একযুগ আগে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তিনজনের ফাঁসির রায় বহাল

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.12.07
হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান। ফাইল ফটো।
স্টার মেইল

সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত।

বাংলাদেশে প্রায় ১২ বছর পরে বিশ্বজুড়ে আলোচিত এ মামলার চূড়ান্ত রায় এসেছে৷ তবে দেরিতে হলেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় জঙ্গিদের শাস্তির বিধান হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

বুধবার ওই তিন জঙ্গির করা আপিলের শুনানি শেষে হাই কোর্টের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার রায় দেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ।

এদিকে এএফপি জানিয়েছে, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকাদের দণ্ড দেওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে ব্রিটিশ হাইকমিশন। তবে ব্রিটেন ফাঁসির দণ্ডের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে বলেও জানানো হয়।

আপিলের এই রায়ের পরে আসামিদের শুধু পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ বাকি রয়েছে। আদালতে সে বিষয়টি নাকচ করলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তারা। রাষ্ট্রপতি সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে কারাবিধি অনুযায়ী সরকার তাদের ফাঁসি কার্যকর করবে।

এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “এর আগেও বেশ কিছু জঙ্গির ফাঁসির দণ্ড হয়েছে। তবে আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলার মতো আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত ঘটনায় হওয়া এ রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী।

তিনি বলেন, “বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জঙ্গিদের সাজা হওয়ার ব্যাপারটি বিচার ব্যবস্থার জন্য স্বস্তিদায়ক। দেশের জন্যও বটে।”

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। ফাইল ফটো।
সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। ফাইল ফটো।
স্টার মেইল
সম্প্রতি বাংলাদেশে বেশ কিছু জঙ্গি হামলার ঘটনার পরে আটক হওয়া জঙ্গিদের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বত্র প্রশ্নের সম্মুখীন করে তুলছে।

এমন অবস্থায় সম্পূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ায় সিলেটের শাহজালালের মাজারে গ্রেনেড হামলার বিচার শেষ হওয়ার বিষয়টি দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুটা ইতিবাচক ধারণা দেবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সম্প্রতি গুলশানে জঙ্গি হামলার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশের ভাবমূর্তি অনেকটাই ফিরিয়ে এনেছে। এভাবে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা আনতেও যেকোনো মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

বুধবার যে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে, তারা হলেন মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপন। আদালতে মুফতি হান্নান ও বিপুলের পক্ষে আপিলের শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আলী। আর রিপনের পক্ষে অংশ নেন রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা।

এ রায়ে ন্যায় বিচার পাননি অভিযোগ এনে আসামি পক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সিদ্ধোন্তের কথা জানান।

এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আলী বেনারকে বলেন, “আমি যতটুকু জানি, আমার ক্লায়েন্টরা (আসামিরা) রিভিউ করতে আগ্রহী।”

তবে রিভিউ আবেদন না করলে কারাবিধি অনুযায়ী তাদের ফাঁসি কার্যকর হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বেনারকে বলেন, “তারা (আসামিরা) যদি রিভিউ করতে চায়, করবে; না করলে ডেথ ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়ার পরে সাত এবং ২১ দিনের মধ্যে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।”

আসামিরা ইচ্ছে করলে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণ ভিক্ষার আবেদনও করতে পারেন বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের মাজারের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বেরুনোর সময় গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। এখন পর্যন্ত এটাই বাংলাদেশে কোনো বিদেশি কূটনীতিকের জঙ্গি হামলার শিকার হওয়ার একমাত্র ঘটনা।

ওই হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন। এছাড়া রুবেল আহমেদ নামে একজন পুলিশ কনস্টেবল ও হাবিল মিয়া নামের আরেকজন ব্যক্তি পরে হাসপাতালে মারা যান। হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসকসহ কমপক্ষে ৪০ জন সেদিন আহত হন।

ঘটনার দিনই পুলিশ সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষ করে ২০০৭ সালের ৭ জুন অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে আসামি করা হয় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম যুক্ত করে পুলিশ।

সে বছর নভেম্বর মাসে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। পরে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটির রায়ে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এরও প্রায় আট বছর পরে উচ্চ আদালত ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে এ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আপিল খারিজ করে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করলেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেননি। ফলে তাদের ক্ষেত্রে আগের সাজাই বহাল রয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।