কারাগারে করোনার হানা: এখনো টিকা দেবার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই

আহম্মদ ফয়েজ
2021.08.19
ঢাকা
কারাগারে করোনার হানা: এখনো টিকা দেবার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে কারারক্ষীদের পাহারা। ১১ ডিসেম্বর ২০১৩।
[বেনারনিউজ]

দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৮০ হাজার বন্দির মধ্যে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে কমপক্ষে ১০জন মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাতশ জন। কিন্তু বন্দিদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাত’শ এবং এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে দুইজন কারাকর্মীসহ প্রায় দশজনের মৃত্যু হয়েছে।

কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৪৫০। কিন্তু এই মুহূর্তে বন্দির সংখ্যা ৮০ হাজার ২৫২। এদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ১৪ হাজার ৫৪৭ এবং বিচারাধীন বা বিচারের অপেক্ষায় আছেন ৬৫ হাজার ৭০৫জন বন্দি। 

তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত বন্দিদের মধ্যে “কতজন সাজাপ্রাপ্ত এবং কতজন বিচারাধীন তা জানা নেই,” বলে বেনারকে জানিয়েছেন সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোঃ মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া।

সর্বশেষ গত রোববার চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় আটক ও চোরাচালান মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম বন্দি অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আবদুর রহিমের করোনা শনাক্ত হওয়ায় ৩১ জুলাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে গত ১২ আগস্ট চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান উম্মে হাছিনা (৪১) নামের এক নারী বন্দি। উপসর্গ থাকায় করোনা পরীক্ষা করা হলে পরবর্তীতে জানা যায় তিনি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ছিলেন। 

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই এখনো

বন্দিদের টিকা দেবার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মোমিনুর রহমান মামুন বেনারকে বলেন, “কারাগারে বা কারা অধিদপ্তরে কর্মরতদের করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের জন্য সরকারি সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। অপরদিকে বন্দিদের টিকা প্রদানের জন্য উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।”

প্রথম ধাপে কমপক্ষে ১৪ হাজার সাজাপ্রাপ্ত বন্দি এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বন্দিদের টিকা দেবার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোঃ মোকাব্বির হোসেন বেনারকে বলেন, “টিকা প্রদানের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারাই ভালো বলতে পারবে বন্দিদের টিকা প্রদানের উদ্যোগ কবে নেয়া হবে।”

বন্দির সংখ্যা কম থাকা কিছু জেলায় স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে বন্দিদের টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানালেও কোন কোন জেলায় এবং কী পরিমাণ বন্দি এই প্রক্রিয়ায় টিকার আওতায় এসেছেন সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি মোকাব্বির।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বেনারকে বলেন, “আমরা এখনো কারাগারে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা হাতে নেইনি।”

বর্তমানে টিকার জন্য নিবন্ধন করে প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ অপেক্ষায় রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আসলে পর্যাপ্ত টিকা মজুদ থাকলে নানা পরিকল্পনা করা যায়। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকা নেই।”

“যারা বাহিরে আছেন তাঁদের মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে আমরা টিকা দিচ্ছি। যেহেতু জেলে থাকারা বন্দিই আছেন সেটা নিয়ে আমরা আপাতত বেশি চিন্তিত নই,” যোগ করেন রোবেদ আমিন।

গত ৪ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপের আঞ্চলিক অফিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা কর্মী ও বন্দিদের টিকা দেবার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়। 

টিকা পেয়েছেন চার’শ যৌনকর্মী

রাজবাড়ী জেলায় অবস্থিত দৌলতদিয়া যৌনপল্লির প্রায় চার’শ জন যৌনকর্মীকে বুধবার করোনাভাইরাসের টিকা দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশের সর্ববৃহৎ এই যৌনপল্লিতে প্রায় চার হাজার যৌনকর্মী তাঁদের পরিবারের সাথে বসবাস করেন।

দেশে মোট ১১টি বৈধ যৌনপল্লি চালু আছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হবার পর থেকেই এই পল্লির মানুষেরা চরম সংকটে পড়েন।

“যৌনপল্লির মানুষেরা সাধারণত পল্লির বাহিরে আসেন না, তাই আমরাই করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে তাদের কাছে যাই। সেখানে চারশজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে টিকা প্রদান করা হয় বুধবার,” বেনারকে বলেন রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন।

পল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে টিকা গ্রহণের উপযোগী মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র বা আনুষঙ্গিক কাগজপত্র না থাকায় তাঁদের টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি।” 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করলে বাকিদেরও টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইব্রাহিম।

দেশে বর্তমানে ২৫ বছরের বেশি বয়সীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত দেশে প্রায় ৬১ লাখ ২৯ হাজার মানুষকে করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৬ লাখ মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১০ জনের দেহে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৮৭৮ জনের।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।