পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা: অ্যাকর্ড এর মেয়াদ বাড়ল

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.05.20
ঢাকা
190520-BD-garment-620.jpg ধামরাইর একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকরা। ১৯ এপ্রিল ২০১৮।
[এপি]

তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ এর কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোকে স্বাগত জানিয়েছে সরকার ও পোশাক শিল্পের মালিকপক্ষ।

গত ৮ মে অ্যাকর্ড ও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র মধ্যকার সমঝোতার ভিত্তিতে রোববার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে বাংলাদেশে অ্যাকর্ড এর মেয়াদ আরো ২৮১ কর্মদিবস বৃদ্ধি করে দেয়।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বেনারকে বলেন, “রোববার আদালত তার রায়ে অ্যাকর্ডকে ৮ মে থেকে আরো ২৮১ দিন বাংলাদেশে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “এর আগে বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের বাড়তি অবস্থানের ব্যাপারে অ্যাকর্ড এবং বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌছানোর কথা বলেছিল আদালত।”

অ্যাকর্ড চলে যাওয়ার পর শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ দেখভাল করার জন্য একটি কাউন্সিল গঠনের ব্যাপারে দুপক্ষ মতৈক্যে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন “কাজেই আদালত অ্যাকর্ডকে বাড়তি সময় দিয়েছে। সরকার এই রায়কে সাধুবাদ জানায়।”

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে তাঁর সংগঠনও স্বাগত জানায় বলে বেনারকে জানান তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।

তিনি বলেন, “অনিরাপদ কর্মপরিবেশের অভিযোগ আর নেই। কারণ শতকরা ৯২ ভাগ কারখানা ইতোমধ্যে নিরাপদ ও উন্নত করা হয়েছে।”

বিজিএমইএ প্রতিনিধি, ব্র্যান্ড প্রতিনিধি এবং কর্মীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় তৈরি পোশাক টেকসইকরণ পরিষদ নামক একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে জানিয়ে রুবানা হক বলেন, “অ্যাকর্ড বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার পর অ্যাকর্ডের আদলে তার সম্পদ কাজে লাগিয়ে কাজ করবে এই পরিষদ।”

তিনি বলেন, “কাঠামো, অগ্নি এবং বৈদ্যুতিক বিষয়গুলো ছাড়াও শ্রম এবং পরিবেশ বিষয়ক সেল গঠন করবে প্রস্তাবিত কাউন্সিল। কারণ বিজিএমইএ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে শ্রম এবং পরিবেশ আগামী দিনে সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।”

এদিকে অ্যাকর্ডের বাড়াতি মেয়াদ শেষ হবার পর প্রস্তাবিত ‘আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি) বা জাতীয় তৈরি পোশাক টেকসইকরণ পরিষদ এর কাছে অ্যাকর্ডের যাবতীয় কর্মকাণ্ড হস্তান্তর করার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে বলে রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় অ্যাকর্ড।

এতে বলা হয়, অ্যাকর্ডের দায়দায়িত্ব, মানবসম্পদ ও সম্পত্তি সব কিছুই আরএসসি-তে আত্মীকৃত হবে।

“আমরা মামলার রায়ে খুশি কারণ এই রায়ের মাধ্যমে আমরাই নিজেদের কারখানাগুলো মনিটর করব,” বলেন রুবানা হক।

তিনি বলেন, এই ‍চুক্তির মাধ্যমে কর্মপরিবেশের একটি একটি মান নির্ধারিত হয়েছে। এর পরের ধাপ হলো আমাদের নিজেদেরকে মনিটর করা।”

বাংলাদেশে অ্যাকর্ড

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির ২০ বিলিয়ন ডলার আসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭ দেশ থেকে।

এই খাতে বর্তমানে নিয়োজিত রয়েছে ৪০ লাখ শ্রমিক।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে সাড়ে এগারো’শ মানুষের প্রাণহানিতে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

বাংলাদেশ থেকে ‘রক্তাক্ত পোশাক’ না কিনতে ইউরোপ ও আমেরিকায় সমাবেশ চলতে থাকে। সরকার ও ভোক্তাদের চাপে পড়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ক্রয় করা কোম্পানিগুলো।

এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা নিরাপদ করতে ইউরোপীয় ক্রেতারা অ্যাকর্ড এবং উত্তর আমেরিকার ক্রেতারা অ্যালায়েন্স নামক জোট গঠন করে।

কারখানা পরিদর্শন করে সেগুলো কীভাবে নিরাপদ করা যায় সেব্যাপারে কারিগরি সিদ্ধান্ত দেয়া ছাড়াও কোন কোন কারখানা বন্ধ করতে হবে সে বিষয়ে সুপারিশের কর্তৃত্ব দেয়া হয় অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডকে।

তাদের সুপারিশে কয়েক’শ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়।

ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে হলে, কারখানা নিরাপদ কি না সেব্যাপারে সনদ নিতে হয় অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের কাছ থেকে।

পাঁচ বছর কাজ করে বাংলাদেশের তৈরি কারখানাগুলোকে ‘নিরাপদ’ আখ্যা দিয়ে গতবছর বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে অ্যালায়েন্স। তবে অ্যাকর্ড বলছে তারা আরো থাকতে চায়।

অ্যাকর্ডের একটি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে স্মার্ট জিন্স নামক একটি কোম্পানি।

স্মার্ট জিন্স-এর অভিযোগ ছিল অ্যাকর্ড চুক্তির শর্ত ভেঙেছে। চুক্তি অনুযায়ী কোনো কারখানাকে অ্যালায়েন্স সনদ দিলে অ্যাকর্ড আর সেখানে পরিদর্শনে যাবার কথা নয়।

“কিন্তু অ্যালায়েন্সের ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’ সনদ থাকার পরও অ্যাকর্ড স্মার্ট জিন্স কারখানাকে ‘অনিরাপদ’ বলে মতামত দেয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে স্মার্ট জিন্সের সাথে চুক্তি বাতিল করে ক্রেতারা,” বেনারকে বলেন স্মার্ট জিন্স এর আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ।

স্মার্ট জিন্স এর মামলার প্রেক্ষিতে গতবছর মে মাসে দেয়া এক রায়ে ৩০ নভেম্বর ২০১৮ তারিখের পর অ্যাকর্ডকে বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে বলে হাই কোর্ট।

তবে ২৯ নভেম্বর অ্যাকর্ড এর আপিলের প্রেক্ষিতে প্রথমে এক মাস এবং পরে শুনানির তারিখ অনুযায়ী সংগঠনটি বাংলাদেশে কাজ চালিয়ে যেতে পারবে বলে সুপ্রিম কোর্টের রায় পায়।

সর্বশেষ শুনানির তারিখ ছিল ১৯ মে, যেখানে অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএর সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে সংগঠনটির কার্যক্রমের মেয়াদ আরো ২৮১ দিন বাড়ালো আদালত।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।