হবিগঞ্জে ৪ শিশু হত্যায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
2017.07.26
ঢাকা
হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশু অপহরণের পর হত্যা মামলায় তিনজনকে অর্থদণ্ডসহ মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার আদালত।
বুধবার বিচারক মকবুল আহসান গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে তিন আসামি রুবেল মিয়া, আরজু মিয়া ও উস্তার মিয়াকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী কিশোর কুমার কর।
অপর দুই আসামি রুবেলের ভাই জুয়েল মিয়া ও শাহেদ মিয়াকে ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডসহ সাত বছরের জেল এবং তিনজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।
তবে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত আব্দুল আলী বাগাল, বাবুল মিয়া ও বিল্লাল মিয়া বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
“বাগাল এই হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক; আর সেই খালাস পেয়ে গেলো। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আমরা বাগালের মৃত্যুদণ্ড চাই," বেনারকে বলেন বাদীপক্ষের আইনজীবী কিশোর কুমার কর।
গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে চার শিশু নিখোঁজ হয়। এরা হলো- আবদাল তালুকদারের সাত বছরের ছেলে মনির মিয়া, ওয়াহিদ মিয়ার আট বছরের ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ, আব্দুল আজিজের দশ বছরের ছেলে তাজেল মিয়া এবং আব্দুল কাদিরের দশ বছরের ছেলে ইসমাইল হোসেন। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর তাদের লাশ ইছাবিলে বালির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের তদন্তে উল্লেখ করা হয়, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের মধ্যে বিরোধের জেরে ওই চার শিশুকে অপহরণ করে হত্যা করে অভিযুক্তরা।
অভিযুক্ত নয় আসামি হলো- সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আব্দুল আলী বাগাল, তার দুই ছেলে রুবেল মিয়া ও জুয়েল মিয়া, তাদের সহযোগী আরজু মিয়া, শাহেদ মিয়া, বাচ্চু মিয়া, উস্তার মিয়া, বাবুল মিয়া ও উস্তার মিয়া।
এদের মধ্যে আব্দুল আলী বাগাল ও তার দুই ছেলে, আরজু মিয়া ও শাহেদ মিয়া কারাগারে রয়েছেন। উস্তার মিয়া, বাবুল মিয়া ও বিল্লাল মিয়া পলাতক। অপর আসামি বাচ্চু মিয়া পলাতক অবস্থায় র্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে' মারা গেছেন।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আসামিপক্ষও।
“আমরাও রায়ে সন্তুষ্ট নই। এখানে ন্যায় বিচার পাইনি,” বেনারকে বলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী শফিউল আলম।
তবে তাঁর মক্কেল নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন কি না তা পরিষ্কার করেননি তিনি।
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী কিশোর কুমারের অভিযোগ, বাদীপক্ষকে আদালতে সাক্ষ্য না দিতে ধারাবাহিকভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল আসামিপক্ষের লোকেরা।
“এমনকি নিরাপত্তার অভাবে আজ আমার মক্কেলরা কেউই আদালতে রায় শুনতে আসেননি,” বলেন তিনি।
রায় ঘোষণার পর বুধবার দুপুরে নিহত শিশু ইসমাইলের মা, তাজেলের মা এবং মনিরের মা মূর্ছা যান বলে জানিয়েছেন ভাদেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বশির আহমেদ।
“তবে এখন তাঁরা সুস্থ্ আছে; কথাও বলছেন,” জানান তিনি।
“সুন্দ্রাটিকির চার শিশু হত্যাকাণ্ড সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আদালতে রায় ঘোষণা করা হয়েছে; এখানে কারও কিছু করার নাই। আমরা গ্রামবাসীরা চাই এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হোক," বলেন বশির আহমেদ।
তালুকদার ও বাগালের পরিবারের মধ্যে বহুদিনের বিরোধ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “হত্যার বিচার আদালত করবে। আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এখন চেষ্টা করছি এই বিরোধ যেন আর বড় আকার ধারণ না করে।”
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, হবিগঞ্জ শিশু হত্যা মামলার রায়ে মূল আসামির বেকসুর খালাস পাওয়া শিশু হত্যার মতো জঘন্য অপরাধকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
“আমার মতামত হলো মূল আসামি খালাস পাওয়ার মূল কারণ হলো মামলা তদন্তে দুর্বলতা ও বিভিন্ন ধরনের প্রভাব। এই মামলায় হয়ত পুলিশের তদন্ত এমনভাবে হয়েছে যে বিচারকের কিছু করার ছিল না। কারণ, একজন বিচারককে তদন্ত ও এর পক্ষে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য ও প্রমাণদির ওপর ভিত্তি করে রায় দিতে হয়," বলেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, তবে আমাদের বিচার বিভাগকে এই ধরনের সমস্যা দুর করতে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।