সংক্রামক ব্যাধির কথা গোপন রাখলে শাস্তি: সংসদে আইন

জেসমিন পাপড়ি
2018.10.25
ঢাকা
181025_contagious_disease_1000.jpg ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার কলেরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন মায়েরা। বাংলাদেশ সরকার চিহ্নিত ২৩টি সংক্রামক রোগের মধ্যে ডায়রিয়া অন্যতম। ২ এপ্রিল ২০১২।
এএফপি

সংক্রামক ব্যাধির কথা গোপন রাখার পর এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে রোগের বিস্তার ঘটলে শাস্তির বিধান রেখে সংসদে ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) বিল-২০১৮’ পাস হয়েছে।

বৃহস্পতিবার পাস হওয়া বিল অনুযায়ী, এ সংক্রান্ত তথ্য গোপন রাখলে ওই ব্যক্তি ছয় মাসের কারাদণ্ডে বা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম পাসের জন্য বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে এর ওপর দেওয়া বিরোধী দলের সদস্যদের সংশোধনী, জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা ঘটতে সহায়তা করেন বা স্থানের সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি গোপন করেন, তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।

প্রস্তাবিত এ আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সংক্রামক রোগ দমনে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন এমন একটি আইন অত্যন্ত জরুরি ছিল বলে মনে করছেন চিকিৎসকরাও।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম (শামীম) বেনারকে বলেন, “সরকার যেখানে চিকিৎসা নিশ্চিত করছে, সেখানে এই ধরনের একটি ইস্যু যদি কেউ গোপন করে, এটা মারাত্মক অন্যায়।”

“দেশের জন্য এটা মারাত্মক বার্ডেন। সে কেবল নিজের ক্ষতিই করছে না, পরিবার, সমাজ এবং জাতিকে সে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ কারণেই এ আইন করা দরকার ছিল,” বলেন তিনি।

যুগোপযোগী আইনটি পাস এবং যথাযথ প্রয়োগ হলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে বলে মনে করছেন শিশু চিকিৎসক ডা. শামসুর রহমান।

তিনি বেনারকে বলেন, “মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হলেও আইনের প্রয়োগ দরকার। এমন একটি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ।”

সংক্রামক রোগ ২৩টি

২৩টি সংক্রামক রোগের নাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এগুলো হলো- ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ফাইলেরিয়াসিস, ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এভিয়ান ফ্লু, নিপাহ, অ্যানথ্রাক্স, মারস-কভ, জলাতংক, জাপানিস এনকেফালাইটিস, যক্ষা, ডায়রিয়া, শ্বাসনালির সংক্রমণ, এইচআইভি, ভাইরাল হেপাটাইটিস, টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য রোগসমূহ, টাইফয়েড, খাদ্যে বিষক্রিয়া, মেনিনজাইটিস, ইবোলা, জিকা ও চিকুনগুনিয়া।

“এই রোগগুলো দেশের জন্য মারাত্মক বার্ডেন। সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন, টিবির চিকিৎসায় অনেক এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। টিবির ডিটেকশন রেট-এগুলোতে অনেক এগিয়ে আমরা। এখনও যদি কোনো কুসংস্কারের জন্য মানুষ এগুলো গোপন করে তাহলে তো সেটা অন্যায়,” বলছিলেন ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম।

সংক্রামক রোগের তথ্য জানাতে হবে

বিলে বলা হয়েছে, সুস্থ কেউ যাতে আক্রান্ত না হন সে জন্য কারও সংক্রামক রোগ হলে সেই তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

কোনো এলাকায় সংক্রমণ দেখা দিলে সেই জায়গাকে ‘সংক্রমিত এলাকা’ ঘোষণা করে সেখানে অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত এ আইনে।

বিলে আরও বলা হয়, সরকার রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি বিশুদ্ধ বা ধ্বংস করতে, রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং সংক্রমিত স্থান বা স্থাপনা জীবাণুমুক্ত বা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, কোনো ধরনের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে যদি কোনো স্থাপনা জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব না হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনকে বিষয়টি জানাতে হবে। সিভিল সার্জন সেটি ধ্বংস করার জন্য মালিককে নির্দেশ দিতে পারবেন। জীবাণুযুক্ত যানবাহন প্রয়োজনে জব্দও করতে পারবে সরকার।

এ ছাড়া কেউ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে সন্দেহ হলে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী দাফন বা সৎকার করতে হবে বলেও বিলে উল্লেখ রয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, সংক্রামক ব্যক্তি রোগ সম্পর্কে জানার পরেও মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে সর্বোচ্চ দুই মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

মানসিক অসুস্থতার মিথ্যা সনদে জেল

বৃহস্পতিবার সংসদে মানসিক স্বাস্থ্য বিল ২০১৮ পাস হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইন অনুযায়ী, মানসিক অসুস্থতার জাল সনদ দিলে এবং সরকারি অনুমোদন ছাড়া মানসিক হাসপাতাল চালালে জেলা-জরিমানার বিধান রেখা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে একই প্রক্রিয়ায় এটি পাস হয়।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়, মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় পেশাজীবী হিসেবে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা সনদ দিলে ৩ লাখ টাকা জরিমানা, এক বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

সদ্য পাস হওয়া বিলে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মানসিক হাসপাতাল চালালে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

এই বিল কার্যকরের ৯০ দিনের মধ্যে মানসিক হাসপাতালগুলোকে লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে।

বিল অনুযায়ী, এই আইন লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হবে। বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল স্থাপনের লাইসেন্স দেওয়া, এর নবায়ন ও ফি বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।