বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু, সর্বপ্রথম নিলেন একজন নার্স
2021.01.27
ঢাকা
একজন নার্সকে দিয়ে বুধবার বাংলাদেশে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এই টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে বুধবার বিকেলে ভার্চুয়ালি এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। দেশে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসের টিকা নেন সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। তাঁর বাড়ি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায়।
হাসপাতাল থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো।
টিকা নেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী রুনুর উদ্দেশ্যে বলেন, “ভয় লাগছে?”
উত্তরে রুনু বলেন, “একদম না।”
ওই সেবিকার পর একে একে টিকা নেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশ মো. দিদারুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরান হামিদ।
করোনাভাইরাস টিকা নেয়ার জন্য তাঁদের প্রত্যেককে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
ডা. নাসিমা সুলতানার ভাই ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বেনারকে বলেন, “করোনাভাইরাস টিকা নেয়ার পর আমার বোনের সাথে কথা হয়েছে। সে ভালো আছে। শারীরিক কোনো সমস্যা নেই।”
বুধবার শুরু হওয়া টিকাটি যুক্তরাজ্য-সুইডেনের যৌথ প্রয়াসে প্রস্তুত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার ওষুধ। যুক্তরাজ্যের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে এই টিকার বাজারজাতকরণসহ অন্যান্য বিষয়গুলো দেখছে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া।
পর্যায়ক্রমে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
গত বছর নভেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা এবং ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে করোনাভাইরাসের টিকা কেনার জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরের মাসে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা কিনতে বেক্সিমকো ফার্মা এবং ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শর্ত অনুযায়ী, আগামী জুনের মধ্যে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে মোট তিন কোটি টিকা সরবরাহ করবে সেরাম ইন্সটিটিউট, যার মধ্যে ২৫ জানুয়ারি বেক্সিমকোর মাধ্যমে প্রথম চালানে বাংলাদেশে এসেছে ৫০ লাখ ডোজ। এর আগে ২১ জানুয়ারি উপহার হিসাবে বাংলাদেশকে ২০ লাখ টিকা দেয় ভারত সরকার।
প্রতি জনকে দুই ডোজ করে বর্তমান মজুত ও আগামী জুনের মধ্যে ভারত থেকে আসা টিকা দিয়ে “এক কোটি ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া যাবে,” বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এছাড়া জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আওতায় কোভ্যাক্স’র মাধ্যমে বাংলাদেশ ছয় কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে বলে বুধবার জাতীয় সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কোভ্যাক্সের টিকা মে মাস নাগাদ আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “পর্যায়ক্রমে আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিককে টিকা দিতে চাই। সে কারণে নিরাপদ টিকা সংগ্রহ করতে আমরা সকল উৎস নিয়ে কাজ করছি।”
করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরুর ঘটনাকে “একটি ঐতিহাসিক দিন,” বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
তবে বাংলাদেশের আরো অনেক টিকার প্রয়োজন হবে জানিয়ে তিনি বলেন টিকাপ্রাপ্তির জন্য “যত উৎস আছে সবগুলোতে চেষ্টা করতে হবে।”
“বিশ্বের উন্নত দেশগুলো আগাম টাকা দিয়ে টিকা বুক করে নিচ্ছে। তাই, করোনাভাইরাসের টিকা পেতে বাংলাদেশকে আরও কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে হবে,” বলেন অধ্যাপক নজরুল।
“বিশ্বে করোনাভাইরাস টিকার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে,” স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমেরিকা, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের যারা করোনাভাইরাস টিকা উৎপাদন করে তাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
“টিকা প্রাপ্তির ব্যাপারে আমরা খুবই আন্তরিক ও আশাবাদী” বলেন মন্ত্রী।
ভারতকে দুষছে চীন
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ও শেষ ধাপের ট্রায়াল পরিচালনা করার জন্য গত বছরের মাঝামাঝি সরকারের কাছে আবেদন করেছিল চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক। সরকার সেই অনুমতি দিলেও ট্রায়াল পরিচালনার জন্য টাকা দাবি করে সিনোভ্যাক। সরকার সেই অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাংলাদেশে ট্রায়ালের প্রস্তাব থেকে সরে আসে তারা।
এরপর ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা কেনার প্রস্তাব আসে। বাংলাদেশ সরকার এই প্রস্তাবে সম্মতি দেয়।
কিন্তু বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের ট্রায়াল না হওয়ার পেছনে ভারত সরকারের হাত রয়েছে বলে গত ২৬ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করে চীনা সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার যেসকল দেশে ভারতের প্রভাব রয়েছে সেখানে তারা চীনের সাথে সহযোগিতামূলক কাজ করতে দিচ্ছে না। প্রতিবেদনটি বলছে, ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় একচেটিয়া টিকার বাজার রক্ষা করতে এই কাজ করছে।
এদিকে দেশীয় কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক, চীনা কোম্পানি আনুহই জিফেই এবং ভারত বায়োটেক বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ও শেষ ধাপের ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের কাছে আবেদন করেছে।
তবে তাদের এখনও সেই অনুমতি দেয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৪ জন, মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৭২ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন দশ কোটি ৫ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ২১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি।