রোহিঙ্গা ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.06.07
ঢাকা
জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ৭ জুন ২০১৮।
সৌজন্যে: বাসস

রোহিঙ্গাদের আগমনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের সহায়তা করতে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণাকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, টেকনাফ ও উখিয়ায় এ বছর পয়লা জুলাই থেকে ১০ লাখ ৪০ হাজার ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) কার্ড বিতরণ করা হবে।

গত ৩০ মে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের আগমনের ফলে স্থানীয় জনগণের কর্মস্থানের সুযোগ কমে গেছে। তাঁরা কষ্টে আছে।

এ ছাড়াও বাজেট প্রস্তাবনায়, উচ্চ শিক্ষায় হিজড়া ও বেদেদের সহায়তা বাড়ানো এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি এক হাজার ২০০ টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন মন্ত্রী মুহিত।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, ভিজিডি কার্ডধারীরা প্রতি মাসে ২০ কেজি চাল পেয়ে থাকেন।

গত বছর আগস্ট মাসের শেষ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে প্রবেশ শুরু করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফে বসবাস করছে। এদের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা গত বছর আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

টেকনাফ ও উখিয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের চেয়ে এখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি। উখিয়ায় প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। কিন্তু স্থানীয়দের সংখ্যা মাত্র পাঁচ লাখ।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপক আগমনের কারণে স্থানীয় মানুষের কাজের সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে।

রোহিঙ্গাদের দ্রুত পুনর্বাসনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে উখিয়ার বাসিন্দারা। এপ্রিল মাসে স্থানীয়রা উখিয়া উপজেলা কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে।

রোহিঙ্গা পুনর্বাসন নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সংসদে বলেন, “আমাদের সীমিত সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দে চাপ থাকা সত্ত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা আগত রোহিঙ্গাদের জন্য বাসস্থান, সুরক্ষা, চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক মানবিক সহায়তা প্রদান করছি।”

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় যে, আন্তর্জাতিক তৎপরতা ছাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের পুনর্বাসন ও নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া মোটেও এগোবে না।”

রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন আন্দোলনের অন্যতম নেতা রফিকুল ইসলাম বেনারকে বলেন, এক বছর আগে উখিয়ায় প্রচুর শাকসবজি উৎপাদন হতো। রোহিঙ্গারা আবাদি জমিতে ঘরবাড়ি গড়ে তুলেছে। এ কারণে, এখন উখিয়ায় সবজি আসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে। চাষিদের কোনো কাজ নেই। ভিক্ষা করা ছাড়া অনেকের বেঁচে থাকার উপায় নেই।

রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা সরকারের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা স্থানীয়রা পথে বসার উপক্রম হয়েছি। আমাদের কাজের সুযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি।”

তিনি বলেন, স্থানীয়দের কর্মসংস্থান করতে সম্প্রতি সরকার একটি নীতিমালা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিওদের প্রকল্পে শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ জনবল নিয়োগ দিতে হবে স্থানীয় জনগণের মধ্যে থেকে।

রফিকুল ইসলাম বলেন, “আজকে স্থানীয়দের নিয়ে সরকারের এই চিন্তাভাবনা আমাদের আন্দোলনের ফসল।”

অর্থমন্ত্রী মুহিত সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের প্রস্তাবনা তুলতে গিয়ে বলেন, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির পরিমাণ প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হবে।

মাধ্যমিক স্তরে সেটি ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

উচ্চ শিক্ষার জন্য হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপবৃত্তি এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২শ টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন মন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটির বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।

আসন্ন বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য রাখা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা।

দুপুর সাড়ে ১২টার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য এই বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এরপর মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবিত বাজেটে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সবচে বেশি পরিবহন ও শিক্ষায়

প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগে; ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপরই বেশি বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত; ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রস্তাবিত অনুন্নয়ন বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৪ কোটি টাকা।

আসন্ন ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের জন্য ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে খাতওয়ারি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ।

কমেছে স্বাস্থ্যে

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ অর্থমন্ত্রী রেখেছেন স্বাস্থ্য খাতের জন্য। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের এই হার গত অর্থবছরের তুলনায় কম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশে বলা হয়েছে, একটি দেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। গতকাল অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা জিডিপির শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপির ১ শতাংশেরও কম।

বাজেট ঘোষণার পর গতকাল রাত পর্যন্ত বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। বাজেট বিষয়ে বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বেনারকে বলছেন, এবারের বাজেট জাতীয় নির্বাচনমুখী বাজেট। লোক দেখানো এবং ভোটার আকর্ষণই এর মূল লক্ষ্য। এই বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।