পোশাক কারখানা তদারকি করবে নতুন সংগঠন ‘আরএসসি’

পোশাক শিল্পে নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে নতুন প্ল্যাটফর্ম আরএমজিসাসটেইনিবিলিটি কাউন্সিলের (আরএসসি) গঠনওনীতিমালাআগামী২৫নভেম্বরেরমধ্যেসম্পন্নহবেবলেবেনারকেজানিয়েছেনবিজিএমইএসভাপতিড. রুবানাহক।

টানা দুই দিন আলাপ-আলোচনাশেষেগতমঙ্গলবারআরএসসি গঠনের বিষয়ে সমঝোতায়পৌঁছানকারখানামালিক, বিদেশিক্রেতাওশ্রমিকনেতাদেরত্রিপক্ষীয়প্রতিনিধিরা।পরেযৌথবিবৃতিতেএইসিদ্ধান্তেরকথাজানানোহয়।

কারখানাপরিদর্শনওসংস্কারেইউরোপীয়২২৮টিক্রেতারসমন্বয়েগঠিতঅ্যাকর্ডবাংলাদেশ ছাড়ার আগে এই জোটের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। রুবানা হক জানান, পোশাক কারখানা সংস্কারে অ্যাকর্ডের বাকি কাজ এগিয়ে নেবে আরএসসি।

বিষয়টিকে ইতিবাচক বলছেন তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা। নতুন এই তদারকি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তৈরি পোশাক কারখানা সংস্কার নিয়ে মালিকপক্ষ ও অ্যাকর্ডের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ ঘুচবে বলে মনে করছেন তাঁরা। নতুন জোটে নিজেদের প্রতিনিধি থাকায় স্বস্তিবোধ করছেন শ্রমিক নেতারাও।

বাংলাদেশইনস্টিটিউটঅবলেবারস্টাডিজের(বিলস)নির্বাহী পরিচালক জাফরুল হাসান বেনারকে বলেন, "অ্যালায়েন্স চলে গেছে। অ্যাকর্ড একটা জায়গায় দায়িত্ব হ্যান্ডওভার করে চলে যাবে। এমন প্রেক্ষাপটে সবপক্ষ মিলেই আরএসসি গঠন করা ইতিবাচক।"

সম্মিলিতগার্মেন্টসশ্রমিকফেডারেশনেরসভাপতিনাজমাআক্তারবেনারকেবলেন, "আরএসসিনিয়েআমরা পজিটিভ। যেহেতু এটার উদ্দেশ্য কারখানার নিরাপত্তার জন্য কাজ করা; পোশাক খাতের উন্নয়ন করা।"

"আমরা অর্থ্যাৎ ট্রেড ইউনিয়ন আরএসসির একটি অংশ। এখনো এটি গঠন পর্যায়ে আছে। তবে কাজ করার সময় যদি দেখি, যে উদ্দেশ্যে গঠন হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তখন নিশ্চয় বিকল্প ভাবা হবে," বলেন তিনি।

শ্রমিক অধিকার উপেক্ষিত

বিলসের নির্বাহী পরিচালক জাফরুল হাসান বলছিলেন, "অ্যাকর্ডের অনেক কার্যকমে মালিকপক্ষ বিরক্ত ছিল। তারা মনে করত পোশাক খাতে বাইরের শক্তি হস্তক্ষেপ করছে।"

"তবে বর্তমানে পোশাক কারখানাগুলোতে যে পরিবেশগত উন্নয়ন হয়েছে তা অ্যাকর্ডের এই কার্যক্রমের কারণেই। অ্যাকর্ডের কারণেই এত অল্প সময়ে এই উন্নতি হয়েছে," বলেন তিনি।

তবে সেই তুলনায় শ্রমিকদের অধিকারের দিক উন্নতি হয়নি বলে মনে করেন বিলসের নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, "শ্রমিকদের অধিকারের দিকটা এখনো উপেক্ষিত। উচ্চ পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নের সম্পৃক্ততা আছে। কিন্তু নিচের দিক সেইভাবে নেই। ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা থাকলেওতারাপোশাক শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারছে না।"

