দুর্নীতিবাজ যত শক্তিশালীই হোক ছাড় পাবে না: প্রধানমন্ত্রী

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.01.07
ঢাকা
200107_PM_Speech-Bangla_1000.jpg বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেডিও এবং টেলিভিশনে একযোগে এই ভাষণ প্রচার করা হয়। ৭ জানুয়ারি ২০২০।
[ফোকাস বাংলা]

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির সাথে যে-ই জড়িত থাক তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার ঢাকার একটি বিশেষ আদালত সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দুদিন পরে কমিশনকে এই আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার তাঁর নতুন সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি আরও বলেন, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের সকল প্রকার উসকানির ফাঁদে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কাজ করছে তাঁর সরকার।

তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান থাকবে, যে-ই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।”

শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই, দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।”

তাঁর সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তবে বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “আসলে সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান লোক দেখানো। এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়।”

তিনি বলেন, “তারা চুনোপুঁটি ধরে দেখাচ্ছে যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু বড় বড় দুর্নীতিবাজ যারা ব্যাংক লুট করছে, শেয়ারবাজার লুট করছে তাদের, যারা মেগা প্রকল্প থেকে মেগা দুর্নীতি করছে তাদের ধরা হচ্ছে না। তারা দুর্নীতি করেই চলেছে।”

“সরকার যা বলে দুদক, বিচার বিভাগ সবাই তাই করে। সুতরাং, তথাকথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযান নিরপেক্ষভাবে চলবে তা আশা করা যায় না,” যোগ করেন মির্জা ফখরুল।

এদিকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কারণে “বাংলাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর খুশি” মন্তব্য করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “কারণ কয়েক মাস আগে শুরু হওয়া ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে মূলত তাঁর দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আটক হয়েছে।”

তাঁর মতে, “যেহেতু দেশের মানুষ তাঁর অবস্থানকে সমর্থন করছে সেহেতু তিনি এই দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখবেন বলে মনে হয়। তবে, যদি নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা না করা হয় তাহলে এই অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”

অধ্যাপক নিজাম বলেন, “বিরোধীরা গত সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনমূলক বলছে। এ কারণে জনগণের দাবি অনুযায়ী দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন শেখ হাসিনা।”

দলীয় পরিচয় ভুলে সকল দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজকে আরও বেগবান করবে বলে মন্তব্য করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।

তিনি বেনারকে বলেন, “সরকারের সমর্থন থাকলে দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পায়।”

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ‘আলোচনা’র ওপর জোর

রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্য বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।”

তিনি বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে আমরা দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধান করতে চাই। এটি আমাদের দুর্বলতা নয়, কৌশল।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ কারণেই মিয়ানমারের দিক থেকে নানা উসকানি সত্ত্বেও আমরা সে ফাঁদে পা দিইনি। আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ থেকে সরে যাইনি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে মামলা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই আদালত থেকে আমরা একটি স্থায়ী সমাধানসূত্র খুঁজে পাব।”

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ তার শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে সকল বিরোধের সমাধান করতে চায়। আমরা আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে।”

রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে আরও ব্যাখ্যা করেছেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির।

তিনি বেনারকে বলেন, “আসলে ‘মিয়ানমারের উসকানি’ বলতে প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন যে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা যখন দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল তখন মিয়ানমারের জঙ্গিবিমান বারবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছিল। তারা সীমান্তে ড্রোন পাঠাচ্ছিল। সীমান্তে যারা অবস্থান নিয়েছিল তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। আর বাংলাদেশ সেব্যাপারে পাল্টা উসকানিতে না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি সামাল দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “ওই উসকানির জবাবে বাংলাদেশ পাল্টা ব্যবস্থা নিলে হয়তো সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারত। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হতো।”

রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, “আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই আদালত যদি এই রায় দেয় যে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হবে। এতে মিয়ানমার আন্তর্জাতিকভাবে চাপে পড়বে। ফলে তাদের আন্তর্জাতিক মিত্ররাও তাদের কাছ থেকে সরে যাবে।”

তিনি বলেন, “তখন বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে পারবে বলে আমি মনে করি।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।