করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.03.19
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
200319_Coronavirus-Bangla_1000.jpg গত দুই সপ্তায় বিভিন্ন দেশ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ফিরেছেন প্রায় নয় হাজার প্রবাসী। করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে করণীয় সম্পর্কে তাঁদেরকে সচেতন করতে বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন করছেন জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। ১৯ মার্চ ২০২০।
[ফোকাস বাংলা]

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে ওয়াজ-মাহফিল, তীর্থ যাত্রাসহ সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পর শিবচর উপজেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার লাভের পর যেসব যাত্রী ইতালি থেকে বাংলাদেশ এসেছেন তাঁদের অধিকাংশেরই বাড়ি শিবচরে। দেশে শিবচরই প্রথম এলাকা যেটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় অবরুদ্ধ করা হলো।

এদিকে বিদেশফেরত সকল যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকে বাধ্যতামূলকভাবে কমপক্ষে ১৪ দিনের সঙ্গনিরোধের (কোয়ারেন্টাইন) ব্যবস্থা করতে হবে বলে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, বিদেশফেরত যাত্রীদের সঙ্গনিরোধ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিমানবন্দর সংলগ্ন হাজী ক্যাম্প এবং উত্তরার দিয়াবাড়ি (সেক্টর-১৮) সংলগ্ন রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দুইটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।

সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম থেকে জনগণকে দূরে থাকার অনুরোধ জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব বিভাগ। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়।

তবে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে বিশেষ দোয়ার জন্য মঙ্গলবার কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশ হয় লক্ষ্মীপুর জেলায়। স্থানীয় এক ধর্মীয় নেতা এই সমাবেশের আয়োজন করেন।

লক্ষ্মীপুরের বিশাল সমাবেশের একদিন পর সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে এমন আদেশ এলো। এ ধরনের জমায়েত নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যৌথভাবে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

ওই ভিডিও কনফারেন্স থেকেই সকল ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বেনারকে জানান, বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা নিয়ে আতঙ্ক ঠেকাতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে প্রচার বাড়াতে হবে।

এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃহস্পতিবার আরও তিন ব্যক্তি নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে নিশ্চিত করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা ১৭ বলে তিনি জানান।

মহাপরিচালক বলেন, নতুন করে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে একজন নারী, দুজন পুরুষ। তাঁরা সবাই ইতালি ফেরত এক প্রবাসীর পরিবারের সদস্য।

তিনি বলেন, নতুন করে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।

এ পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে মারা গেছেন এক জন।

গত ডিসেম্বরের শেষে চীন থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব মতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার ১১৯ জন। আর মারা গেছেন নয় হাজার ৮১৯ জন।

অধিকাংশ ইতালি ফেরত

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বেনারকে বলেন, ইতালিতে করোনাভাইরাস বিস্তারের পর থেকে মাদারীপুরে যত প্রবাসী এসেছেন তাঁদের বেশির ভাগের বাড়ি শিবচরে।

তিনি বলেন,“তাঁরা সরকারের কোয়ারান্টাইন নীতি মানছেন না। সেকারণেই আজ বৃহস্পতিবার থেকে শিবচর সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। লকডাউন চলাকালে ওই এলাকায় কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। আবার কেউ বেরও হতে পারবেন না। সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। শুধু জরুরি সেবা অব্যাহত থাকবে।”

“ওষুধ, কাঁচামাল, মুদি দোকান, জরুরি সেবা বাদে সব দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ থাকবে,” বলেন ওয়াহিদুল ইসলাম।

তিনি জানান, জেলায় ২২০ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন, হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে আছেন একজন, আইসোলেশনে আছেন চারজন। এ ছাড়া ১৩৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বিদেশ ফেরতদের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর

দেশে করোনাভাইরাস ঠেকাতে সরকারের করণীয় বিষয়ে অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দের করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি করেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

আদালতের অ্যামিকাস কিউরি খন্দকার রেজা-ই-রাব্বী সাংবাদিকদের জানান, বিদেশ ফেরত সকল যাত্রীকে বিমানবন্দরে আগমনের পর বাধ্যতামূলক সঙ্গনিরোধের জন্য তাঁদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে তুলে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি মজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

এর ধারাবাহিকতায় বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় দ্বারা নির্বাচিত ব্যক্তিদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানায় আইএসপিআর।

“হস্তান্তরের পর সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ সকল যাত্রীদের বিমানবন্দর হতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে স্থানান্তর, ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম সম্পন্ন, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকাকালীন সময়ে আহার, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে,” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

সম্প্রতি যারা দেশে এসেছেন বিমানের দেয়া তালিকা থেকে তাঁদের খুঁজে বের করা হবে বলেও সাংবাদিকদের জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

ওই তালিকা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার বিদেশ ফেরত যাত্রীদের সবাইকে কোয়ারান্টাইনে রাখবে। এবং এটি দেশের স্বার্থেই করা হবে।”

নির্বাচন স্থগিতের দাবি

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের স্বার্থে পাঁচ উপনির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আদালতের কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।

নির্বাচন কমিশন করোনাভাইরাস বিস্তার সত্ত্বেও ঢাকা, গাইবান্ধা ও বাগেরহাটে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেয়ার পর মির্জা ফখরুল এই আহ্বান জানান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।