চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস এইচএমপিভি সম্পর্কে যা জানা দরকার

বেনারনিউজ প্রতিবেদক
2025.01.08
ওয়াশিংটন
চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস এইচএমপিভি সম্পর্কে যা জানা দরকার চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের একটি হাসপাতালের পরিবারের সঙ্গে মাস্ক পরা এক শিশু। ৬ জানুয়ারি ২০২৫। এইচএমপিভি সংক্রমণের বৃদ্ধি স্বীকার করেছে বেইজিং।
[এসটিআর/এফপি]

সম্প্রতি চীনের উত্তরাঞ্চলে মানব মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে কোভিড-১৯ এর মতো আরেকটি প্রাদুর্ভাব হতে পারে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো এইচএমপিভি সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে চীন এইচএমপিভি সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেছে এবং এজন্য শীত মৌসুমকে দায়ী করেছে।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এতে কোভিডের মতো আরও একটি মারাত্মক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির শঙ্কা নেই।

“চীনে শীতকালে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মাত্রা স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রয়েছে,” উল্লেখ করে মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মুখপাত্র ডাঃ মার্গারেট হ্যারিস বলেছেন, “এটি কোনও নতুন ভাইরাস নয়।”

অন্যান্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।

“আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে যারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণদের দলে আছেন তাদের জন্য এটি সতর্ক থাকার সময়,” সোমবার সায়েন্টিফিক আমেরিকানকে বলেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের অধ্যাপক উইলিয়াম শ্যাফনার।

এইচএমপিভি কী?

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এইচএমপিভি একটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা প্রতি শীত ও বসন্তে বেশি দেখা যায়। বিগত ৬০ বছর ধরে এটি মানুষের মধ্যে রয়েছে।

এর সাধারণ উপসর্গ হল জ্বর, কাশি এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। গুরুতর ক্ষেত্রে ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়া হতে পারে। ভাইরাসটি সাধারণত কাশি, হাঁচি, হাত মেলানো, বা দূষিত বস্তু স্পর্শ করার মাধ্যমে ছড়ায়।

ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে মানুষ সাধারণত অসুস্থ হয়ে পড়ে। 

ছোট বাচ্চা, ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে মনে করা হয়।

বর্তমানে এইচএমপিভি চিকিৎসার জন্য কোনো টিকা নেই। ডাক্তাররা সাধারণত ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য জ্বর বা ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র-সিডিসি’র পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিরোধের সাধারণ উপায় হল নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ না করা।

হাত না ধুয়ে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকার জন্য জনসাধারণকে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার পর্যন্ত এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এইচএমপিভি পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারি ভাষ্য নিম্নরূপ: 

বাংলাদেশ

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এইচএমপিভি সংক্রমণ সনাক্ত হয়নি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বিডিনিউজ২৪.কমকে বলেছেন ভাইরাসটি আগে থেকেই দেশে রয়েছে।

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় এইচএমপিভি নতুন নয় এবং দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এর ওপর নজর রাখছেন বলে জনিয়েছেন।

গেল বছর মালয়েশিয়ায় ৩২৭ জন এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছিলেন, যেখানে তার আগের বছর ছিল ২২৫।

 “তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ শীতকালের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। অন্যান্য দেশেও, বিশেষ করে চীনে এমনটি সনাক্ত হয়েছে,” মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে।

 ইন্দোনেশিয়া

কোনও সংখ্যা উল্লেখ না করে সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় এইচএমপিভি’র সংক্রমণ দেখা গেছে, যার সবকটিই শিশুদের মধ্যে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদি গুনাদি সাদিকিন সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এইচএমপিভি দীর্ঘদিন ধরে ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে।”

যদিও এইচএমপিভি কোনও মারাত্মক ভাইরাস নয়, তিনি জনসাধারণকে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

aef7df62-5083-4454-9624-b5f9ba6e0635.jpeg
ভারতের বেঙ্গালুরুতে মুখোশ ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতামূলক একটি দেয়ালচিত্রের পাশ দিয়ে পথচারীরা হেঁটে যাচ্ছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ কর্ণাটক রাজ্যে এইচএমপিভি সংক্রমণের দুটি ঘটনা সনাক্ত করেছে। ৬ জানুয়ারি, ২০২৫। [ইদ্রিস মোহাম্মদ/এএফপি]

থাইল্যান্ড

মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুথিন বলেছেন, থাইল্যান্ডে এখনও এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।

তবে ভাইরাসটি সনাক্ত হলে তা মোকাবেলায় তার দেশ প্রস্তুত আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি জনসাধারণকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

ফিলিপাইনস

ম্যানিলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

৩ জানুয়ারি দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য উদ্বেগের দাবির কোনো ভিত্তি নেই। উল্লেখিত দেশ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এসব খবরের যথার্থতা নিশ্চিত করা হয়নি।"

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।