করোনা নিয়ন্ত্রণে অব্যাহত সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
2020.07.21
ঢাকা
করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ও অব্যাহত সমালোচনার পর অবশেষে পদত্যাগ করলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান মঙ্গলবার রাতে বেনারকে জানান, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ছিলেন।”
তবে “পদত্যাগপত্রে মহাপরিচালক কী কারণ উল্লেখ করেছেন সেব্যাপারে কিছু বলতে পারব না,” জানান স্বাস্থ্য সচিব।
এবছর মার্চ মাসে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে রোগীদের চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনায় পড়েন মহাপরিচালক অধ্যাপক আজাদ ও তাঁর অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অভিযোগ আসে, করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।
এক পর্যায়ে সরকার স্বাস্থ্য সচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিলেও স্বপদে বহাল থাকেন অধ্যাপক আজাদ।
মহামারির শুরুতে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা দেয়া ডাক্তারদের জন্য যে পিপিই সরবরাহ করা হয় তা নিম্নমানের ছিল বলে অভিযোগ করে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
সংগঠনটির হিসাবে সারাদেশে রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে পাঁচ হাজার ৮৯৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
আক্রান্তদের মধ্যে দুই হাজার ১০০ জন চিকিৎসক। প্রাণ হারিয়েছেন ৬৮ জন ডাক্তার।
“অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পুরোপুরি ব্যর্থ,” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, “ডাক্তারদের জন্য যে পিপিই দেওয়া হয়েছিল সেগুলো ছাতার কাপড় দিয়ে তৈরি ছিল।”
এছাড়া কীভাবে পিপিই পরতে হয় সে বিষয়ে ডাক্তারদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে ডা. এহতেশামুল বলেন, “আর এই কারণে আমাদের দেশে এত সংখ্যক চিকিৎসক প্রাণ হারালেন। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর ভালো পিপিই দেয়া হলো।”
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।”
তবে “যারা আমার এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমালোচনা করছেন তাঁদের একজন মহাপরিচালক হতে চেয়েছিলেন। ব্যর্থ হয়ে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছেন,” বলে গতমাসে বেনারকে জানিয়েছিলেন অধ্যাপক আজাদ।
সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল হিসেবে অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন পাওয়া রিজেন্ট হাসপাতাল এবং নমুনা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান জেকেজির প্রতারণার পর করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তারের কাজে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ্যে আসে।
রিজেন্ট হাসপাতাল রোগীদের ভুয়া করোনাভাইরাস সনদ দেয় এবং রোগীদের নমুনা সংগ্রহে জালিয়াতির আশ্রয় নেয় জেকেজি।
এর প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার হন রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জেকেজির প্রধান। বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাভাইরাস রিপোর্ট নিয়ে জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে।
মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশে ভুয়া করোনাভাইরাস সনদের ব্যবসা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ইটালির সংবাদপত্রগুলোও বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।
এই কারণে বাংলাদেশিদের ইটালি প্রবেশের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয় সেদেশের সরকার যদিও কয়েকদিন পর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে” রিজেন্ট হাসপাতালের সাথে চুক্তিটি করা হয়েছিল।
“ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে” শব্দগুলোর ব্যাখ্যা চেয়ে মহাপরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
শেষ দিনে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সচিবের কাছে নোটিশের লিখিত জবাব দেন মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।
তবে তাঁর বক্তব্য মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি বলে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়।
অধ্যাপক আজাদ ২০১৬ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর গত বছর ২৭ মার্চ দুই বছরের চুক্তিতে তাঁকে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তাঁর চুক্তির মেয়াদ ছিল।
এর আগে অধ্যাপক আজাদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পদত্যাগের পর অধ্যাপক আজাদের স্থলে “অচিরেই একজন মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেবে সরকার,” বেনারকে জানান স্বাস্থ্য সচিব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ১০ হাজার ৫১০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৭০৯ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক কোটি ৪৭ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ছয় লাখ ১১ হাজারের বেশি।