করোনাভাইরাস: নয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম মৃত্যু

জেসমিন পাপড়ি
2021.01.29
ঢাকা
করোনাভাইরাস: নয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম মৃত্যু ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে করোনাভাইরাসের টিকা নিচ্ছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ২৮ জানুয়ারি ২০২১।
[বেনারনিউজ]

গত নয় মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে সবচে কম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের ভীতি কাটাতে করোনার টিকা নিয়েছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। 

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহের পর সবচেয়ে কম বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

এদিকে সংসদ ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের মধ্যে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বৃহস্পতিবার টিকা নেবার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “একটি গোষ্ঠী টিকা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের জবাব দিতেই আমি ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছি।” 

একই দিন টিকা নেবার পর স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, “ভ্যাকসিন গ্রহণের ২০ মিনিটের মধ্যেই আমি স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করেছি। কোনো অসুবিধা হয়নি।” 

বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, তথ্য সচিব খাজা মিয়া ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। 

“সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নিচ্ছেন, এটা ইতিবাচকভাবে দেখার বিষয়,” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।

তবে তাঁর মতে, “শুধু মন্ত্রী-সচিবেরাই নন, যদি পরিকল্পনা করে প্রত্যেক পেশার পরিচিতজনদের টিকা দেওয়া হতো, তাহলে সাধারণ মানুষ আরো আগ্রহী হয়ে উঠত।” 

“করোনার টিকা সম্পর্কে মানুষ কম জানে। যেখানে জানা কম থাকে সেখানে দ্বিধা, ভয় থাকে। তবে কিছু লোক যখন নিচ্ছে, তখন বাকিরা উৎসাহিত হবে,” বলেন ডা. লেলিন। 

“যখন শুনেছি এই টিকা নিলে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই টিকা আমি নেবো না,” জানিয়ে ঢাকার মুগদাপাড়ার বাসিন্দা ইমরান আহমেদ বেনারকে বলেন, “এখন দেখছি মন্ত্রী–সচিবেরা টিকা নিচ্ছেন এবং তাঁরা ভালো আছেন। এখন মনে হচ্ছে টিকা পেলে আমিও নেব।” 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনের পর রাজধানীর পাঁচটি সরকারি হাসপাতালে প্রথম দুই দিনে মোট টিকা নিয়েছেন ৫৪১ জন। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের টিকা গ্রহণকারীদের সপ্তাহখানেক পর্যবেক্ষণের পর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। 

নয় মাসে সবচেয়ে কম মৃত্যু 

শুক্রবার বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর চেয়ে কম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল বছরের ৬ মে, ওই দিন এই রোগে মারা গিয়েছিলেন ৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৪০৭ জন, মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৯৪ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন দশ কোটি ১৭ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ২১ লাখ ৯৮ হাজারের বেশি। 

পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসির ফল শনিবার

করোনা মহামারিতে বাতিল হওয়া উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের ফল আগামী শনিবার প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।

গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়, বাতিল হয় পরীক্ষাও।

ফলে সরকারি সিদ্ধান্ত মতে, পরীক্ষা ছাড়াই অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত এ ফলের অপেক্ষায় আছে দেশের প্রায় পৌনে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী।

এদিকে করোনা সংক্রমণ এড়াতে কওমি মাদ্রাসা ছাড়া দেশের বাকি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান ছুটি ৩০ জানুয়ারি শেষ হবার কথা ছিল। 

মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই ক্ষতি পোষাতে টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইনের মাধ্যমে দূরশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণামতে, বাস্তবে ৬৯ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষায় ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারেনি।

গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়, ৭৬ শতাংশ অভিভাবক দ্রুত স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। ৬২ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করা দরকার। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে সারা দেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

এর মধ্যে প্রাথমিকে প্রায় পৌনে দুই কোটি, মাধ্যমিক পর্যায়ে এক কোটির কিছু বেশি ও কলেজে পর্যায়ে প্রায় অর্ধকোটি শিক্ষার্থী রয়েছেন। বাকিরা রয়েছেন উচ্চশিক্ষা, মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যমসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।