খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

জেসমিন পাপড়ি
2019.10.28
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি  হয়নি: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দেয়ার সময় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। ঢাকা, এপ্রিল ৫, ২০১৫।
ছবি: মেঘ মনির

পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন উল্লেখ করে তাঁকে বিদেশে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হলেও এই দাবীকে নাকচ করে দিয়েছেন খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড।

তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো অবনতি হয়নি বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সোমবার দুপুরে সম্মেলনে বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক জানান তাদের চিকিৎসায় খালেদা জিয়া সন্তুষ্ট। খালেদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দাবি, বিএসএমএমইউ পরিচালক মিথ্যা বলেছেন। সরকারের শেখানো কথা বলেছেন তিনি।

তিনি বেনারকে বলেন, “সুচিকিৎসা না দিয়ে কারাবন্দী রেখে খালেদা জিয়াকে খালেদাকে তিলে তিলে মেরে ফেলার আয়োজন চলছে।”

তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

খালেদার স্বাস্থ্য সম্পর্কে দুই পক্ষের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা। মানবিক বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার জামিন প্রয়োজন মনে মত দিয়েছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “আমি খালেদা জিয়ার রাজনীতির তীব্র সমালোচক। কিন্তু আমার মনে হয়, তিনি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ এবং অতীতে কনভিক্টেড ব্যক্তির জামিন দিয়েছে আদালত। বয়স এবং শারিরীক অবস্থা বিবেচনায় তাঁকেও জামিন না দেওয়ার কোনো কারণ দেখি না।”

“আমি আশা করব আদালত তাঁর বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করবেন। বিএসএমএমইউ’র চিকি ৎসকেরা বলেছেন, জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাই এই ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো,” মনে করেন তিনি।

“আমরা অতীতে দেখেছি দুর্ভাগ্যবশত আদালত প্রভাবিত হয়েছে। আশা করব এ ক্ষেত্রে প্রভাবিত না হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে,” বলেন বদিউল আলম মজুমদার।

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৭৪ বছর বয়সী খালেদা আর্থরাইটিসসহ বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। গত ১ এপ্রিল থেকে তিনি বিএসএমএমইউ-তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত শুক্রবার খালেদার বোন সেলিমা ইসলাম হাসপাতালে তাঁর সাথে দেখা করে এসে সাংবাদিকদের বলেন, জামিন পেলে বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় রোববার ফেনীতে এক অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপির উদ্বিগ্নতার চেয়ে দুরভিসন্ধি দেখছেন তিনি।

অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলছেন, জামিন দেওয়া না দেওয়া আদালতের বিষয়; এখানে সরকারের কিছুই করার নেই।

খালেদার দেখা পান না চিকিসকেরা

শুক্রবার সেলিমা ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, দু সপ্তাহ ধরে কোনো চিকিৎসক খালেদাকে দেখতে যাননি।

তবে বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক অভিযোগ করেন, চিকিৎসকেরা সব সময় খালেদা জিয়াকে দেখার সুযোগ পান না।

এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ পরিচালক বলেন, “একটি বিষয় আগে কখনোই বলতে চাইনি। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদের প্রেক্ষিতে বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার। চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়াকে সব সময় দেখার সুযোগ পান না। ওনার কাছ থেকে আগে অনুমতি নিতে হয়।”

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া বেশির ভাগ সময় বেলা দেড়টা বা তারপরে সময় দিয়ে থাকলেও বাস্তবে নির্ধারিত সময়ে দেখা পাওয়া যায় না। একবার বোর্ডের চিকিৎসকেরা বেলা সাড়ে চারটা পর্যন্ত বসে থেকেও তাঁকে দেখার সুযোগ পাননি।”

“তাঁর বাত রোগের আধুনিক চিকিৎসার জন্য এক ধরনের ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এখনো সে ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সম্মতি পাওয়া যায়নি বলে আগের পদ্ধতিতেই চিকিৎসা চলছে,” উল্লেখ করেন বিএসএমএমইউ পরিচালক।

মাহবুবুল হক বলেন, “খালেদা জিয়া ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন, বাতজ্বর, দাঁতসহ কিছু সমস্যা নিয়েই ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তি হওয়ার পরপরই তাঁর চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্থায়ী মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।”

নিয়মিত বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা তদারকি করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর চিকিৎসা ভালো হচ্ছে। তাঁর অবস্থান কোনো অবনতি ঘটেনি। গত সাত মাসে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে স্থিতিশীল রয়েছে।”

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকার বলেন, “গত কয়েক দিনে পর পর খালেদা জিয়াকে দেখা হয়েছে। তিনি সব সময় হাসিখুশি থাকেন। তাঁর ডায়বেটিস, রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

জিলান মিয়া আরও বলেন, “চিকিৎসায় ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) নিজে সন্তুষ্ট। ওনার প্রিয় দুজন চিকিৎসককেও তাঁকে দেখতে যাওয়ার সময় রাখা হয়। তিনি খুশি হন।”

বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা চিকিৎসা করতে ব্যর্থ হচ্ছি বলে মনে হয় না। আর ম্যাডামও বিদেশে যাওয়ার দাবি করেননি।”

বেশ কিছুদিন ধরে খালেদা জিয়ার জীবনহানি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিএনপি নেতারা। এ প্রসঙ্গে জিলান মিয়া সরকার বলেন, “আমরা এমন কোনো আশঙ্কা করছি না। তবে জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তাঁকে নিয়ম মেনে দেখা হচ্ছে।”

চলার শক্তি হারিয়েছেন খালেদা

বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “আমাদের দলের সংসদ সদস্য এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তাঁকে স্বচক্ষে দেখে এসেছেন। অথচ সরকার তাঁর অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।”

রিজভী বলেন, “উন্নত চিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়া চলার শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, নিজের খাবার খেতে পারেন না, এক পা হাঁটতেও পারেন না।”

“আগে এক হাত তুলতে পারতেন না, এখন দুই হাতই তুলতে পারেন না। স্বাস্থ্য অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। হাত-পা অবশ হয়ে গেছে। কথা বলতেও কষ্ট হয়,” বলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।