চার বছর পর বাংলাদেশ থেকে দেখা যাচ্ছে বেনারনিউজ
2024.08.12
ঢাকা
আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪। ইস্টার্ন সময় সন্ধ্যা ৭:০০
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার কয়েকদিনের মাথায় বাংলাদেশের পাঠকরা আবারো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আর্থিক সহায়তায় প্রকাশিত নিউজ পোর্টাল বেনারনিউজ দেখতে পারছেন বলে জানিয়েছেন।
দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে বেনারনিউজের ওয়েবসাইট বাংলাদেশে ব্লক ছিল।
গত শুক্রবার ও সোমবার বেনার প্রতিবেদকেরা জরিপ চালিয়ে দেখেছেন, ২০২০ সালের এপ্রিলের পর এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাঠকেরা বেনারনিউজ ওয়েবসাইট দেখতে পাচ্ছেন।
যদিও বেনারনিউজ ওয়েবসাইট ব্লক করা এবং আবার খুলে দেয়া সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা।
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে বিশ লাখ পর্যন্ত মানুষ মারা যেতে পারে বলে ফাঁস হওয়া জাতিসংঘের একটি খসড়া নথির ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২০২০ সালের ২ এপ্রিল থেকে বেনারনিউজের ইংরেজি ও বাংলা ওয়েবসাইট বাংলাদেশে ব্লক করে দেয়া হয়।
বেনারনিউজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও কোন কর্তৃপক্ষ কেন সাইটটি বন্ধ করেছেন সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
বেনারনিউজের সাইট খুলে যাওয়া নিয়ে সোমবার একাধিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়।
বেনারনিউজের সাইটটি কে, কীভাবে ব্লক করেছে এবং কীভাবে এটি খোলা হয়েছে সে বিষয়ে তাঁরা অবগত নন বলে সোমবার বেনারকে জানান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল হক।
তিনি বলেন, “আমরা বেনারনিউজের ব্লক এবং পুনরায় খোলার বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।”
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রেস) শরিফুল হকও ঘটনার বিষয়ে অবগত নন জানিয়ে বেনারকে বলেন, “যদি আমি কোনো তথ্য পাই, বেনারনিউজের সাথে আসলে কী হয়েছিল, তা আমি আপনাদের জানাব।”
বেনারনিউজ যখন ব্লক করা হয় তখন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন মোস্তাফা জব্বার। তিনিও বেনারনিউজ ব্লকের ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন জানিয়ে সোমবার বেনারকে বলেন, “আমি এটা সম্পর্কে কিছু জানি না। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”
তবে ২০২০ সালে বেনারনিউজ ব্লক করার পর মোস্তাফা জব্বার বলেছিলেন, “ব্লক করার পেছনে অবশ্যই কারণ আছে। আপনারা এটি খোলার জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করতে পারেন।”
পরে যোগাযোগ করা হলে বিটিআরসির সেই সময়ের চেয়ারম্যান জহুরুল হক এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, “আমরা আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে সাইটগুলো ব্লক করি না। সরকারের সিদ্ধান্তে তাদের বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অনুরোধের প্রেক্ষিতে এটা করা হয়ে থাকে।”
‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিত’
বেনারনিউজের সাথে মূলত কী ঘটে থাকতে পারে, এ প্রসঙ্গে সোমবার বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দেশে পর্নোগ্রাফি সাইট ব্লক করার প্রযুক্তি চালু করেন এবং সেই সুযোগে তিনি ও তাঁর সরকারের লোকজন এমন অনেক ওয়েব সাইট বন্ধ করে দেন যেগুলোতে সরকারের সমালোচনা করা হয়।
“তিনি (জব্বার) আইজিডব্লিউ বা আন্তর্জাতিক গেটওয়ে থেকে সাইটগুলো ব্লক করার জন্য উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে সিস্টেমটি ক্রয় করেছিলেন। পরে আড়ালে থেকে কর্তৃপক্ষ কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে অনেক নিউজ সাইট ব্লক করে দেয়,” বলেন তিনি।
সরকার বিরোধী মতামতকে দমন করার জন্য প্রযুক্তিটিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল বেনারকে বলেন, “আমি মনে করি যখন বেনারনিউজ এবং অন্যান্য অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে অবৈধভাবে ব্লক করার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা ক্ষমতা পরিবর্তনের বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছেন, তার পরপরই তাঁরা এই সাইটগুলো খুলে দিয়েছেন।”
যখন এই কর্মকর্তারা ধারণা পেলেন যে, অসদাচরণের জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তখনই তারা মূলত এটি খুলে দেন বলে ধারণা এই মানবাধিকারকর্মীর।
“নেপথ্যে কিছু লোক আছে; তারা এখনও সক্রিয় এবং তারা রঙ পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। কর্তৃপক্ষকে বোঝানোর পর তারা আবার সামনে আসবে। সুতরাং, এই আনব্লকই যথেষ্ট নয়, আমাদের এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিত যা এই ধরনের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপকে সমর্থন করবে না,” যোগ করেন ফয়সাল।
রেডিও ফ্রি এশিয়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেনারনিউজ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত, তবে সম্পাদকীয় নীতির ক্ষেত্রে বেনারনিউজ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতিমালা থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। বেনারনিউজ বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা, রাজনীতি ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদন করে থাকে।
সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে পাঠকদের কাছে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও সংবাদ পরিবেশনই বেনারনিউজের মূল লক্ষ্য।