ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলায় মৃত্যুর মামলা

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.06.04
ঢাকা
200604_Case_Against_United_Hospital-1000.jpg আগুনে পুড়ে যাওয়া ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তদন্ত করছেন সিআইডির কর্মকর্তারা। ২৮ মে ২০২০।
[নিউজরুম ফটো]

ঢাকার অভিজাত ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ রোগীর নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে নিহত এক রোগীর পরিবার।

আগুনে পুড়ে নিহত ভারনন অ্যান্থনি পলের জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান থানায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছে গুলশান থানা পুলিশ।

মামলায় বিবাদী করা হয়েছে, হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ডাক্তার, সেবিকা এবং সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে এদের পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে বলে জানিয়েছন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৭ মে রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের নবনির্মিত করোনা ইউনিটে আগুন লাগে। ওই ঘটনায় সেখানে ভর্তি পাঁচ রোগী প্রাণ হারান।

ভারনন অ্যান্থনি পলের ছেলে আন্দ্রে ডোমিনিক পল বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “আমরা মামলা করেছি। কারণ ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার বাবাসহ বাকি চার রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে।”

তিনি বলেন, “আমি পুরো ঘটনাটি দেখেছি। মূলত আগুন লেগেছিল শীতাতপ যন্ত্রের মাধ্যমে। শীতাতপ যন্ত্র থেকে আগুন হাসপাতালের বিছানায় পড়ে। সেটাকে যদি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে বন্ধ করা হতো তাহলে কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু সেটা না করে তারা মেঝে পরিস্কার করার মপ দিয়ে নিভাতে যায়। আর ওই মপে জীবাণুনাশক ছিল যেগুলো দাহ্য। ফলে আগুন বেড়ে যায়। এরপর কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের অক্সিজেন লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে।”

ডোমিনিক পল বলেন, “হাসপাতাল যে করোনা ইউনিট নির্মাণ করেছিল, সেটি ছিল একটি ব্যাডমিন্টন খেলার জায়গা। সেখানে দাহ্য পদার্থ দিয়ে একটি হাসপাতাল বানানো হয়েছে। সেখানে একটি মাত্র দরজা ছিল। কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিল না।”

তিনি বলেন, “আগুন লাগার পর পাঁচ রোগীর কাউকে বের করে আনার চেষ্টাই তারা করেনি। এমনকি দমকল বাহিনীকে সঙ্গে সঙ্গে ডাকা হয়নি। আমরা দমকল বাহিনীকে ফোন করি। আমি মনে করি তাদের আন্তরিকতা থাকলে আমার বাবাসহ অন্য রোগীরা হয়তো বেঁচে যেতেন।”

মামলা হওয়ার কথা জেনেছেন জানিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ডা. সাগুফা আনোয়ার বেনারকে বলেন, “আমরা প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে আলাদাভাবে যোগাযোগ করেছি, তাদের বুঝিয়েছি যে এটি একটি নিছক দুর্ঘটনা।”

“আমরা মনে করি আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না,” মন্তব্য করে ডা. সাগুফা বলেন, “যেহেতু বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেহেতু আমরা বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।”

“আমরা দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল,” বলেন ডা. সাগুফা।

ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে তদন্ত করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দমকল বাহিনী।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও দমকল বাহিনীর পরিচালক (পরিচালন) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বেনারকে বলেন, “আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করেছি। এরপর আমরা সেই বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব।”

তিনি বলেন, “পরিদর্শনের পর আমরা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করব। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।”

নিহত রোগীদের রক্ষার ব্যাপারে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জিল্লুর বলেন, “কোনো একটি ভবন নির্মাণ করতে হলে অগ্নিনিরোধ ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের কাছে যা মনে হচ্ছে তা হলো ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সেই ব্যবস্থা ছিল না। থাকলে আগুনটি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ত না।”

সমালোচকদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ ভিত্তিহীন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশসহ এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেশ কয়েকটি দেশ করোনাভাইরাস মহামারির চলাকালে তথাকথিত ‘ভুয়া সংবাদ’ দমনের নামে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলে।

এই অঞ্চলের অনেকগুলো দেশেই ভুয়া সংবাদ ও অনলাইন গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইতিমধ্যে আইন রয়েছে উল্লেখ করে বুধবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, গণ বিতর্ক ও সরকারি নীতিমালা সংক্রান্ত সমালোচনা রোধে এই আইনগুলোর প্রয়োগ করা হচ্ছে।

গত তিনমাসে বাংলাদেশে কয়েক ডজন মানুষের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘ভুয়া সংবাদ’ প্রচারের দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে অথবা তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

“স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়া, অপর্যাপ্ত সেবা ব্যবস্থা বা ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ করায় স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, কিছু স্বাস্থ্য কর্মী এবং সাধারণ জনগণের হয়রানির শিকার হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে,” বলেন মিশেল।

তিনি বলেন “কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহের সময় সংবাদকর্মী ও অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের ওপর শারীরীক হামলার ঘটনাও ঘটেছে।”

তবে এইসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

“করোনাভাইরাস ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রমের জন্য সমালোচকদের গ্রেপ্তার করার অভিযোগ মোটেও সত্য নয়,” মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করে, “শুধু সেক্ষেত্রে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়, প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে।”

“করোনা মহামারি নিয়ে সরকারের কার্যক্রমের সমালোচকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে মর্মে অভিযোগ ভিত্তিহীন,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তাঁর মতে, কিছুসংখ্যক মানুষ না জেনে ও না বুঝে এমন মিথ্য তথ্য ছড়াচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে করোনাভাইরাসে আরও ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে, নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৪২৩ জন।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৫৬৩ জনে, মারা গেছেন ৭৮১ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫ লাখ ৮১ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন তিন লাখ ৮৮ হাজারের বেশি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।