করোনায় একদিনে মৃত্যু ও আক্রান্তের রেকর্ড, মহামারির মধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’

কামরান রেজা চৌধুরী ও সুনীল বড়ুয়া
2020.05.18
ঢাকা ও কক্সবাজার
200518_Covid-Rohingya_1000.JPG করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্বকে অবহেলা করেই ঢাকার মালিবাগ এলাকার রাস্তায় মানুষের ভিড়। ১৮ মে ২০২০।
[বেনারনিউজ]

দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু—দুই দিক থেকেই নতুন রেকর্ড হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায়। এই মহামারির মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ যা মঙ্গলবার অথবা বুধবার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান, রোববার সকাল আটটা থেকে সোমবার সকাল আটটার মধ্যে মারা গেছেন ২১ জন। এটি করোনাভাইরাসে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।

একই সময়ে ১৬০২ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন বলে জানান তিনি, যা দেশে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সংক্রমণেরও ঘটনা।

এদিকে ঈদে ঢাকা থেকে কাউকে গ্রামের বাড়ি যেতে দেয়া হবে না—পুলিশের এমন ঘোষণার পরও ঢাকা থেকে দলে দলে মানুষ ঈদ পালন করতে ছুটছেন গ্রামের বাড়িতে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও মানুষ যে, যেভাবে পারছে গ্রামে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্র ঢাকা শহর ও ঢাকা বিভাগের জেলাসমূহ। ঢাকা থেকে সংক্রমণ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে রাজধানী থেকে চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে ঢাকা থেকে ঈদের দীর্ঘ ছুটি কাটাতে রওনা হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।

মাওয়ায় ফেরিতে গাদাগাদি করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রওনা হয়েছেন ঘরমুখো মানুষ। আরিচা-দৌলদদিয়া ঘাটেও ছিল গাদাগাদি অবস্থা।

মালামাল পরিবহনের গাড়িতে করে ভ্রমণ করেছেন উত্তরাঞ্চলগামী মানুষেরা। তবে পুলিশের কঠোর তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।

মাল গাড়িতে চড়ে গাইবান্ধায় গেছেন মিরপুর পল্লবী এলাকার রিকশা চালক মো. হাসেম। তিনি টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “ঈদে সাতদিন ছুটি। ঢাকা থেকে করব কী? দোকানপাট খোলার পর কয়দিন ভালো আয় হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে থাকব। ঢাকায় থাকলে তো মরতে হবে।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বেনারকে বলেন, “আমি বারবার বলছি, আমাদের ঘরে থাকতে হবে, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই–ই বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “কেন যেন মানুষ তাদের নিজেদের ভালোটা বুঝতে চাচ্ছে না। এটি দুঃখজনক।

গত ১৮ মার্চ থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩৪৯ জন করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছেন। আর ৮ মার্চ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৭০।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, সোমবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ লাখ ৮২ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন তিন লাখ ১৭ হাজারের বেশি।

মোট আক্রান্ত পাঁচ রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গা শিবিরে সোমবার আরেক রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু মোহাম্মদ তোহা।

তিনি জানান, সোমবার শনাক্ত হওয়া রোহিঙ্গা ৩৩ বছরের যুবক। কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালং ৬ নম্বর ক্যাম্পের ডি ব্লকে থাকেন তিনি।

গত চারদিনে এখানে পাঁচজন রোহিঙ্গাকে করোনা আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে।

মোহাম্মদ তোহা বেনারকে বলেন, “১২ মে’র আগ পর্যন্ত ৩৬ জন রোহিঙ্গার রক্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে একজনেরও পজেটিভ পাওয়া যায়নি। গত ছয় দিনে প্রায় দুইশো জনের নমূনা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ৪২ বছর বয়সী এক নারীসহ পাঁচজনের পজেটিভ আসে।”

“এখন সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যাথা দেখা দিলেই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার বেনারকে বলেন, “আক্রান্তদের মাধ্যমে যাতে অন্য কারো শরীরে এ ভাইরাস ছড়াতে না পারে সেজন্য আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং তাঁদের সংস্পর্শে যাওয়া লোকজনকে শনাক্ত করে যত দ্রুত সম্ভব আইসোলেশনে নেওয়া হচ্ছে।”

এ ছাড়াও আক্রান্ত রোহিঙ্গারা যে ক্যাম্পে বসবাস করতেন সেখানকার প্রায় ২৫ হাজার ঘর লকডাউন করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০২ জন বলে বেনারকে জানান কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া।

ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড় আম্ফান

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই ধেয়ে আসছে সাইক্লোন আম্ফান। মঙ্গলবার অথবা বুধবার এই সাইক্লোন কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ভাসানচরে আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে বেনারকে জানান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থান্তান্তরের জন্য বঙ্গপোসাগরের দ্বীপ ভাসানচরে আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করে সরকার। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির কারণে সেখানে কোনো রোহিঙ্গাকে আগে পাঠানো সম্ভব হয়নি।

তবে সম্প্রতি অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দুই দফায় ফিরে আসা ৩০০ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে সরকার কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে না নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে পাঠায়।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রক্ষা করতে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থার সাথে সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, “ভাসানচরে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলেও সেখানে সমস্যা হবে না।”

“কারণ সেখানে কমপক্ষে ১২০টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত আছে। ভাসানচরে যে ৩০৫ জন রোহিঙ্গা আছে তাঁদের অথবা তাঁদের সেবা প্রদানকারীদের কোনো অসুবিধা হবে না,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ভাসানচর বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর একটি অন্যতম ভালো প্রকল্প। এই প্রকল্প পরিকল্পনার সময় সাইক্লোন, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে এবং সেভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।