জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষ গৃহহারা হবে
2016.12.09
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি মানুষ গৃহহারা হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনে ফসলি জমি তলিয়ে যাবে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত অভিবাসন নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিএফএমডি) নবম সম্মেলনে এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এর শিরোনাম ছিল, ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ নোজ নো বর্ডারস’। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব অঞ্চলে বন্যা, খরা, দাবদাহ, সাইক্লোন, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াসহ বিভিন্ন দুর্যোগ ভবিষ্যতে বাড়তে থাকবে।
গতকাল শুক্রবার বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক প্রতিনিধিদলের দুই দিনের (সিভিল সোসাইটি ডেজ) এই সম্মেলন শেষ হয়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩০০ প্রতিনিধি যোগ দেন।
আজ ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে সরকারি পর্যায়ের আলোচনা, চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ ডিসেম্বর সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
সম্মেলনের প্রথম পর্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশটিতে ধানের উৎপাদন ১০ শতাংশ এবং গমের উৎপাদন ৩০ শতাংশ হ্রাস পাবে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন মৌসুমে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় অভিভাসন হয়, কৃষি মৌসুমে এই অভিভাসন বেশি হয়। ফসল না হওয়া বা কম হওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং বন্যা দেশের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি আয়ের সুযোগ কমাতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসবের ফলে গ্রামের মানুষের শহরে ছোটার প্রবণতা বাড়বে এবং কাজের খোঁজে যে কোনোভাবে তারা বিদেশগামি হবে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, এই শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ শহরে বাস করবে। এই পরিস্থিতি ঢাকার ওপর প্রচণ্ড চাপ ফেলবে, যেখানে ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বসবাস করে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরী বেনারকে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের অন্যতম শিকার বাংলাদেশ। কিন্তু দেশটি এখন পর্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুত—এটা বলা যাবে না।”
তিনি বলেন, “বিশ্বে এ বিষয়ক আলোচনা ও দর কষাকষিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকার কথা। কিন্তু সেই ভূমিকা বাংলাদেশ সব সময় জোরদারভাবে রাখতে পারছে না।”
এদিকে গতকাল প্রথম পর্বের সমাপনী অধিবেশনে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, সীমিত সম্পদ থাকার পরও বাংলাদেশ এখানে আশ্রয়প্রার্থীদের সর্বোচ্চ সহায়তা করছে। অন্য সব দেশকেও একইভাবে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বিদেশিদের ওপর জঙ্গি হামলার পর অনেক বিদেশিই ঢাকা সফর বাতিল করেছিলেন। কিন্তু পাঁচ মাস পর অভিবাসন নিয়ে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে প্রায় ৩০০ বিদেশি এখন ঢাকায়।
দুয়েকদিনের মধ্যে আরও কয়েকশ বিদেশি প্রতিনিধি ঢাকায় আসবেন। বাংলাদেশ আশা করছে এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশকে চিনবেন বিদেশিরা।
পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বেনারকে বলেন, “অভিবাসন ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায় একটি গ্লোবাল কমপ্যাক্ট প্রণয়নে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে অভিবাসন, শরণার্থী ও মানব পাচার বিষয়ক সমস্যার সমাধান খোঁজা হবে।”
২০১৮ সালে বিশ্বনেতারা এ চুক্তিটি অনুমোদন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ওই চুক্তির কথা উল্লেখ করে সচিব বলেন, “২০১৮ সালে যে চুক্তিতে আমরা পৌঁছাব, সে জন্য বসে থাকলে চলবে না। টেকসই উন্নয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে, সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য বিশ্বের নাগরিক সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।”
অভিবাসন ও উন্নয়ন নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে এক দশক আগে জিএফএমডি সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত বছর তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান পদ লাভ করে।
সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, অভিবাসন খরচ, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, অভিবাসীদের গন্তব্য, অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা, সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি ও দুর্যোগ চলাকালে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে, নিরাপদ অভিবাসনের জন্য করণীয়—এসব বিষয় নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা ও করণীয় ঠিক করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে বেলজিয়ামে প্রথম এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালে ফিলিপাইনে, ২০০৯ সালে গ্রিসে, ২০১০ সালে মেক্সিকোতে, ২০১১ সালে সুইজারল্যান্ডে, ২০১২-১৩ সালে মরিশাসে, ২০১৩-১৪ সালে সুইডেনে ও ২০১৫ সালে তুর্কিতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে নবম সম্মেলন। দশম সম্মেলন হবে জার্মানিতে।