করোনাভাইরাস টিকা: দক্ষিণ এশিয়া পিছিয়ে বাংলাদেশ, স্কুল খুললেও আপাতত টিকা পাবে না শিক্ষার্থীরা
2021.10.07
ঢাকা
শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে স্কুল–কলেজ খুলে দিলেও আপাতত ১৮ বছরের নিচে শিশুদের করোনা টিকা দেওয়ার ঘোষণা থেকে সরে এসেছে সরকার। তবে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আশা প্রকাশ করেছেন, উৎপাদন শুরু হলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও টিকা রপ্তানি করতে পারবে বাংলাদেশ।
একই দিন বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসের টিকাদান অভিযানে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।
কয়েকবার শিক্ষার্থীদের টিকা দেবার ঘোষণা দিলেও সর্বশেষ গত ৫ অক্টোবর টিকার অভাবে আপাতত ১৮ বছরের নিচে শিশুদের টিকা দেওয়ার ঘোষণা থেকে সরে আসে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
“বারবার শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, যার বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না টিকার অভাবে,” জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “সরকারের টিকাদান কর্মসূচি এলোমেলোভাবে চলছে।”
“নিবন্ধন করেও টিকা পাচ্ছে না লাখ লাখ মানুষ। তারা জানে না কখন এসএমএস পাবে। টিকা কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় লেগে থাকছে। অনেকেই টিকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে,” বলেন ডা. লেলিন চৌধুরী।
তবে টিকাদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দেশের চেয়ে ‘এগিয়ে রয়েছে’ দাবি করে জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার ঢাকার কেরাণীগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষকে করোনার টিকার প্রথম ডোজ দিয়েছি। প্রায় দুই কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে সক্ষম হয়েছি।”
“পর্যায়ক্রমে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল নাগরিককে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা ভাবছি ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের শিক্ষার্থীদের কোভিড টিকা দেওয়ার আওতায় আনব,” বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সরবরাহ ঘাটতিই প্রধান অন্তরায়: বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, “আমি বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনটি এখনো দেখিনি। তবে আমার ধারণা এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপার হতে পারে। কখনও আমরা অন্য দেশগুলির থেকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কখনো হয়তো তারা এগিয়েছে। আমরা খুব শিগগির আরও এগিয়ে যাব।”
শুধু বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন নয়, টিকাদানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি যে কম তার প্রমাণ মেলে ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা’ নামের ওয়েবসাইটের তথ্যেও।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বৈশ্বিক বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করা ওই ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ টিকা পেয়েছেন। এর মধ্যে ১০.৫৬ শতাংশ পেয়েছেন পুরোপুরি এবং বাকিরা পেয়েছেন আংশিক টিকা।
ভারতে এই হার ৪৮ শতাংশ (পূর্ণ ডোজ ১৮ শতাংশ) এবং পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ (পূর্ণ ডোজ ১৪ শতাংশ)।
ওই সাইটে দেখা যায়, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান এবং মালদ্বীপের নাগরিকেরাও বাংলাদেশের চেয়ে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। যদিও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “টিকার সরবরাহে ঘাটতিই দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপকভিত্তিক টিকা প্রদানের প্রধান অন্তরায়।”
বিশ্বব্যাংকের ‘মোড় পরিবর্তন: ডিজিটালাইজেশন ও সেবানির্ভর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ বড়ো দেশ প্রয়োজনের তুলনায় কম টিকা পেয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশটির অর্থনীতি আরও চাঙা হতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে মূলত টিকা দেওয়ার গতির ওপর।
সরকারি হিসেবে, দেশে এখন পর্যন্ত টিকা এসেছে প্রায় ছয় কোটি ৮৬ লাখ ডোজ। এর মধ্যে দেয়া হয়েছে পাঁচ কোটি ৩৬ লাখ ডোজ, মজুত রয়েছে প্রায় দেড় কোটি ডোজ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের এক ডোজ পেয়েছেন তিন কোটি ৫৮ লাখ মানুষ এবং পূর্ণ ডোজ পেয়েছেন এক কোটি ৭৭ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ।
“আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে দুই কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী,” বৃহস্পতিবার বেনারকে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম।
সাত মাসের সর্বনিম্ন মৃত্যু
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা গত প্রায় সাত মাসে একদিন সব চেয়ে কম মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে ১৭ মার্চ এর চেয়ে কম, ১১ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর।
তারপর থেকে মৃত্যু হার প্রায় প্রতিদিনই বাড়তে থাকে এবং জুলাই মাসে দৈনিক মৃত্যু দুইশ ছাড়িয়ে যায়।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন মোট ২৭ হাজার ৬৪৭ জন।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার নতুন করে ৬৬৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৬০ হাজার ৮১৮ জন।