বাংলাদেশ ও ভারতে খোলা মাঠে ঈদের জামাত হচ্ছে না

কামরান রেজা চৌধুরী ও সুনীল বড়ুয়া
2020.05.15
ঢাকা ও কক্সবাজার
200515_Rohingya_Corona-Bangla_1000.jpg করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ১৫ মে ২০২০।
[ফোকাস বাংলা]

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতে এবার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। দুই দেশের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর ফলে ভারতের কলকাতার রেড রোডে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে বৃহস্পতিবার শনাক্ত হন রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রথম করোনা রোগী। শুক্রবার আক্রান্ত হয়েছেন আরো দুই রোহিঙ্গা।

“আক্রান্তদের একজন নারী, তাঁর বয়স ৪২ বছর। অপরজনের বয়স ৩০,” বেনারকে জানান কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু মোহাম্মদ তোহা।

“আক্রান্ত দুইজনকে ক্যাম্পের ভিতরে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের আইসোলেসান সেন্টারে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে,” বেনারকে জানান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার।

“আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেসব এলাকায় বসবাস করেন সেই এলাকাটিও যথারীতি লকডাউন করা হবে,” বলেন তিনি।

ক্যাম্পে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্যাম্পে নানা ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান শরণার্থী কমিশনার।

তিনি বলেন, “প্রায় ১৯০০ শয্যার আইসোলেসান সেন্টার তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ শয্যার কাজ শেষ হয়েছে।”

রোহিঙ্গাদের ১২৭৫ ঘর লকডাউন

ডা. আবু মোহাম্মদ তোহা জানান, বৃহস্পতিবার যে রোহিঙ্গার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, তিনি উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া শিবিরের এফ ব্লকের বাসিন্দা। আক্রান্তের পর ওই ব্লকের রোহিঙ্গাদের ১২৭৫টি ঘর লকডাউন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, লকডাউন করা এই ব্লকের কোনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে বের হতে পারবেন না। নতুন আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও একইরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া বেনারকে জানান, শুক্রবার শনাক্ত হওয়া ২১ জনসহ কক্সবাজার জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১৫২। এদের মধ্যে তিনজন রোহিঙ্গা শরণার্থী।

ভাসানচর প্রসঙ্গে ফরটিফাই রাটস

রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বর্তমান সঙ্গনিরোধ সুবিধা ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকর সংস্থা ফরটিফাই রাইটস।

একই সাথে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, বঙ্গোপসাগরের মুখে ভাসানচরে সরকার কমপক্ষে ৩০০ রোহিঙ্গাকে সঙ্গনিরোধ করে রেখেছে।

সংস্থাটির মতে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। রোহিঙ্গাদের মাঝে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফরটিফাই রাইটস।

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে সম্প্রতি কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দুই দফায় ফিরে আসা ৩০০ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে সরকার কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে না নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে পাঠায়।

কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থান্তান্তরের জন্য বঙ্গপোসাগরের দ্বীপ ভাসানচরে আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করে সরকার। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির কারণে সেখানে কোনো রোহিঙ্গাকে এর আগে পাঠানো সম্ভব হয়নি।

দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা শুক্রবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১,২০২ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ১৫ জন যাদের মধ্যে আটজন নারী ও সাত জন পুরুষ।

সব মিলিয়ে গত ৮ মার্চ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৬৫। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তারিখ হতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে মারা গেলেন ২৯৮ জন।

শোলাকিয়াসহ কোথাও ঈদ জামাত হবে না

ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের সবচেয়ে বড়ো ঈদ জামাতের স্থান শোলাকিয়া ময়দানসহ কোনো ঈদগাহে এবার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শোলাকিয়ায় প্রতি বছর ঈদের জামাতে তিন লাখের বেশি নামাজি অংশগ্রহণ করেন।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এবার ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে না বলে বেনারকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।

নিজ নিজ এলাকার মসজিদে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে বেনারকে জানান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকালে দেশের আলেম ওলামাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, মহামারিতে ঈদের নামাজ আদায় না করলে অসুবিধা নেই। তাঁরা বিষয়টি বুঝেছেন।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা আরও অনুরোধ করেছি যে, এবার ঈদে আমরা কোলাকুলি করব না।”

পশ্চিমবঙ্গে হবে না ঈদের জামাত

লকডাউন থাকায় কলকাতার রেড রোডে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম ঈদের জামাত এ বছর হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে রেড রোডে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে ঈদের নামাজ আদায় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুক্রবার বেনারকে জানান ঈদের নামাজের আয়োজক খিলাফত কমিটির কলকাতা শাখার সম্পাদক সৈয়দ মহম্মদ সাঈদ।

তিনি বলেন, “কমিটির সকলেই একমত হয়েছেন যে, নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

প্রতি বছর রেড রোডের ঈদের নামাজে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের তিন থেকে চার লাখ মানুষ সমবেত হয়ে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যোগ দেন।

রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি আব্দুল গনি বলেন, “রাজ্যের প্রায় ৪০ হাজার মসজিদে ওয়াকফ বোর্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশ পাঠিয়ে ঈদগায় নামাজ না পড়তে অনুরোধ করা হয়েছে।”

রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে শুক্রবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৩৭৭ জনে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৩।

ভারত সরকারের স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলা হয়েছে, এদিন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৯৭০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৬৪৯ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ লাখ ৮ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন তিন লাখ পাঁচ হাজারের বেশি।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কলকাতা থেকে পরিতোষ পাল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।