করোনা মহামারির প্রভাবে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির আশঙ্কা

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.06.30
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
200630_child_marriage_1000.JPG ঢাকার শাহবাগ এলাকায় ফুল বিক্রি করছে এক কিশোরী। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহিবল এর তথ্যমতে বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৫৯ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৫৯ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারলে চলমান করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশে বাল্যবিবাহের এই হার আরো বাড়তে পারে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহিবল (ইউএনএফপিএ) এর ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্বে নারী ও কিশোরীদের প্রতি ১৯ ধরনের বৈষম্যমূলক ও ক্ষতিকর চর্চা রয়েছে। এর মধ্যে বাল্যবিবাহ এবং ছেলে সন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বাংলাদেশে প্রকট।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউএনএফিপএ প্রতিনিধি অশা টর্কেলসন বলেন, “অবশ্যই আমাদের আবদ্ধ ও প্রচলিত সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চাগুলো পরিবর্তনের মাধ্যমে নারী ও মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জাগ্রত করতে হবে। বৈষম্যের মূল কারণ বের করে সমাধান করতে হবে এবং মেয়েদের স্বাধীনতা নিশ্চত করতে হবে।”

প্রতিবেদন প্রকাশের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ৮০ ভাগ জনসংখ্যার ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে নয়জনই কোনো না কোনো বিষয়ে নারীর প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। সারা বিশ্বে ১৪ কোটির বেশি নারী বিভিন্ন রকমের লৈঙ্গিক বৈষম্যের শিকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাত দিয়ে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের কর্মকর্তা মাহবুব-ই-আলম বেনারেক, “এটি স্বতঃসিদ্ধ যে, বিশ্বে প্রতি একশ মেয়ের বিপরীতে ১০৪ জন ছেলে জন্ম নেয়।”

“কোনো দেশে যদি দেখা যায় একশ মেয়ের বিপরীতে ১০৫ এর বেশি ছেলে জন্ম নিচ্ছে তাহলে ধরে নিতে হবে সমাজে মেয়ে শিশুর জন্ম রোধ করা হচ্ছে,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন একশ মেয়ে শিশুর বিপরীতে ১০৫ জন ছেলে জন্ম লাভ করছে।”

“সে কারণে বলা যায় আমাদের এখানে মেয়ে শিশুর ভ্রুণ নষ্ট করা হচ্ছে,” বলেন মাহবুব-ই-আলম।

এদিকে “বাল্যবিবাহ সর্বনাশা একটি বিষয়,” মন্তব্য করে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, “সরকারের তদারকি, সামাজিক সচেতনতা ইত্যাদির কারণে আমাদের দেশে গত কয়েকবছর ধরে বাল্যবিবাহ কমে আসছিল।”

“কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের আবার পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,” বলেন তিনি।

তাঁর মতে, মহামারির কারণে দারিদ্র বেড়েছে, খাদ্য অনিশ্চয়তা বেড়েছে, শারীরিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। সুতরাং, একজন মেয়েকে যদি বিয়ে দিয়ে দেওয়া যায় তাহলেও তো একজনের খাবার কম লাগে।

“সেকারণে আমি মনে করি বাল্যবিবাহ বাড়বে। বাল্যবিবাহের সাথে সাথে স্কুল থেকে ঝরে পড়া বাড়বে। শিশুশ্রম বাড়বে, অপুষ্টি বাড়বে। আর সবকিছুর মূল কারণ দারিদ্র বৃদ্ধি,” বলেন রাশেদা কে. চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে ছেলেরাই সব নয়। মেয়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আমরা লিঙ্গ সমতা আনতে পারব না। একটি দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব অর্জন করতে পারব না।

এদিকে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের প্রতিবেদনটি পুরোনো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা বলে বেনারকে জানান নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পরিচালিত শিশুদের মাল্টিসেক্টরাল কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন।

তিনি বলেন, “২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার ৫১ শতাংশ।”

দরিদ্র মানুষেরা অর্থ-সামাজিক ও অন্যান্য কারণে পরিণত হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তবে, সরকারের কঠোর আইন প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রচার, ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার গত কয়েক বছরে কমে এসেছে।”

ড. আবুল হোসেনের মতে, “করোনাভাইরাসের কারণে বাল্যবিবাহ বেড়েছে একথা বলা যাবে না।” তিনি বলেন, “আমি বলব বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির ঝুঁকি বেড়েছে।”

তাঁর মতে, “ব্যাপক আকারে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া বাল্যবিবাহ বেড়েছে বলা গ্রহণযোগ্য নয়।”

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাল্যিবিবাহ বন্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশার বিষয় হলো, বাল্যবিবাহ এবং মেয়েদের প্রতি বৈষম্য কমে এসেছে। সুতরাং, আমরা আশাবাদী, প্রতিকূলতা সত্বেও বাংলাদেশ বাল্যবিবাহ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।