"পোশাক খাতে কর্মচারী ছাঁটাইসহ এখনো নানা সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারে ভালো কোনো উদ্যোগ নেই," জাফরুল হাসান বলেন।

বিলসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, "অ্যাকর্ডেরটার্মসঅ্যান্ড রেফারেন্সে এই বিষয়টি যোগ করা হয়নি। তবে নতুন প্ল্যাটফর্ম আরএসসিতে অবশ্যই এই জিনিসটা যোগ করতে হবে। পোশাক খাতের পরিবেশগত উন্নয়নের পাশাপাশি এখন শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।"

অ্যাকর্ডের অসমাপ্ত কাজ করবে আরএসসি

রুবানা হক জানান, আরএসসিগঠনেরপরেঅ্যাকর্ডেরঅসমাপ্তকাজগুলোতারাইএগিয়েনিয়েযাবে।

মঙ্গলবারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে তিনি জানান, আগামী২৫নভেম্বরেরমধ্যেআরএসসিআনুষ্ঠানিকযাত্রাশুরুকরবে।২০২০সালেরজানুয়ারিথেকেদেশেরপোশাককারখানাগুলোতেপরিদর্শন, সংস্কারপরামর্শওঅন্যান্যকাজশুরুকরবেআরএসসি।

তিন পক্ষের যৌথ ইশতেহারে বলা হয়, বৈঠকে অংশ নেয়া পক্ষগুলো আগামী ২০২০ সালের মে মাসের মধ্যে অ্যাকর্ড এবং এর কার্যাবলির একটি সাবলীল হস্তান্তর নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।

এতে বলা হয়, আরএসসি প্রথমবারের মতো নেওয়া একটি জাতীয় উদ্যোগ, যা দেশীয় শিল্প, ব্রান্ড এবং ট্রেড ইউনিয়নকে একত্রকরে একটি সমন্বিত কমপ্লায়েন্সের মানদণ্ড নিশ্চিত করবে। পর্যায়ক্রমে শিল্পসম্পর্ক, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগতবিষয়গুলো নিজেদের কার্যপরিধির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করবে আরএসসি।

২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং পরের বছর সাভারের রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে অ্যাকর্ডঅন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটিইন বাংলাদেশ এবং আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স গঠন হয়।

২০১৮ সালের ৩১ মে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের কার্যকারিতার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ ছাড়লেও অ্যাকর্ড তিন বছর সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে নাখোশ হয় বাংলাদেশের কারখানা মালিকরা। বিষয়টি আদালত পর্যন্তগড়ায়।

পরে গত ৮ মে আরও ২৮১ কর্মদিবস কাজ করতে অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএ'র মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। গত ১৯ মে ওই সমঝোতা চুক্তির অনুসারে উভয় পক্ষকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

কীভাবে চলবে আরএসসি

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকবেনারকেবলেন, "আমরা ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় উপনীত হয়েছি। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন আইএলও আমাদের এ সমঝোতায় বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছে। ভয়-দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করেছি আমরা।"

তিনি বলেন, 'আরএসসি আমরা সবাই মিলে চালাব। আরএসসি দুভাবে কাজ করতে পারে। একটি হলো ফাউন্ডেশন গঠনের মাধ্যমে এবং অন্যটি কোম্পানির মাধ্যমে। কোম্পানি হলে এটা অলাভজনক হবে"

"আমরা সরকারের সংশ্লিষ্টপ্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করব। সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অনুদানপুষ্ট হয়ে কাজ করবে আরএসসি," বলেন রুবানা হক।

বিজিএমইএ নেতারা জানান, পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের প্রতিনিধি, দেশ-বিদেশি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা থাকবেন আরএসসি'র তদারকিরদায়িত্বে।শুরুতে অ্যাকর্ড ও অ্যালয়েন্সভুক্ত কারখানাগুলোর তদারকি দিয়ে কাজ শুরু করবে আরএসসি। তবে ধীরে ধীরে বাকিগুলোও এর আওতায় আসবে।

প্রসঙ্গত, প্রায় চার হাজারের মতো কারখানায় চার লাখের বেশি শ্রমিক নিয়ে বাংলাদেশ চীনের পরে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ১৫ ভাগের বেশি যুক্ত হয় এই খাত থেকে।