বাংলাদেশে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে
2021.01.11
ঢাকা
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আগামী ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে ৫০ লাখ টিকা দেশে আসছে নিশ্চিত করে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
জরুরি ব্যবহারের জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার চার দিনের মাথায় এই ঘোষণা এলো।
মহাপরিচালক বলেন, “সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া ধাপে ধাপে বাংলাদেশে মোট তিন কোটি টিকা রপ্তানি করবে। কোনো ট্রায়াল ছাড়াই প্রথম ধাপে আসা ৫০ লাখ টিকাই মানুষকে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে করোনার সম্মুখযোদ্ধা এবং বয়োজ্যেষ্ঠরা অগ্রাধিকার পাবেন।
তিনি জানান, সরকারি মোবাইল অ্যাপ সুরক্ষার মাধ্যমে নিবন্ধন করে এই টিকা দেয়া হবে। ২৬ জানুয়ারি থেকে অ্যাপে নিবন্ধন শুরু হবে।
“ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে,” জানিয়ে অধ্যাপক আবুল বাসার বলেন, “নির্দিষ্ট দিনে যারা টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন, শুধু তাঁরাই টিকা কেন্দ্রে যাবেন। জনসমাগম হলে আমাদের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।”
বাংলাদেশে এই টিকার কোনো ট্রায়ালের প্রয়োজন হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম টিকা দেয়ার আট থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় টিকা নিতে হবে।
ব্রিটিশ টিকা অনুমোদন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন পাওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকা টিকা ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে কোনো ট্রায়ালের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক মোস্তাক হোসেন।
তিনি বেনারকে বলেন, “আমাদের আইন অনুযায়ী বৃটেনসহ উন্নত সাত দেশের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকলে আর ট্রায়ালের প্রয়োজন হয় না।”
এদিকে যুক্তরাজ্য থেকে ফাইজারের কিছু টিকাও বাংলাদেশে আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বেনারকে বলেন, “টিকা আনতে বেসরকারি খাতকে অনুমতি দেয়া হবে। বেসরকারিভাবে টিকা তাদের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে।”
এছাড়া দ্বিতীয় চীনা কোম্পানি করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল বাংলাদেশে করতে প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
কোম্পানিটি বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএমআরসি যদি কোম্পানিটিকে ট্রায়ালের জন্য নৈতিকভাবে অনুমতি দেয়, তারপর তাদের কাগজপত্র দেখে সরকার চূড়ান্ত অনুমতি দেবে।
“আমরা ট্রায়ালের ব্যাপারে ইতিবাচক,” বলেন মন্ত্রী।
টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন যারা
সংবাদ সম্মেলনে টিকাদান কর্মসূচির বিস্তারিত উপস্থাপন করেন টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি বলেন, টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে করোনাকালের সম্মুখযোদ্ধা এবং ৭০ বছরের বেশি ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
“প্রথমে সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেয়া হবে। এরপর নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা পাবেন,” বলেন অধ্যাপক শামসুল হক।
এরপর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ফ্রন্টলাইন কর্মী, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর যারা ফ্রন্টলাইনে আছেন তাঁরা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ ও সাংবাদিকরা ধাপে ধাপে টিকা পাবেন বলে জানান তিনি।
“টিকা আসার প্রথম দুই মাসের মধ্যেই ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সের সবাইকে টিকা দিয়ে দেয়া হবে,” জানিয়ে শামসুল হক বলেন, ১৮ বছরের নিচে এবং গর্ভবতী নারীদের প্রথম পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে না।
২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ১৮ মার্চ করোনাক্রান্ত প্রথম ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত বাংলাদেশে কমপক্ষে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৩০২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন সাত হাজার ৮০৩ জন।
গতবছর ৫ নভেম্বর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা কিনতে সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ওই স্মারক অনুসারে ডিসেম্বরে সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার সাথে চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চুক্তি অনুযায়ী, ডোজপ্রতি পাঁচ ডলার দামে সেরামের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশে আনবে বেক্সিমকো ফার্মা।
বাংলাদেশ সরকার টিকা অনুমোদন দেয়ার একমাসের মধ্যে টিকা সরবরাহের কথা। তবে সম্প্রতি সেরাম ইন্সটিটিউটের প্রধান নির্বাহীকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সেরাম ইন্সটিটিউট ভারতের চাহিদা মেটানোর আগে টিকা রপ্তানি করতে পারবে না।
এই খবরে বাংলাদেশে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরে এক টুইট বার্তায় সেরামের প্রধান নির্বাহী জানান, তাঁরা টিকা রপ্তানিতে ভারত সরকারের অনুমোদন পেয়েছেন।