করোনার কারণে প্রাথমিকের পর অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষাও বাতিল
2020.08.27
ঢাকা
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দুদিনের মাথায় বৃহস্পতিবার অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাধারণ স্কুল ও মাদ্রাসার এই পরীক্ষাগুলোতে এ বছর ৫৫ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর অংশ নেবার কথা ছিল।
করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে। বৃহস্পতিবার সেই বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত করেছে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো আবুল খায়ের পরীক্ষা না নেওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বেনারকে বলেন, “২০২০ সালের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।”
সারা দেশে প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থীর এ বছর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল। এর আগে বাতিল করা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিল ৩০ লাখেরও বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের তথ্যমতে, করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘন্টায় ৪৫ জন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ১২৭। এমন প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা হবে কি হবে না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন অভিভাবকেরা।
খুশি শিক্ষক-অভিভাবক
ঢাকার নামকরা স্কুল গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরির ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মো. সোলায়মানের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। পরীক্ষা বাতিলে সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বেনারকে বলেন, “আমি মনে করি, সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
তাঁর ছেলেরও এ বছর অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
“অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার একটা উদ্যোগ আছে, কিন্তু এই সুযোগ সবাই পাচ্ছে না,” মন্তব্য করে সোলায়মান বলেন, “সবার হাতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মুঠোফোন কিংবা বাসায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নেই। সব শিক্ষার্থীকে অনলাইনে ক্লাসের সুযোগ দেওয়া যায়নি। তারা পরীক্ষায় অংশ নিলেও ভালো ফল করতে পারাটা কঠিন হতো।”
মিরপুরের এক অভিভাবক মেহেরুন আহমেদ বেনারকে বলেন, সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করাই তাঁর জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “বাচ্চারা এমনি ঘরবন্দি হয়ে আছে, অনেকেই বিষণ্নতায় ভুগছে। ভার্চুয়াল ক্লাসে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ নেই, তারপর পরীক্ষা হবে কি হবে না, সেই দুশ্চিন্তা। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে অন্তত আমাদের মতো তারাও দুশ্চিন্তামুক্ত হলো।”
সামনে চ্যালেঞ্জ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো লম্বা ছুটির ফাঁদে পড়েছে। একের পর এক পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে। এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর কেমন হবে জানতে কথা হয় শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সঙ্গে।
তবে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলের কোনো প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর পড়বে না বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, চ্যালেঞ্জটা অন্য জায়গায়।
“পৃথিবীর কোনো দেশে এত পরীক্ষা নেই। আমি মনে করি যারা করোনাকালীন সময়ে পিছিয়ে পড়েছে, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া দরকার,” বলেন রাশেদা কে চৌধুরী।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন খুলবে তখন অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতিটা পুষিয়ে দিতে হবে। নজর দিতে হবে, কোনো শিক্ষার্থী যেন ঝরে না পড়ে।
এদিকে পরীক্ষা বাতিলের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার স্কুল-কলেজগুলো ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণাও দিয়েছে সরকার।
করোনা প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণির সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থা প্রধানরা হাজির ছিলেন।
বৈঠক শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবার যদি এইচএসসি পরীক্ষা না নেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে মূল্যায়নের বিকল্প ব্যবস্থা কী হতে পারে সে সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে।