সর্বোচ্চ আদালতেও খালেদা জিয়ার জামিন মেলেনি

দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও জামিন মেলেনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার।

বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারকের বেঞ্চ সর্বসম্মত রায়ে তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করেদেয়।

তবেপর্যবেক্ষণে আদালতখালেদাজিয়াসম্মতি দিলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশদিয়েছে।

রাষ্ট্রের প্রধান কৌঁসুলি (অ্যাটর্নি জেনারেল) মাহবুবে আলম বেনারকে বলেন, "আদালত খালেদা জিয়ার তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট যাচাই বাছাই শেষে এবং দুই পক্ষের আইনজীবীর কথা শোনার পরেই এ আদেশ দেন।

এদিকে সর্বোচ্চ আদালতও খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নাকচ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে আগামী রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সারা দেশে বিক্ষোভের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটি বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল ইসলাম বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যে রায় হয়েছে তাতে আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এ রায়ের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে স্থায়ীভাবে একটি সংঘাতময় পরিবেশের সৃষ্টি করা হলো। স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা হলো।"

"অন্তত সর্বোচ্চবিচারব্যবস্থা, সবার শেষ আশা-ভরসার স্থল, সেখান থেকে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন আশা করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি সেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন," বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। ওই রায়ের পর হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চান খালেদা। গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টে তাঁর জামিন আবেদন খারিজ হয়। এরপরেই বিষয়টি আপিল বিভাগে নিয়ে আসেন খালেদার আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি করেন জয়নুল আবেদীন ও খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ আরো কয়েকজন আইনজীবী। জামিনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে খুরশীদ আলম খান শুনানিতে অংশ নেন।

খালেদার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিতর্ক

কারাগারে খালেদাজিয়ার শাররিক অবস্থার অবনতি হয়েছে এমন যুক্তি দেখিয়ে মানবিক বিবেচনায় জামিন চাওয়া হয়। সর্বোচ্চ আদালত সে আবেদন খারিজ করায় তাঁর জামিনের জন্য আর কোনো আইনি প্রক্রিয়া নেই। ফলে আপাতত মুক্তি মিলছে না খালেদা জিয়ার।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বেনারকে বলেন, "খালেদা জিয়া প্রায় পঙ্গু অবস্থায় চলে গেছেন। হয়তো ছয় মাস পর তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হবে। এমন পরস্থিতিতে মানবিক কারণে তাঁর জামিন চেয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছি আমরা।"

"সাত বছরের সাজায় জামিন না দেওয়া নজিরবিহীন উল্লেখ করে বলেন, এই রায় সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি কলঙ্কজনক ঘটনা হয়ে থাকবে। আদালতের প্রতি মানুষ আস্থাহীন হয়ে পড়বে।"

তবেঅ্যাটর্নিজেনারেলমাহবুবেআলমদাবিকরেছেনখালেদার শারীরিকঅবস্থারঅবনতিহয়নি।তাঁর অবস্থাস্থিতিশীলরয়েছে।

মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, "আগে দাখিল মেডিকেল রিপোর্টগুলো এবং সর্বশেষ দাখিল করা (বুধবার) রিপোর্ট আদালতে পড়ে শোনানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিশেষ কোনো অবনতি হয়নি। যে রকম ছিল, সে রকই আছে।"

তিনি বলেন, "এর আগে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় তিনি ৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। তাঁকে মোট ১৭ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এ কারণে এটাকে 'শর্ট সেনটেন্স' বলার কোনো সুযোগ নেই। তিনি জামিন পেতে পারেন না।"

উল্লেখ্য, কারাবন্দি খালেদা জিয়া গত এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উন্নত চিকিৎসায় রাজি নন খালেদা

অ্যাটর্নি জেনারেলের দাবি, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তবে তাঁর অনুমতি না মেলার কারণে তাঁকে উন্নত চিকিৎসা দেয়ওয়া যাচ্ছে না।

সর্বশেষ মেডিকেল রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯০ ও ২০০২ সালেখালেদা জিয়ার দুই পায়ের হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।

"এখন এটা আর ভালো হওয়ার পর্যায়ে নেই। এতদিন পরে স্বাভাবিকভাবে রিপ্লেসমেন্টের কার্যকারিতা থাকে না। তাই উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন," বলেন মাহবুবে আলম।

"বিশেষ কিছু ইনজেকশন রয়েছে, যা তাঁর অনুমতি ছাড়া দেয়া যাবে না। কিন্তু উনি (খালেদা জিয়া) অনুমতি দিচ্ছেন না," অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন।

যা আছে মেডিকেল রিপোর্টে

বিএসএমএমইউ- এর বোর্ডের যে রিপোর্টটি সর্বশেষ আদালতে জমা দেওয়া হয় তার একটি কপি বেনার প্রতিবেদকের হাতে আছে।

কিছুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা ও রিউমেটয়েড আরথ্রাইটিস রোগের কথাবলেছিলে। এর সাথে এবার নতুন একটি সমস্যার কথা বলা হচ্ছে।

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, খালেদার ডান পায়ের চামড়ার নিচে ছোট একটি চাকা বা পিন্ড দেখা যাচ্ছে। এর ধরন জানতে এফএনএসি টেস্ট করা যেতে পারে।

রিপোর্টে অনুযায়ী, রিউমেটয়েড আরথ্রাইটিসে ভোগার ফলে খালেদা জিয়ার শরীরের বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা ছড়াচ্ছে। তাঁর দুটো হাঁটুই আগে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। আরথ্রাইটিসের জন্য তাঁর হাঁড়ের কোনো কোনো জায়গা বেঁকে যাচ্ছে। তিনি প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েছেন এবং কারও সহযোগিতা ছাড়া হাঁটাচলা করতে পারছেন না।

চিকিৎসকরা জানান, এখন পর্যন্ত তাঁকে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেটা যথেষ্ট উন্নতমানের নয়। তাঁর উন্নতমানের থেরাপি প্রয়োজন। এই থেরাপির ফলে কীহতে পারে, খরচ কেমন, সীমাবদ্ধতা ও ক্ষতির দিকগুলো সম্পর্কে তাঁকে ভালো ভাবে জানানো হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিএসএমএমইউ এখনই তাঁকে উন্নতমানের থেরাপি দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোগীর সম্মতি মেলেনি। বোর্ড এ রোগের অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে স্বাগত জানাবে বলে জানানো হয়।

আরও চার ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে তাঁকে উন্নতমানের থেরাপি দেওয়ার আগে তিনটি ভ্যাকসিন দিতে হবে। এই মুহূর্তে তাঁর উচ্চরক্তচাপ ও অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ডায়াবেটিস আরও নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন বলেও জানানো হয়।

কড়া নিরাপত্তা, আটক

গত ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার মামলায় এজলাসে দুপক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোলের পরে বৃহস্পতিবার রায়কেঘিরে সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়। আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে পরিচয়পত্র চেক করা হয়। এসময় একজন আইনজীবীকে আটকও করে পুলিশ।

এবিষয়েপুলিশেররমনাজোনেরউপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুররহমানসাংবাদিকদেরবলেন, "আমাদেরকাছেখবরছিল, ভুয়াকার্ডবানিয়েআদালতেপ্রবেশেরচেষ্টাহতেপারে।"

"ফয়জুল্লাহনামেওইআইনজীবীরকাছেআমরাপরিচয়পত্রদেখতেচেয়েছিলাম।তিনিরাজিহননি।তাইওনাকেপুলিশেরহেফাজতেনেওয়াহয়।তবেপরেতাঁকেছেড়েদেওয়াহয়," বলেনতিনি।

এদিকেখালেদারজামিননাকচকরারপরেবিক্ষোভকরেনবিএনপিপন্থীআইনজীবীরা।

এসময়সুপ্রিমকোর্টেরমাজারগেটেরউল্টোদিকেরসড়কেবিএনপিরকিছুকর্মীস্লোগানদেন।তখনপুলিশতাঁদেরধাওয়াকরে।সেখানথেকেদুজনকেআটককরেপুলিশেরগোয়েন্দাশাখা।

খালেদাজিয়ারজামিননাকচেরপরেরাজধানীরবিভিন্নস্থানেবিক্ষোভমিছিলকরেবিএনপিওএরবিভিন্নঅংগসংগঠন।

বাংলামোটরেবিএনপি, মৌচাকমোড়েস্বেচ্ছাসেবকদলএবংকেন্দ্রীয়শহীদমিনারএলাকাথেকেছাত্রদলমিছিলবেরকরে।এসবমিছিলেধাওয়াদিয়েপুলিশস্বেচ্ছাসেবকদলঢাকামহানগরউত্তরেরনেতাজামালহোসেনকেআটককরে।