাময়িক বন্ধ করতে পারে, যেটা অপপ্রচারে ব্যবহার হয় বলে সরকার মনে করছে।”

“সফটওয়ার কোম্পানী বা গার্মেন্টস সেক্টর পুরোটাই নির্ভর করে ইন্টারনেটের ওপর। ব্রডব্যান্ড চালু থাকলে বিদেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল থাকবে,” বলেন ইমদাদুল হক।

এদিকে বিটিআরসির নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা বন্ধ করে দিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এর ফলে মোবাইল ফোনে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাচ্ছে না ব্যবহারকারীরা।

তবে ভোট গ্রহণের প্রায় ৫৮ ঘণ্টা আগে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমানোর মধ্য দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

মোবাইল ব্যবহারকারী মোরশেদ হাসিব হাসান বেনারকে বলেন, “মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমানোর যৌক্তিক কারণ নেই। এ যুগে এমন করার মানে হচ্ছে ডিজিটাল নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এমনটা করার দরকার ছিল না।”

“যারা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিকে ভোট দেবে বলে ঠিক করে রেখেছে, তাদের এই থ্রিজি বা ফোরজি বন্ধে কিছু যায় বা আসে না।”

মোরশেদ হাসিব বলেন, “যদি কোনো আইডি থেকে মিথ্যা বা গুজব ছড়ানো হয়, তাহলে সেটি বন্ধ করলেই হতো। এভাবে সারা দেশে ইন্টারনেটের গতি কমানোর মাধ্যমে বিদেশিদের চোখেও বর্তমান সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।”

মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমায় নানা ধরনের নাগরিক সেবা ইতিমধ্যে বন্ধ গেছে। এর মধ্যে মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা উবার, পাঠাও প্রভৃতি বন্ধ হয়ে গেছে।

পাঠাও—এর মোটর সাইকেল চালক আরিফুর রহমান বেনারকে বলেন, “ত্রি-জির গতি কমে যাওয়ায় রাত সাড়ে ১০টার পরে আর অ্যাপস চালু হয়নি। সাধারণত আমরা অনেক রাত পর্যন্ত মোটর সাইকেল চালিয়ে থাকি।”

“এর ফলে আমাদের যেমন আয় বন্ধ হলো তেমনি বিপাকে পড়ল এর আরোহিরাও। কারণ, রাজধানীর মানুষ এসব সেবায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে,” বলছিলেন তিনি।

এর আগে নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে বাংলাদেশ ব্যাংক শুক্রবার বিকেল থেকে মোবাইল ফোনে অর্থ লেনদেন বন্ধের নির্দেশ জারি করে। এরপর রাতে বিটিআরসি দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দেয়।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগে ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে গত ১৩ ডিসেম্বর এক বৈঠকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ইন্টারনেটের গতি কমানোর প্রস্তাবনা দেয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।

ওই বৈঠকে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক সমন্বয়সভায় এই পরামর্শ দেয়া হয়।

এরপর গত ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ভোটের দিন বিকেল ৪টার পর ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।