বাংলাদেশে করোনা টিকা পরীক্ষার জন্য টাকা চায় চীনা কোম্পানি

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.10.06
ঢাকা
201006_Sinovac_01Trial-1000.jpg করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন রোগীরা। ১৪ মে ২০২০।
[নিউজরুম ফটো]

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টিকা পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার পর এবার বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে টাকা চেয়েছে চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক। বিষয়টি বেনারের কাছে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তবে টিকাটি পরীক্ষার অনুমোদন নেবার সময় টাকার কথা বলেনি সিনোভ্যাক। বরং বলা হয়েছিল, টিকা সফল হলে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা পাবে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “সিনোভ্যাক এখন ট্রায়ালের জন্য সরকারের কাছে টাকা চায়। তাদের ভাষায় তাঁরা অর্থ সংকটে পড়েছে।”

“ট্রায়ালের অনুমতির জন্য আবেদনের সময় তারা টাকা চায়নি,” জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন ট্রায়াল পরিচালনার জন্য কো-ফান্ডিংয়ের কথা বলছে। আমরা বলেছি, টাকার কথা তো তোমরা আগে জানাওনি। তারা বলছে, আমরা তাদের অনুমতি দিতে দেরি করে ফেলেছি।”

জাহিদ মালেক বলেন, আইসিডিডিআরবি’র সহায়তায় বাংলাদেশে টিকার ট্রায়াল দিতে প্রস্তাব দেয় সিনোভ্যাক। কিন্তু কেন তারা সরকারের কাছে ট্রায়ালের খরচ চায় সেব্যাপারে কিছু জানায়নি সিনোভ্যাক।

ট্রায়ালের জন্য সিনোভ্যাক “পঁচিশ থেকে ত্রিশ কোটি” টাকার মতো চেয়েছে জানিয়ে  মন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মতামত প্রয়োজন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় নয়, তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।”

এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইসিডিডিআর’বি) মাধ্যমে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসের তৃতীয় ও শেষ ধাপের ট্রায়ালের অনুমতি চায় সিনোভ্যাক।

আগের দুটি ট্রায়াল তারা চীনে পরিচালনা করে। ওই দুটি পরীক্ষায় টিকাটি নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে ওই টিকার পরীক্ষা চালাতে আইসিডিডিআর’বির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় সিনোভ্যাক।

গত ১৮ জুলাই টিকাটি পরীক্ষার নীতিগত অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল। এর পর ২৭ আগস্ট টিকা পরীক্ষার অনুমতি দেয় সরকার।

বাংলাদেশে পরীক্ষার পর যদি টিকাটি নিরাপদ প্রমাণিত হয় তাহলে তা বাংলাদেশে বাজারজাত করতে পারবে চীন।

সিনোভ্যাকের পক্ষে বাংলাদেশে চার হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ১৮ মাসব্যাপী এই ট্রায়াল চলবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ আইসিডিডিআরবি’র মুখপাত্র তারিফুল ইসলাম খান।

তবে এই ট্রায়াল শুরুর কোনো তারিখ এখনো ঠিক হয়নি বলে তিনি জানান।

আইসিডিডিআরবি’র সাথে চুক্তির পর কেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্ন জানতে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে ইমেইল পাঠানো হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

এ প্রসঙ্গে “করোনাভাইরাসের টিকার দৌঁড়ে চীনারা এগিয়ে আছে,” মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “সরকার ট্রায়ালের অনুমতি দিতে দেরি করে ফেলেছে। হয়তো সে কারণেই সিনোভ্যাক সুযোগ নিচ্ছে। আমাদের তো কিছু করার নেই।”

তাঁর মতে, “আমাদের উচিত বিশ্বে যারা টিকা প্রস্তুত করছে তাদের সবার সাথে যোগাযোগ রেখে টিকার ব্যবস্থা করা।”

সিনোভ্যাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের টিকার ট্রায়াল পরিচালনা করছে জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ বেনারকে বলেন, “তারা করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বলা যায়।”

তিনি বলেন, “বিশ্বের সকল দেশ করোনাভাইরাসের টিকা চায়। আমরাও টিকা চাই। তবে শুধু একটি কোম্পানি বা দেশের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। আমাদের অন্যান্য দেশের সাথেও যোগাযোগ রাখতে হবে যাতে আমরা নিরাপদ টিকা পেতে পারি।”

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। দশ দিন পর এ রোগে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ৭১ হাজার ৬৩১ জন, মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৪০৫ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিন কোটি ৫৬ লাখ ২২ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ১০ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন করা গেলেও কোনো প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদনের গবেষণায় নেই।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।