ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার বিচার শুরু

জেসমিন পাপড়ি
2019.08.01
ঢাকা
190801_AVIJIT_MURDER_1000.jpg ঢাকায় অভিজিৎ রায় হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ চলাকালে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন অংশগ্রহণকারীরা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
[এপি]

ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত।

এর মধ্য দিয়ে প্রায় সাড়ে চার বছর পরে বিজ্ঞানমনস্ক এ লেখক হত্যার বিচার শুরু হলো। এই জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের পুরোনো নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।

বৃহস্পতিবার ঢাকা সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান অভিযোগ গঠনের পাশাপাশি আগামী ১১ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন বলে বেনারকে জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

দ্রুত বিচারের আবেদন করবে না রাষ্ট্রপক্ষ

এই মামলা সম্পর্কে খুব বেশি অবগত নয় অভিজিৎ রায়ের পরিবার।

তাঁর বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায় বেনারকে বলেন, অভিযোগ গঠন হয়েছে বলে শুনেছি। বিস্তারিত জানি না।”

তিনি বলেন, “মাস খানেক আগে পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আমার কাছে এসেছিলেন। তার পনেরো দিন পরে আরো একজন আসেন। তাঁরা আমাকে এই মামলা দ্রুত বিচারের জন্য আবেদন করতে বলেছিলেন।”

“আমি বলেছিলাম, সেটা পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব। আমি তাঁকে এমন কোনো অনুরোধ করব না,” জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের এই সাবেক অধ্যাপক।

“আশা করি বিচার তার পদ্ধতি অনুযায়ী চলবে। এটা যেহেতু পাবলিক আদালত, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করার সুযোগ নেই,” বলেন অজয় রায়।

তবে পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বেনারকে বলেন, “এই আদালতই দ্রুত কাজ করছে। তাই এই মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।”

“মামলাটি সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে আছে, সেখানেই বিচার হবে। আদালত যেভাবে নেয়, সেভাবেই মামলার কার্যক্রম চলবে,” বলেন তিনি।

অভিযোগপত্র জমার চারমাস পরে অভিযোগ গঠনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বহুল আলোচিত অভিজিৎ হত্যা মামলাটির চার্জশিট দেওয়ার পরে এই আদালতে আসে। আসামিদের দুজন পলাতক ছিল, তাদের নামে গেজেট, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তারপরেই আমরা মামলার কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি।”

নির্দোষদাবি আসামিদের

অভিজিৎ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, আরাফাত রহমান ওরফে শামস ওরফে সাজ্জাদ, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক ওরফে সোহেল ওরফে সাকিব, আকরাম হোসেন আবির ওরফে আদনান ও শফিউর রহমান ফারাবী। এদের মধ্যে মেজর জিয়াউল ও আকরাম পলাতক রয়েছেন। বাকিরা অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আটক থাকা আসামির পক্ষে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন তাঁদের আইনজীবীরা। আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। আদালতের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুঁলি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাঁরা দোষী না নির্দোষ- তা জানতে চান। এসময় আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের কাছে ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদও ওই ঘটনায় আহত হন।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ-বন্যা দম্পতি অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে দেশে এসেছিলেন। মেলা থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথেই আক্রমণের শিকার হন তাঁরা।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায় শাহবাগ থানায় এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। চার বছর পর গত ১৩ মার্চ এই ছয়জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। অভিযোগের পক্ষে ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

গত ১১ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত। সেদিনই পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পরে মেজর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, এ মামলার আসামিদের মধ্যে ফারাবী ছাড়া বাকি সবাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।

আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলাকালে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে খুন হওয়ার দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিসিটিভির (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক প্রশিক্ষক শরিফুল, শারীরিক প্রশিক্ষক সেলিম, সাজ্জাদসহ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাত-আটজনকে দেখা যায়।

বইমেলায় প্রবেশ এবং সেখান থেকে বের হওয়া পর্যন্ত অভিজিৎ রায়ের গতিবিধি অনুসরণ করেন তাঁরা। গ্রেপ্তার হওয়ার পর সায়মন, সোহেল ও আরাফাত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

হত্যার দুদিন আগে থেকে সায়মন, সোহেল, আকরাম ও হাসান অভিজিৎ রায়ের গতিবিধি অনুসরণ করেন। আরাফাত, খলিল ওরফে আলী, অন্তু ও অনিক হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন বলে জানান তাঁরা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।