করোনাভাইরাস: পেশাজীবীদের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত পুলিশ, সর্বাধিক মৃত্যু চিকিৎসকদের
2020.07.15
ঢাকা
করোনাভাইরাস আক্রান্তের দিক থেকে বাংলাদেশে পেশাজীবী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চে রয়েছে পুলিশ। বুধবার পর্যন্ত এই বাহিনীর ১৩ হাজারের বেশি সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন।
কর্মকর্তাদের মতে, মাঠ পর্যায়ে বেশি জনসম্পৃক্ততাই পুলিশের অধিক সংখ্যায় আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। তবে এই রোগে মৃত্যুর দিক দিয়ে পেশাজীবীদের মধ্যে সর্বোচ্চে রয়েছেন চিকিৎসকরা।
বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ বিরোধী লড়াইয়ে নিহত ১৩৬ জন সম্মুখযোদ্ধা পেশাজীবীর মধ্যে রয়েছেন ৬৪ জন চিকিৎসক, ৫০ জন পুলিশ এবং ২২ জন সাংবাদিক।
“আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যে পুলিশের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ১৩ হাজার ১৩০ জন,” বেনারকে জানান পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র মো. সোহেল রানা।
এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত নয় হাজার ৬৬২ জন সুস্থ হয়েছেন জানিয়ে সোহেল রানা বলেন, “পুলিশ বাহিনীর মারা যাওয়া ৫০ জনের সবাই করোনা পজেটিভ ছিলেন।”
“পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্যরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, কারণ তাঁদের সাথে জনগণের সম্পর্ক বেশি,” বেনারকে বলেন মতিঝিল থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত।
“দিনের ২৪ ঘণ্টাই কোভিড আক্রান্তদের সাথে আমাদের যে ধরনের যোগাযোগ ছিল, তাতে ধরেই নিয়েছিলাম আজ না হয় কাল আক্রান্ত হতেই হবে,” বেনারকে বলেন করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দেওয়া ডিএমপির পল্লবী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. ফিরোজ কাউছার।
তবে মহামারি শুরুর দিকে “নিজেদের নিরাপত্তার চেয়ে দায়িত্ব পালনকে প্রাধান্য” দেওয়াও অধিক সংখ্যায় পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ ও পুলিশ বিজ্ঞান (সিপিএস) বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের মিয়া।
“আমাদের কোভিড সংক্রান্ত কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তবুও মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। তাঁদের ঘরে রাখতে শুরু থেকে আমরা মাঠে ছিলাম। যে কারণে আক্রান্তও হয়েছি বেশি,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।
“কোভিড আক্রান্ত রোগীর ঘরেও আমরা খাবার দিয়ে এসেছি, কোনো ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই,” জানিয়ে মাজহার বলেন, “তবে আমরা আগের চেয়ে সচেতন হয়েছি।”
বর্তমানে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে, দূরত্ব বজায় রেখে এবং সচেতন হয়ে কাজ করার কারণে আক্রান্তের হার কিছুটা কমে এসেছে বলে জানান তিনি।
ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের জন্য মহামারি মোকাবেলায় পুলিশের করণীয় সম্পর্কিত নিদের্শনা বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
“এটি সহজবোধ্য ভাষায় রূপান্তর করে পুলিশের সব সদস্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা প্রত্যেকে জানেন কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে,” বলেন এআইজি সোহেল।
এসওপি মেনে চলার কারণে আক্রান্তের হার কমেছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
মৃত্যুর দিকে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬৪ জন চিকিৎসক মারা গেছেন, যেকোনো পেশাজীবীদের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ।
“সম্মুখযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৪ জন চিকিৎসক মারা গেছেন কোভিড আক্রান্ত হয়ে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের উপসর্গ থাকলেও তাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি,” বেনারকে বলেন চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুলহক চৌধুরী।
বিএমএর তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯৬২ জন ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
মারা গেছেন ২২ সাংবাদিক
এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে ২২ জন সাংবাদিক মারা গেছেন বলে জানিয়েছে ‘আমাদের গণমাধ্যম – আমাদের অধিকার’ নামে সাংবাদিকদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ওই গ্রুপের সমন্বয়ক আহমেদ ফয়েজ বেনারকে জানান, ২২ জনের মধ্যে নয়জন সাংবাদিক করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
বুধবার পর্যন্ত আক্রান্ত ৬০৯ জন সাংবাদিকের মধ্যে ২৭৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানান আহমেদ ফয়েজ।
করোনায় মারা যাওয়া চিকিৎসক ও পুলিশ সদস্যদের পরিবার সরকার ঘোষিত প্রণোদনার পাশাপাশি বিভাগীয় ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সহায়তা পাবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে করোনায় মারা যাওয়া প্রত্যেক সাংবাদিকের পরিবার সরকারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে গত সপ্তাহে জানান তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আরও ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৫৭ জনে। একই সময়ে নতুন করে তিন হাজার ৫৩৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ফলে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার ৫৯০ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক কোটি ৩৪ লাখ পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন পাঁচ লাখ ৮০ হাজারের বেশি।