সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যেই শেষ হলো নির্বাচনী প্রচারণা

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.12.27
ঢাকা
181227_last_campaign_1000.JPG প্রচারণার শেষ দিনে মিরপুরে নৌকার পক্ষে মিছিল বের করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮।
[কামরান রেজা চৌধুরী/বেনারনিউজ]

সহিংসতার আশঙ্কা ও বিরোধী দলের ‘আরেক বিজয়’ অর্জনের আশাবাদের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও আগামী রোববার সাধারণ নির্বাচনে জয়ের আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছে জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে প্রত্যাখ্যান করবে। তারা দেশের চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানাবে।

তবে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে আওয়ামী লীগ।

বৃহস্পতিবার বিকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন সচিবের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে।

অন্যদিকে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলেছে, সারা দেশে ‘চলমান’ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ে নির্বাচন কমিশন যুক্ত।

নির্বাচনে সহিংসতা ঠেকাতে সারা দেশে র‍্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল আটটার পর আর কোনো প্রার্থী ভোট চেয়ে প্রচার করতে পারবেন না। সেই বিধিনিষেধ মাথায় রেখেই বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত প্রচার চালিয়ে যান প্রার্থীরা।

রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদলগুলো নির্বিঘ্নে প্রচার চালিয়েছে। বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা খুব একটা প্রচার করতে পারেননি।

তবে এ ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্টের সর্বোচ্চ নেতা ড. কামাল হোসেন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরে এ দেশের ভোটাররা তাঁদের সুচিন্তিত মতামত ধানের শীষের পক্ষে প্রদান করবেন।”

নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ

নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হওয়ার আগে ঐক্যফ্রন্টের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় এক সভায় মিলিত হন ফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সভা শেষে ড. কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আগামী রোববার ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ দলীয়করণ মুক্ত হবে এবং দেশের মালিক হবে জনগণ।”

তিনি বলেন, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশজুড়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে একধরনের সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এই অভিযানে সরকারের প্রশাসন, আইন-আদালত, পুলিশসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী, সর্বোপরি নির্বাচন কমিশন যুক্ত।”

ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ধানের শীষ দলের নয়, ঐক্যবদ্ধ জনগণের প্রতীক। এই প্রতীকে ভোট দিয়ে দেশকে মুক্ত করুন।”

 

নির্বাচনী সহিংসতায় উদ্বিগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সাথে দেখা করার পর আর্ল রবার্ট মিলার সাংবাদিকদের কাছে সহিংসতার আশঙ্কার কথা জানান।

তিনি বলেন, “গত দুই সপ্তাহের উচ্চমাত্রার নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। সংখ্যালঘু ও নারীসহ সকল দলই সহিংসতার শিকার। তবে মনে হচ্ছে বিরোধী প্রার্থীরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হয়েছে।”

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, “মিডিয়ার স্বাধীনভাবে নির্বাচনের খবরাখবর-খবর সংগ্রহের পরিবেশ থাকা প্রয়োজন; সকল অংশগ্রহণকারীদের জন্য তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকা জরুরি। এবং নির্বাচনে সকল অংশীজন যেন হয়রানি, ভয়ভীতি ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে অংশ নিতে পারে সেই অবস্থা থাকতে হবে।”

তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সহিষ্ণু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়।

জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বান

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতারেস এক বিবৃতিতে বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সহিংসতা, শক্তি প্রয়োগ ও দমন-পীড়ন ছাড়া শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে ভোটের আগে-পরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নারীসহ বাংলাদেশের সকল নাগরিক যাতে নিরাপদে, আত্মবিশ্বাসের সাথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব পালনেও পূর্ণ সহায়তা দেয়া দরকার।

গুতারেস ‘শান্তিপূর্ণ’ ও ‘গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতির দেন।

দেশে ফিরেই এরশাদের নাটক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বোন’ সম্বোধন করে তাঁর প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়ে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এ ছাড়া উন্মুক্ত (আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের প্রার্থী রয়েছে) ১৪৬টি আসন থেকেও জাপার প্রার্থীদের সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়ার তিন ঘণ্টা পর এরশাদের পক্ষে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, উন্মুক্ত আসনগুলো জাপার কোনো প্রার্থী সরে দাঁড়াচ্ছেন না। কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না।

এর আগে সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে বলা হয়, ‘মহাজোটের বৃহত্তর স্বার্থে এবং মহাজোটের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টির প্রতিটি নেতা-কর্মীকে মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে একত্রে কাজ করার অনুরোধ করছি। মহাজোটের স্বার্থে আমি নিজেও ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে সমর্থন করছি।’

মহাজোটের শরিক দল হিসেবে ২৫টি আসন থেকে নির্বাচন করছে জাপা। এ ছাড়া ১৪৭ আসনে দলের প্রার্থী রয়েছে। ঢাকার আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় এরশাদ এখন রংপুর-৩ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে এককভাবে নির্বাচন করছেন।

নির্বাচনী প্রস্তুতি

নির্বাচনি প্রস্তুতি বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কমিশনার শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আগামীকাল সকাল ৮টায় প্রচারণা শেষ হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।