অভিজিৎ রায় হত্যায় জড়িত সন্দেহে এবিটি সদস্য সোহেল গ্রেপ্তার
2017.11.06
ঢাকা
প্রায় আড়াই বছর পর বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মো. আবু সিদ্দিক সোহেল নামে (৩৪) একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
রোববার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বেনারকে নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর সিসিটিভি ভিডিও পর্যালোচনায় পুলিশ যাদের চিহ্নিত করেছিল, সোহেল তাদের একজন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান বেনারকে বলেন, “সোহেল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের বা সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ইন্টেলিজেন্স শাখার একজন সদস্য। সংগঠনের অন্যান্যদের সহযোগিতায় অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের কাছে সে স্বীকার করেছে।”
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল স্বীকার করে, বইমেলা রেকি করে অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্যে টার্গেট করে, সংগঠনের অন্যান্য সহযোগীদের রেকি এবং দেখানো মতে সংগঠনের অপারেশন শাখার লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সেসময় সোহেলসহ অন্যান্যরা অপারেশন শাখার লোকদের চারপাশে গার্ড হিসেবে অবস্থান নেয়। সে আরও জানায় সংগঠনের বড় ভাই (মেজর জিয়া) এর নির্দেশে এবং পরিচালনায় এ হত্যাকাণ্ডে তারা অংশগ্রহণ করেছিল।
এর আগে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে র্যাব আটজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো শফিউর রহমান ফারাবী, সাবেজ আলী, আমিনুল মল্লিক, জুলহাস বিশ্বাস, মো. জাফরান হাসান, মো. আবুল বাশার, সাদেক আলিম এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুর রহমান। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রিমান্ডে ও টিএফআই সেলের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০১৬ সালের ১৯ মে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়সহ কমপক্ষে ১০ জন লেখক ও ভিন্নমতাবলম্বী খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ছয়জনের ছবি প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
ডিএমপির সংবাদ পোর্টালে ওই ছবি প্রকাশ করে ও ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ পুরস্কার ঘোষণা করে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের গ্রেপ্তার থাকা কয়েকজন সদস্যের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই ছয়জনকে শনাক্ত করে পুলিশ। তাদের একজন মুকুল রানা ওরফে শরিফুল গত বছরের ১৯ জুন খিলগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
সিসিটিভি ভিডিও পর্যালোচনার পরে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গত বছরের ২১ আগস্ট পুলিশ ছয়জনের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। মুকুল রানা তাদের একজন।
ছবি প্রকাশের চার মাস পর ডিএমপি অভিজিতের খুনিদের ভিডিও প্রকাশ করে। ওই ভিডিওতে ঘটনাস্থলে মুকুল রানাকে দেখা যায়। গতকাল যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই ভিডিওতে তাকেও দেখা গিয়েছিল।
দীর্ঘদিন পরে হলেও বহুল আলোচিত এ ব্লগার হত্যার আসামি আটক হওয়ায় অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচারে গতি পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কিছুটা সন্তোষ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবারও।
“এটা একটা ডেভেলপমেন্ট। শুনেছি এর আগে যে মুকুল রানা ক্রসফায়ারে নিহত হলো, সেও অভিজিতের খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এ নিয়ে দুজন। যারা ওকে (অভিজিৎ) কুপিয়েছিল তাদের গ্রেপ্তার করে যেদিন বিচার হবে সেদিন স্বস্তি পাব,” তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেনারকে বলছিলেন অভিজিতের বাবা শিক্ষাবিদ অজয়।
জঙ্গিবাদ বিশ্লেষক নূর খান বেনারকে বলেন, “সিস্টেমেটিক্যালি এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় যেভাবে ব্লগারদের হত্যা করা হয়, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ আগে কখনো হয়নি। এটা অনেকটা ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড ছিল। সেখান থেকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্ধকারে হাতড়িয়ে যেভাবে এগোচ্ছে, সেটা ধীর গতি হলেও নিরাশ করবে না।”
“এখন আমাদের দায়িত্ব অবিলম্বে মামলাগুলোর চার্জশীট দিয়ে আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা,” বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা চলাকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে ফুটপাতে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও ওই হামলার শিকার হন। এতে হাতের একটি আঙুল হারান বন্যা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। সেখানেই বসবাস করতেন তিনি। সেবার বইমেলায় অংশ নিতে সস্ত্রীক দেশে আসেন এই মুক্তমনা লেখক। ঘটনার পর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন অভিজিতের বাবা।