কার্যতালিকাতেই ওঠেনি শহিদুল আলমের জামিন শুনানি
2018.10.25
ঢাকা
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের জামিন শুনানি বৃহস্পতিবার হওয়ার কথা থাকলেও মামলাটি হাইকোর্টের দিনের কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আবারো পেছাল তাঁর পঞ্চম জামিন আবেদনের শুনানি।
বৃহস্পতিবার আদালতের কজলিস্ট বা কার্যতালিকায় শহিদুলের মামলা অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ্ বেনারকে বলেন, “সাধারণত বৃহস্পতিবারে জামিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় না।”
তবে শহিদুলের আইনজীবীরা বিষয়টি নজরে আনলে আদালত আগামী রোববার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে দেয় বলে বেনারকে জানান ড. বশির ও শহিদুল আলমের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
রোববার শুনানি হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজেই শহিদুল আলমকে জামিন দেয়ার বিরোধিতা করবেন বলে ড. বশির জানান।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর প্রচার করার অভিযোগে গত ৫ আগস্ট শহিদুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর থেকে জামিন প্রশ্নে নিম্ন আদালতে তিনবার ও হাইকোর্টে দুইবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে জামিন পাননি দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম।
গত ০৮ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জামিনের শুনানি করতে গিয়ে ‘শহিদুলকে কেন জামিন দেয়া হবে না’ এ বিষয়ে সরকারের ওপর রুল জারি করে। সরকারকে রুলের জবাব দিতে সাত দিন সময় দেয় আদালত।
কিন্তু সরকার সাতদিনের মধ্যে সেই জবাব দেয়নি। কারণ হিসাবে সরকার বলছে, এধরনের রুলের জবাব লিখিত আকারে জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই।
বশির উল্লাহ্ জানান, জামিন শুনানির দিনেই তারা কেন শহিদুল আলমের জামিনের বিরোধিতা করছে সে ব্যাপারে আদালতকে মৌখিকভাবে জানাবে সরকার।
সাত দিন পার হয়ে যাওয়ার পর বাদীর আইনজীবীরা আবেদন করলে গত ২১ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করে আদালত।
সেইদিন শহিদুলের জামিন শুনানি আদালতের কজলিস্টে অন্তর্ভুক্ত হলেও তালিকার ২৫৯টি মামলার মধ্যে শহিদুলের মামলাটি ২৫৮ নম্বরে ছিল।
ওইদিন শহিদুলের জামিন শুনানি জরুরি ভিত্তিতে করার জন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আদালত আজ বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করে।
তবে আদালতের আদেশ থাকার পরেও বৃহস্পতিবার শহিদুলের জামিন কজলিস্টে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
কজলিস্টে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে আদালত কোন দিনে কোন ধরনের মামলা শুনবে সে ব্যাপারে একটি প্রথা প্রচলিত রয়েছে।”
তিনি জানান, সাধারণত জামিন বিষয়ে শুনানি হয় রোববারে। তবে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। কারণ অনেক সময় আদালত কোন মামলা কোন দিন শুনবে সেব্যাপারে বিচারকেরা আদেশ দিয়ে থাকেন।
অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান জানান, “আদালতের দৈনিক কজলিস্ট তৈরির দায়িত্ব বেঞ্চ অফিসারের। তিনি আদালতের প্রথা ও বিচারকদের দেয়া আদেশ অনুযায়ী কজলিস্ট প্রস্তত করেন।”
তবে “কখনো কখনো কজলিস্টে মামলা তুলতে ভুল হয়ে যায়,” যোগ করেন তিনি।
মানসিকভাবে শক্ত আছেন শহিদুল
শহিদুলকে জেলখানায় প্রায় প্রতিদিন দেখে আসেন বলে বেনারকে জানান তাঁর স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ। এর মধ্যে প্রতি সপ্তাহে শুধু সোমবার তিনি শহিদুলের সাথে ৩০ মিনিট একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পান।
সপ্তাহের অন্যান্য দিন সাধারণ বন্দীদের দর্শনার্থীদের মতো টিকিট কেটে তিন চার মিনিটের মতো লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে শহিদুল আলমের সাথে দেখা করতে পারেন বলে জানান রেহনুমা।
শহিদুল আলমের কিছুটা ওজন কমেছে, তিনি দাঁতের ব্যথা ও মাথা ঘোরার সমস্যায় ভুগলেও ‘মানসিকভাবে খুব শক্ত আছেন’ বলে জানান রেহনুমা।
গ্রেপ্তারের পর ৬ আগস্ট শহিদুলকে প্রথমে মহানগর হাকিমের আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। একই আদালতে তাঁর জামিন আবেদন করেন শহিদুলের আইনজীবীরা।
আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে দেয় এবং তাঁকে পুলিশি রিমান্ড প্রদান করে। রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এরপর ১৪ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাঁর জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা। সেই আবেদনও নাকচ করে দেয় আদালত।
তাঁর জামিনের জন্য ২৮ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা। তবে ৪ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানিতে বিব্রত বোধ করে আদালত।
প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের অন্য আরেকটি বেঞ্চকে জামিন আবেদনের শুনানি করার নির্দেশ দেন। ওই বেঞ্চ শহিদুলের জামিনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় মহানগর দায়রা জজ আদালতকে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর দায়রা জজ আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে। এক সপ্তাহ পর আবারও আইনজীবীরা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। তবে হাইকোর্টে এব্যাপারে এখনো পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি, যা নতুন তারিখ অনুযায়ী আগামী রোববার হবার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শহিদুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই, সে কারণেই তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে বেনারের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রেহনুমা আহমেদ।
“আশা করি আদালত শহিদুলকে জামিন দেবে,” বলেন রেহনুমা।