করোনা মহামারি: দেড় বছর পর খুলতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
2021.09.02
ঢাকা
প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর তোড়জোড় চলছে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর পর শ্রেণিকক্ষে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মেডিকেল, ডেন্টাল ও নার্সিং বিষয়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণা এসেছে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে। এর আগে ১৫ অক্টোবরের পর থেকে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বেসরকারি টিভি ‘চ্যানেল আই’কে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বৃহস্পতিবার বলেছেন, “সবকিছু ঠিক থাকলে ১২ সেপ্টেম্বর থেকেই পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে।”
দেশের মোট জনসংখ্যার এক–চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী, যারা করোনাকালে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা হলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তাতে খুব একটা সফলতা আসেনি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর সব শিক্ষার্থীকে “মাস্ক পরে ক্লাসে যেতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে,” বলে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সকল শিক্ষার্থীর “স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেও জানান মন্ত্রী।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধাপে ধাপে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সব প্রতিষ্ঠান একবারে খোলা যাবে না। পর্যায়ক্রমে খোলা হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোনো সংকট দেখা দিলে যাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।”
সরকার স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনার কথা ভাবছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অন্য কোনো দেশ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের করোনার টিকা দিয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
একই দিন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “স্কুলের ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কতগুলো নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা মেনেই তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ছয় কোটি টিকার টাকা পরিশোধ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পর্যায়ক্রমে টিকা আসতে থাকবে।”
“খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি,” জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত আছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
‘শুধু টিকা দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকার সুযোগ নেই’
প্রধানমন্ত্রীর তাগাদার মুখে স্কুল-কলেজগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্কুল-কলেজ খোলার পর করণীয় কী কী হবে সেসব বিষয়েও ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন।
ইতিপূর্বে ১৫ অক্টোবরের পর থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গত সপ্তাহে বেনারকে জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।
তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, টিকাদানের মাত্রা সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছালেই ১৫ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পাস খুলতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে থেকে টিকাদান সংক্রান্ত তথ্য ছক আকারে ইউজিসিতে পাঠাতে হবে বলে জানান তিনি।
তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার এই তোড়জোড় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রুহুল ফুরকান সিদ্দিক বেনারকে বলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাইকে “শুধু টিকা দিয়েই নিশ্চিন্ত থাকার সুযোগ নেই।”
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “করোনা নিয়মিত রূপ বদলাচ্ছে এবং ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে।”
“শিক্ষার্থীদের বিষয়টি অনেক স্পর্শকাতর,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসগুলোয় সবাইকে ‘এন্টিবডি টেস্ট’ করে ঢোকাতে হবে। অর্থাৎ প্রবেশ ‘মুখে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট’ করানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।”
“একজন শিক্ষার্থীও যদি ক্যাম্পাস থেকে সংক্রমিত হয়ে মারা যায়, তবে তাঁর অভিভাবককে সরকার কী জবাব দেবে?”- এমন প্রশ্ন তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের এই সাবেক চেয়ারম্যান।
যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্রসংগঠন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দাবি জানিয়ে আসছে।
দেশে করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় ছুটির মেয়াদ। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৩৬২ জন।
বিগত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৪৩৬ জনসহ দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন ১৫ লাখ সাত হাজার ১১৬ জন।
নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।