উপহার হিসেবে ভারত থেকে আসছে করোনাভাইরাসের ২০ লাখ টিকা

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.01.19
ঢাকা
উপহার হিসেবে ভারত থেকে আসছে করোনাভাইরাসের ২০ লাখ টিকা ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য এক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী। ২৬ জুন ২০২০।
[বেনারনিউজ]

ভারত থেকে উপহার হিসেবে বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের ২০ লাখ টিকা আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বাংলাদেশে এটিই হবে এই টিকার প্রথম চালান।

বিমানযোগে ওই টিকা ঢাকা আসছে জানিয়ে মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বেনারকে বলেন, “যদি সব ঠিক থাকে তাহলে বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে। আমি বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে এই টিকা গ্রহণ করব।”

এছাড়া বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে ২৫ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার তৈরি টিকার চালান ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউট পাঠানো শুরু করবে বলেও জানান তিনি।

প্রথম পর্যায়ে ওই টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাঠাবে ভারত। এরপর ক্রমান্বয়ে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা আসবে। 

তবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা কবে আসছে তা জানতে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্র দেবব্রত পালের সাথে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে সারা দেশে করোনাভাইরাস টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যম কর্মীসহ অন্যরা অগ্রাধিকার পাবেন।

প্রথম দিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ‘সুরক্ষা’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নাম নিবন্ধন করে নির্দিষ্ট দিনে টিকা কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে হবে।

ঢাকা শহরে ৩০০ টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সারা দেশে টিকা দিতে ৪২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত করা হচ্ছে। 

সরকারের কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর সব জেলায় একসঙ্গে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ।

“প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের কিছু টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এক সপ্তাহ পর সব জেলায় শুরু করা হবে,” বলেন মহাপরিচালক।

তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আমি টিকা নিতে চাই। কিন্তু ভারতে টিকা নেয়ার পর সমস্যা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। আমাদের দেশে যে টিকা আসছে সেটিও ভারত থেকে আসছে। তাই, আমি কিছুটা পর্যবেক্ষণ করে পরে টিকা নেব। প্রথমেই টিকা নেব না।”

প্রসঙ্গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে করোনাভাইরাস টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে টিকা দেবার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 

গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিকা সম্পর্কে যেসব খবর পরিবেশন করা হচ্ছে, সেগুলোর সবগুলো ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন।

তাঁর মতে, এই সংবাদগুলোর কিছু নেতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে।

“প্রত্যেক টিকার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে,” মন্তব্য করে তিনি বেনারকে বলেন, এর পরিমাণ খুবই নগণ্য।

“প্রতি এক লাখে মাত্র একজন মানুষ টিকা নেয়ার পর মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে,” বলেন মোশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, “মানুষ যখন দেখবে যে টিকা দেয়ার পর কোনো সমস্যা হচ্ছে না তখন সবার ভয় কেটে যাবে। মানুষ টিকা নিতে আসবে।” 

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো টিকার চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়াল হয়নি। 

চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক প্রথমবারের মতো গত বছর মার্চ মাসে বাংলাদেশে টিকার তৃতীয় ও শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি চায়। সরকার অনুমতি দিলেও ট্রায়ালের খরচ বহনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ থেকে চলে যায় সিনোভ্যাক। 

এরপর যুক্তরাজ্য-সুইডেনের যৌথ উদ্যোগে প্রস্তুত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা বাংলাদেশে সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ভারত। 

ওই টিকা আনতে গত বছর নভেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো লিমিটেড ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই করে। পরের মাসে সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি করে সরকার।

চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ টিকা পাঠাবে সিরাম ইন্সটিটিউট। প্রতিষ্ঠানটি বেক্সিমকো ফার্মার কাছে করোনাভাইরাস টিকা পাঠাবে। বেক্সিমকো পরে তা সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে। 

এদিকে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড করোনাভাইরাসের টিকা প্রস্তুত করেছে। তারা এই টিকার তৃতীয় ও শেষ ধাপের ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের কাছে আবেদন করেছে বলে বেনারকে জানান কাউন্সিলের পরিচালক মাহমুদ উজ জাহান।

তবে এখনও তাদের অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি। 

আরেক প্রতিষ্ঠান চীনা আনুহি জিফাই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি চেয়েছে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের কাছে। তারাও এখন পর্যন্ত অনুমতি পায়নি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ২৯ হাজার ৩১ জন, মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ৯৪২ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন নয় কোটি ৫৯ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ২০ লাখ ৫০ হাজারের বেশি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।