বাগদাদীর মৃত্যু বিশ্বের জন্য সুসংবাদ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আরি ফেরদাউস, জাম ইউসা, কামরান রেজা চৌধুরী, জিওফ্রি মাইতেম, মার্কনাভালেস
2019.10.28
জার্কাতা, সাবাহ, মালয়েশিয়া, ঢাকা, ফিলিপিন
বাগদাদীর মৃত্যু বিশ্বের জন্য সুসংবাদ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরিয়ায় ইদলিব প্রদেশে মার্কিন সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত আল বাগদাদী। স্থানীয় লোকজন ধ্বংসস্তুপের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। অক্টোবর ২৭, ২০১৯।
ছবি : এপি।

আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদীর মৃত্যুতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বেনারের সাথে একান্ত আলাপে সোমবার মন্ত্রী বলেন, “ইসলাম শান্তি ও সৌহার্দ্যের ধর্ম, যা আইএস দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা, হত্যা এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে কখনোই অনুমোদন দেয় না। সুতরাং এর প্রধান বাগদাদীকে হত্যার খবর বিশ্বের জন্য সুসংবাদ।”

বাগদাদী মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন বলে রোববার  আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অভিযানের একপর্যায়ে আত্মঘাতী হন বাগদাদী।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “আমরা আশা করি যে, এই ধরনের কুখ্যাত গোষ্ঠীর পুনরুত্থান বন্ধে সারাবিশ্ব একত্রিত হয়ে কাজ করবে।” আইএস এখন গণহত্যা, গণহত্যা, ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য সমস্ত কুখ্যাত কর্মকাণ্ডের সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে বলেও উল্লেখ করেন বাংলাদেশের এই মন্ত্রী।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বেনারকে বলেন,  “ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর আল-কায়েদা যেভাবে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, বাগদাদীর মৃত্যুও আইএসকে একইভাবে দুর্বল করে দেবে।”

“আমাদের দেশে যারা আইএস-এর সমর্থক বা অনুসারী আছে, তাদের উপরও এর প্রভাব পড়বে,” যোগ করেন ইনস্টিটিউট অব কনফিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসের (আইসিএলডিএস) এই নির্বাহী পরিচালক।

চার বছর ধরে বিভিন্ন জঙ্গি হামলার ঘটনায় আইএস পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হলেও সরকার বরাবরই বলে আসছে বাংলাদেশে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ চলতি বছরও ঢাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার পরেও একইভাবে দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি।

এর আগে ২০১৫ সালে ইতালীয় নাগরিক হত্যার পর প্রথমবারের মতো আইএস এর দায় স্বীকারের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে গুলশানের হোলি আর্টিজান হামলার পরও তারা দায় স্বীকার করে।

আইএস মুখপত্র দাবিক ম্যাগাজিনেও বাংলাদেশে তাদের তৎপরতার কথা জানান দেওয়া হয়েছে বারবার। পত্রিকাটির বাংলা সংস্করণও প্রকাশিত হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। বাংলা ভাষায়ও অডিও ও ভিডিও বার্তা প্রকাশের ঘটনাও ঘটেছে।

হোলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে অভিযুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরীও সিরিয়া-ইরাকে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া আইএসের জন্য সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আইএস-এর মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তবুও যে শঙ্কা বিশ্লেষকদের

মেজর জেনারেল (অব.) রশীদ বলেন, “জঙ্গিবাদ শুধু মতাদর্শিকভাবে নয়, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ধরেও বিভিন্ন দিকে ধাবিত হয়। এই বিষয়টি মাথায় না রেখে শুধু মতাদর্শের দিকে নজর দিকে সঠিক বিশ্লেষণে পৌঁছানো যাবে না।”

“ইরাক-সিরিয়ায় যেভাবে তাদের উত্থান হয়েছিল, পরবর্তীতে আবার কোনও এলাকায় তারা সেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, সেটিই ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন তিনি।

“সেটি যদি আমাদের অঞ্চলে না হয়, তাহলে আমাদের শান্তি বজায় থাকবে। কিন্তু তারা যদি এখানকার এমন কোনো জায়গা নির্বাচন করে থাকে, যেখানে তারা প্রভাব বিস্তার করবে, তাহলে সেটা ভয়াবহ হবে,” যোগ করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।

আরেক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “বাগদাদীর হত্যাকাণ্ড বিশ্বের জন্য সুসংবাদ হলেও আইএস-এর আদর্শ কিন্তু ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে।

“ইউরোপে তাদের স্লিপার সেলও রয়েছে। যে কারণে বাগদাদির হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশে আমরা স্লিপার সেলগুলোর দ্বারা সহিংস আক্রমণও দেখতে পারি,” তিনি বলেন।

২০১৪ সালে ইরাকের মসুলে আল নুরি মসজিদের সামনে এক ভিডিওতে বাগদাদীকে প্রথম দেখা যায়। এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে একযোগে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। তখন থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাগদাদীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। ২০১৭ সালে তা আড়াই কোটি ডলার করা হয়।

কি ভাবছে এশিয়ার অন্যান্য মুসলিম দেশ

মুসলিম অধ্যুষিত আরেকটি দেশ ইন্দোনেশিয়া। দেশটির পুলিশের মুখপাত্র আসিপ আদি সুপত্র বেনার নিউজকে বলেন, সকল জঙ্গি নেটওয়ার্ককে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখে 'ডেনসাস ৮৮'। উল্লেখ্য ‘ডেনডাস ৮৮’ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গিবাদ বিরোধী এলিট ফোর্স। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনার আলোকে আমরা মনে করি, আলবাগদাদীর সমর্থকদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, তারা যেকোনো সময় প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালাতে পারে।

দুই বছর আগে ফিলিপিনে আইএস মদতপুষ্ট জঙ্গিরা দক্ষিণের শহর মারওয়ারিতে বিধ্বংসী হামলা চালায়। আল বাগদাদীর মৃত্যু প্রসঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা সচিব ডেলফিন লোরেঞ্জা বলেন, আইএসের নেতৃত্বের পদটি নতুন কেউ নেবে। হয়তো সে ততটা বিখ্যাত বা সুপরিচিত কেউ নয়।

আল বাগদাদির মৃত্যুর ঘোষণা প্রচারিত হবার পর দেশটি বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

খ্যাতি সম্পন্ন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ডন পাঠান বেনার নিউজকে বলেন, বাগদাদির মৃত্যুতে সাউথইস্ট এশিয়ার দেশগুলোতে কোনো প্রভাব নাও পরতে পারে। তিনি বলেন, আবু সায়েফ কিংবা মাউতির মতো গ্রুপগুলো আইএসের সাথে তাদের সংশ্লিস্টতা ঘোষণা করতে পারে।

মুসলিম প্রধান আরেকটি দেশ মালয়েশিয়া। দেশটির কাউন্টার টেরোরিজম প্রধান আইয়ুব খান বেনার নিউজকে বলেন, তার দেশ মূলত উদ্বিগ্ন ''লোন উলফ'' আক্রমণ নিয়ে, যারা মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের আদর্শকে মোকাবেল না করা পর্যন্ত জঙ্গিবাদের সমস্যাটিকে টিকে থাকবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।