করোনাভাইরাস ঠেকাতে এবার আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.03.13
ঢাকা
200313_COVID-19-Bangla_1000.jpg জুম্মার নামাজের আগে ঢাকার বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এক শিশুকে মুখোশ পরিয়ে দিচ্ছেন একজন অভিবাবক। ১৩ মার্চ ২০২০।
[ফোকাস বাংলা]

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এবার আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকার। বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে যারা বাংলাদেশে ফিরেছেন তাঁরা সরকারের পরামর্শ মেনে স্বেচ্ছায় সঙ্গনিরোধে যাচ্ছেন না।

আর এমন হলে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনে সংক্রমণ রোগ আইন প্রয়োগ করা হতে পারে বলে শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রোগতত্ব ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে না ফেরার পরামর্শ দেওয়ার পরদিনই এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো।

এ উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুক্রবার সংবাদপত্রে এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, ২০১৮ সালের সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি দেশে সংক্রমণ রোগের বিস্তার ঘটালে তাঁর দুই থেকে তিন মাস কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে যারা দেশে ফিরেছেন, তাঁদের স্বেচ্ছায় ১৪ দিন ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী বলেন, “আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখছি তাঁরা কোয়ারেইন্টাইনে থাকছেন না। আমরা অনুরোধ করেছি এতদিন। সরকারের সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ তাঁরা মানছেন না। সেক্ষেত্রে আমরা সংক্রামক রোগ আইন প্রয়োগ করতে পারি। কিন্তু আমরা শক্ত পদক্ষেপে যেতে চাই না।”

চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কয়েকমাস পর গত রোববার বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার কথা জানায় রোগতত্ব বিভাগ। ওই তিনজনের দুজনই ইতালি থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন।

ডা. মীরজাদী বলেন, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত দুই রোগী সুস্থ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বাড়ি ফিরেছেন। আরেকজন সুস্থ হলেও বাড়ি যাননি। কারণ তাঁর পরিবারের একজন অসুস্থ এবং বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা সবাই কোয়ারেন্টাইনে আছেন। সেজন্য তাঁকে হাসপাতালেই রাখা হয়েছে।

আক্রান্ত তৃতীয়জনের রিপোর্ট এখনও পজিটিভ আসেনি বলে জানান ডা. মীরজাদী।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। সন্দেহ হলে, চিকিৎসা অথবা সঙ্গনিরোধের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার একজন এবং শুক্রবার আরেক সন্দেভাজন যাত্রীকে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভা শেষে বর্তমান অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে না ফেরার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, দেশে ফিরলে কমপক্ষে ১৪ দিন স্বেচ্ছায় সঙ্গনিরোধে থাকতে হবে।

শুক্রবার প্রথমবারের মতো সরকারের পক্ষ থেকে সংক্রমণ রোগ আইন প্রয়োগের কথা বলা হলো।

ভারত থেকে আসছেন চীনফেরত ২৩ জন

দিল্লিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস কবলিত চীনের উহান শহর থেকে যে ২৩ বাংলাদেশি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ১৪ দিন সঙ্গনিরোধে ছিলেন তাঁরা শনিবার বাংলাদেশে ফিরছেন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কয়েকজন ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে তাঁদের উহান থেকে ভারতে নিয়ে আসে। তাঁদের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সার্ক সদস্য দেশের নেতাদের একজোট হবার সুপারিশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার টুইটের মাধ্যমে এই প্রস্তাব দেন তিনি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সার্ক সদস্যদেশের নেতারা উপযুক্ত কৌশল তৈরি করুন।

মোদি বলেন, নিজের দেশের নাগরিকদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় আমরা সবাই তা ভিডিও কনফারেন্সিং মাধ্যমে আলোচনা করতে পারি। সবাই মিলে একজোট হয়ে পৃথিবীকে সুস্থ ও নীরোগ রাখার প্রচেষ্টায় আমরা বিশ্বে একটা নজির সৃষ্টি করতে পারি।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মোদির এই প্রস্তাবকে সমর্থন করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর বাসায় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশের সঙ্গে আলোচনা শেষে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ছাড়া এ প্রস্তাবে সার্কের সব দেশ সমর্থন জানিয়েছে। বাংলাদেশ এতে নীতিগতভাবে সমর্থন জানিয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই ভিডিও কনফারেন্সের কথা রয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।