বাংলাদেশ-ভারত আকাশপথে যোগাযোগ শুরুর সিদ্ধান্ত
2021.09.03
ঢাকা ও কলকাতা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসার প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময় পর দ্বিপাক্ষিকভাবে শনিবার থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের আকাশপথে যোগাযোগ শুরু হচ্ছে।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শনিবার থেকে দুই দেশের ভেতর সপ্তাহে কমপক্ষে সাতটি করে ফ্লাইট চলাচল করবে।
“আমরা ইতোমধ্যে ‘এয়ার বাবল’ এগ্রিমেন্টের আওতায় ভারতের সাথে উড়োজাহাজ পরিচালনা করার বিষয়ে আদেশ জারি করেছি। বাংলাদেশ বিমান সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে,” শুক্রবার বেনারকে বলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী।
এয়ার বাবল এগ্রিমেন্ট হলো দুই দেশের মধ্যে চুক্তি, যার মাধ্যমে শুধু উভয় দেশের মধ্যেই নির্দিষ্ট সংখ্যক ফ্লাইট পরিচালনা করা যায়। এই চুক্তির আওতায় ওই দুই দেশ ব্যতীত অন্য কোনো দেশে যাওয়া যাবে না।
বিমান ঢাকা-কলকাতা এবং ঢাকা-দিল্লি এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-চেন্নাই ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
মাহবুব আলী বলেন, “আমরা ভারতকে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। তারা যখন থেকে বলবে তখন থেকেই ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে।”
এদিকে গত ২৮ আগস্ট ভারত-বাংলাদেশ বিমান পরিষেবা পুনরায় শুরু হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনস) রাজীব জৈন।
ভারতের রাষ্ট্রীয় বিমান পরিষেবা এয়ার ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত ফ্লাইট পরিষেবা দেবে স্পাইসজেট, ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়া। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঢাকা থেকে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, ও চেন্নাইয়ের মধ্যে চালু হবে বিমান পরিষেবা।
করোনা মহামারির আবহে এয়ার বাবল চুক্তিতে আমেরিকা, জার্মানি, রাশিয়াসহ কিছু দেশে বিমান পরিষেবা জারি রেখেছে ভারত, যে তালিকায় এবার নাম জুড়ছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ ও ভারতের দেশের মধ্যে ‘এয়ারবাবল’ চুক্তি অনুসারে গত বছরের ২৮ অক্টোবর আরও একবার চালু করা হয় বিমান পরিষেবা।
এর আগে, বিমান বাংলাদেশ ২২ আগস্ট থেকে ভারতে ফ্লাইট পরিষেবা শুরু করবে বলে জানা গিয়েছিল, কিন্তু পরে এই ঘোষণা বাতিল হয়ে যায়।
তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়া যাবে না
কলকাতায় যে সব পাঁচতারা হোটেলে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি পর্যটক এসে ওঠেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ওবেরয় গ্র্যান্ড। হোটেলটির এক মুখপাত্র বেনারকে বলেন, “আমাদের পক্ষে এটি অবশ্যই ভালো খবর, যেহেতু আমাদের হোটেলে অনেক সংখ্যক বাংলাদেশি পর্যটক থাকেন।”
তবে ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল-এর সাবেক সেক্রেটারি নীলাঞ্জন বসুর মতে, “ধীরে ধীরে বিমান পরিষেবা চালু হওয়াই ভালো।”
“আমরা এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নই,” মন্তব্য করে তিনি বেনারকে বলেন, “এক ধাক্কায় পর্যটকের সংখ্যা আগের মতো হয়ে গেলে কিছু গোলযোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিষেবা ফের চালু হওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বার্তা।”
এদিকে “বিমান দু-এক দিনের মধ্যেই ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে,” জানিয়ে বিমান বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার শুক্রবার বেনারকে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান চলাচল শুরুর চূড়ান্ত তারিখ জানার পর টিকিট বিক্রি শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ২৮ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বৃহস্পতিবারের আদেশ অনুযায়ী, টিকা দেয়া থাক বা না থাক, ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের কঠোর সঙ্গনিরোধে থাকতে হবে এবং প্রতিটি বিমানে সর্বোচ্চ ৯০ ভাগ আসনে যাত্রী বহন করা যাবে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসা, পর্যটন, লেখাপড়া, ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারত ভ্রমণ করে থাকেন। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন অনেক মানুষ। এই কারণে তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচল করছেন।
এই সমস্যা মেটাতে ২৮ আগস্ট এয়ার বাবল এগ্রিমেন্টের আওতায় দুদেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তাব পাঠায় ভারত। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সম্মতি জানালে বিমান পরিচালনার পথ উন্মুক্ত হয়।
এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি কোনো যাত্রী ভারতে গিয়ে সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে যেতে পারবেন না। আবার ভারত থেকে বাংলাদেশ এসে সেখান থেকে তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়া যাবে না।
এতদিন “সরাসরি বিমান যোগাযোগ না থাকায় বর্তমানে যাঁরা চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারতে আসছিলেন তাঁদের অনেক অসুবিধা হচ্ছিল,” বলে শুক্রবার বেনারকে জানান কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) মোফাখারুল ইকবাল।
তিনি বলেন, “বিমান যোগাযোগ না থাকায় বাংলাদেশিরা প্রথমে ভারতের এক শহর থেকে অন্য শহরে অভ্যন্তরীণ বিমানে যাচ্ছেন। এরপর সীমান্তবর্তী শহরে এসে সেখান থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। অনেক অসুস্থ মানুষের পক্ষে সড়ক পথে যাতায়াত করা খুব কষ্টকর।”
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা চেন্নাই থেকে অভ্যন্তরীণ বিমানে কলকাতা এসে এখান থেকে হরিদাসপুর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।
গত ২৮ আগস্ট চিকিৎসার জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। পেট্রোপোল থেকে স্থল পথে কলকাতা গিয়ে সেখান থেকে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে বেনারকে জানান তাঁর গণসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার বিশ্বাস।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হার নমুনার বিপরীতে শতকরা ৩০ ভাগ থেকে নেমে শতকরা ১০ ভাগের কাছাকাছি অবস্থান করছে।
অধিদপ্তরের হিসাবে, বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণে ৭০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
একই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ১৬৭ জন। সব মিলিয়ে দেশে করোনায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ লাখ ১০ হাজার ২৮৩ জনে। এই রোগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৬ হাজার ৪৩২ জন।