অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা অনুমোদন পেলো বাংলাদেশে
2021.01.04
ঢাকা

করোনাভাইরাস টিকা রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারির পরদিনই যুক্তরাজ্যে উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনিকার করোনাভাইরাস টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিলো সরকার।
বাংলাদেশে টিকাটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার ওষুধ প্রশাসন এই অনুমোদন দেয় বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এই টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার ব্যাপারে ইতিমধ্যে ভারতে টিকাটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকোর চুক্তি হয়েছে।
এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভারতে যখন টিকা দেয়া শুরু হবে তখনই বাংলাদেশকে টিকা দেবে সেরাম ইন্সটিটিউট।
যুক্তরাজ্য-সুইডেন যৌথভাবে করোনাভাইরাসের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকাটি প্রস্তুত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই টিকার বাণিজ্যিক অংশটি দেখছে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া।
বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা সরবরাহের জন্য গতবছর ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার সাথে প্রথমে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ওই স্মারক অনুসারে ডিসেম্বরে সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
চুক্তি অনুযায়ী, সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশে টিকা আনবে দেশীয় ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা। প্রতি ডোজ পাঁচ ডলার দামে বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার কথা সেরামের।
বাংলাদেশ সরকার টিকা অনুমোদন দেয়ার একমাসের মধ্যে টিকা সরবরাহ করার কথা প্রতিষ্ঠানটির। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা দেয়া শুরু হচ্ছে।
তবে রোববার সেরাম ইন্সটিটিউটের প্রধান নির্বাহীর বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো জানায়, এই মুহূর্তে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা রপ্তানি করা হবে না। প্রথমে ভারতের চাহিদা মেটানো হবে। এরপর তা অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হবে।
যদিও ভারতের এই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
এ বিষয়ে বেনারের পক্ষ থেকে ভারতীয় দূতাবাসের মূখপাত্র দেবব্রত পালের কাছে টিকা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
চুক্তি অনুযায়ী, অনুমোদনের এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা সরবরাহের করার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, এখন সময়মতো টিকা সরবরাহ না করলে তা হবে “চুক্তির বরখেলাপ।”
এই টিকা রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের টিকা পেতে বিলম্ব হতে পারে মন্তব্য করে অধ্যাপক নজরুল বলেন, “বাংলাদেশের উচিত, অন্যান্য দেশের সাথে যোগাযোগ করে টিকার ব্যবস্থা করা, যেন ভারতীয় কোম্পানিটি যে একচেটিয়া বাজার করতে না পারে।”
সময়মতো টিকা পাওয়ার আশা
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাস টিকা রপ্তানির ওপর ভারত সরকারের কড়াকড়ি আরোপের বিষয় জানার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে সোমবার বেনারকে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
“এই কড়াকড়ি আমরা আশা করিনি,” মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা ছিল জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে করোনা টিকা পাব। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় সুস্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না আমরা কবে টিকা পাব।”
“আশা রাখি আমাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিকে তারা সম্মান করবে। সময়মতোই টিকা আসবে,” বলেন তিনি।
এদিকে ভারত থেকে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে কোনো অনিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন।
“চুক্তি অনুযায়ীই সেরাম বাংলাদেশকে টিকা দেবে,” জানিয়ে সোমবার রাতে গুলশান বাসভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “কারণ, আমাদের মধ্যে চুক্তি হয়ে গেছে। ওই চুক্তিতে স্পষ্ট বলা আছে, আমাদের দেশে অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে তারা টিকা পাঠাবে।”
আরেক চীনা কোম্পানির টিকা ট্রায়ালের প্রস্তাব
সিনোভ্যাকের পর দ্বিতীয় চীনা কোম্পানি আনহুই জিফেই লংকম বায়োফার্মাসিউটিক্যাল বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকার তৃতীয় ধাপ ট্রায়ালের প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বেনারকে বলেন, “ছয়দিন আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের সাথে আমার একটি ভার্চুয়াল সভা হয়। ওই সভায় তিনি আমাকে জানান যে আরেকটি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ার করতে চায়।”
তিনি বলেন, “ওই কোম্পানির প্রস্তাবসহ তারা কোথায় কোথায় ট্রায়াল পরিচালনা করেছে সেসব তথ্য আমাদের কাছে পাঠাতে বলেছি। যাতে আমরা সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পারি।”
চীনা ওই কোম্পানির প্রস্তাবের ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক বলেও জানান মন্ত্রী।
এর আগে চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের জন্য আবেদন করলে সরকার তা অনুমোদন করে।
তবে অনুমোদন বিলম্বিত হওয়ায় কথা উল্লেখ করে ট্রায়ালের জন্য সরকারের কাছে অর্থ চায় সিনোভ্যাক। সরকার সেই প্রস্তাব নাকচ করায় সেই ট্রায়াল আর হয়নি।