১০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে দ্রুত ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

জেসমিন পাপড়ি
2024.05.17
ঢাকা
১০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে দ্রুত ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। ১৬ মে ২০২৪।
সৌজন্যে: বালাদেশ হাইকমিশন]

নতুন একটি চুক্তির আওতায় প্রায় ১০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে দ্রুত ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য।

দুই দেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক প্রথম জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা শেষে বৃহস্পতিবার লন্ডনে নতুন এই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিজারস (এসওপি) স্বাক্ষরিত হয়েছে। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, ইউরোপে অবস্থান ­করা অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের এসওপি স্বাক্ষর করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারই ধারাবাহিকতায় এবার যুক্তরাজ্যের এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

আগের এসওপির আওতায় ব্রেক্সিটের আগে যেভাবে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশিদের ফেরানো হতো, এবারও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।

এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উভয় দেশের কর্মকর্তারা।

এদিকে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। এই চুক্তির ফলে শক্ত প্রমাণ রয়েছে—এমন ক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীদের সাক্ষাৎকার ছাড়াই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজতর হলো।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছরের মার্চ পর্যন্ত এক হিসাবে, আগের এক বছরে যারা যুক্তরাজ্যের ভিসার নিয়ম ভেঙে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক বেশি; প্রায় ১১ হাজার। শিক্ষার্থী, শ্রমিক বা ভ্রমণ ভিসায় ব্রিটেনে ঢোকার পর তারা সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। সেই আবেদনে সাড়া পেয়েছেন মাত্র পাঁচ শতাংশ বাংলাদেশি।

যুক্তরাজ্যে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের সংখ্যার সঠিক হিসাব জানাতে না পারলেও বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “এই সংখ্যা ১১ হাজারের অনেক বেশি।”

মানবাধিকারকর্মী ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

অভিবাসন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী বেনারকে বলেন, “এক ধরনের বাধ্যবাধকতা থেকেই মানুষ অভিবাসন করে কিন্তু উন্নত দেশ থেকে কিছু দিন পর পর মানুষকে ধরে ফেরত পাঠানো দুঃখজনক।”

এসব দেশের ইমিগ্রেশন পলিসিতেও ঘাটতি আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেখানে অভিবাসীরা কাজ পায় কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে নিতে চায় না। প্রোপার মাইগ্রেশন হতে দেয় না।”

তাই এসব দেশের উচিত শুধু অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত না পাঠিয়ে নিজেদের নীতিতেও পরিবর্তন আনা—বলেন তিনি।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বেনারকে বলেন, “এটা শুধু যুক্তরাজ্য বা ইউরোপের বিষয় না। পৃথিবীর কোনো দেশই অনিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহিত করে না। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মানে বাংলাদেশও এই বার্তা দেয় যে, আমরা চাই না আমাদের কর্মীরা কোনো দেশে অনিয়মিতভাবে যাক।”

এসব দেশের নিজস্ব রাজনীতির বড় বিষয় অভিবাসন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ৯৫ ভাগ আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়ার কারণ হলো, তাদের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আসলেও তা সত্যি। বাংলাদেশে এমন কোনো যুদ্ধাবস্থা বা পরিস্থিতি নেই যে কারণে মানুষ বিদেশে যাচ্ছে।

“তবে অনিয়মতদের ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্য বা সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যাতে বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেয়—সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণ মানুষকে যাওয়া যাবে না বলার পরিবর্তে দক্ষ কর্মী নেওয়ার সংখ্যা বাড়াতে হবে, তাহলে অনিয়মিত কর্মীর সংখ্যা কমবে,” বলেন শরিফুল।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় অবৈধদের ফেরানোর বিষয়ে এসওপি স্বাক্ষরিত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে দক্ষদের বৈধ পথে অভিবাসনের বিষয়েও আলোচনা হয়। অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতির কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুনা তাসনীম।

তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সহযোগিতায় গত এক দশকের বেশি সময় ধরে অনেক অবৈধ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে দিয়েছে হাইকমিশন। সে কারণে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশিদের সংখ্যা ‘খুব সামান্য’।

“বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ভালো ব্যাপার হচ্ছে, অবৈধ নাগরিকদের হিসাবে বাংলাদেশ প্রথম ১০টি দেশের মধ্যেও নেই,” যোগ করেন মুনা তাসনীম।

টেলিগ্রাফ লিখেছে, যুক্তরাজ্যের ভিসা নিয়ে সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করা যায়, সাধারণত সেটা কয়েক মাস কিন্তু আশ্রয় আবেদন করে মানুষ সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য থেকে যাওয়ার সুযোগ পায়। মানবাধিকার আইনসহ নানা কারণে অবৈধ অভিবাসীদের তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাধার মুখে পড়তে হয় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।

দেশটির অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধমন্ত্রী মাইকেল টমলিনসকে উদ্ধৃত করে এসওপির বিষয়ে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, “অবৈধভাবে মানুষের আসা বা থাকা ঠেকাতে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া তরান্বিত করা আমাদের পরিকল্পনার অংশ। বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং এ বিষয়ের পাশাপাশি অন্য অনেক বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক জোরদার হওয়ার বিষয়টি সত্যিই দারুণ।

“এ ধরনের চুক্তি যে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বৈশ্বিক সমস্যায় দরকার বৈশ্বিক সমাধান এবং সবার জন্য ন্যায্য পদ্ধতি তৈরি করতে বাংলাদেশ এবং অন্য অংশীদারদের সঙ্গে আমরা কাজ করতে চাই,” বলেন মাইকেল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।