করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি: ভারতে পালানোর সময় সাহেদ গ্রেপ্তার
2020.07.15
ঢাকা
করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া এবং কোভিড চিকিৎসার নামে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বেনারকে বলেন, “নৌপথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন মো. সাহেদ। সাতক্ষীরার দেবহাটার সীমান্তবর্তী ইছামতী নদী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার এড়াতে সাহেদ বোরকা পরে ছিলেন। গোঁফ কামিয়েছিলেন, সাদা চুল কালো করেন তিনি। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছে একটি অবৈধ পিস্তল ও তিনটি গুলি পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে করা চুক্তি ভঙ্গ করে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা এবং পরীক্ষা না করেই ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে আসছিল রিজেন্ট হাসপাতাল।
গত ৬ জুলাই এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে রিজেন্টের উত্তরা শাখা ও পরে মিরপুর শাখা এবং রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় সিলগালা করে দেয় র্যাব। সাহেদকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করে র্যাব। সাহেদসহ এই মামলায় এখন গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১১ জন।
মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে র্যাব আবেদন জানিয়েছে বলে জানান আশিক বিল্লাহ। সাহেদকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে।
এদিকে সোমবার সাইফুল্লাহ মাসুদ নামের একজন ব্যবসায়ীর করা ৩ কোটি ৫৮ লাখা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুটি মামলা আমলে নিয়ে সাহেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার একটি আদালত।
রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর থেকে গা ঢাকা দেওয়া সাহেদের সন্ধানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান চালায় র্যাব। দেশের বিভিন্ন সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়।
গ্রেপ্তারের পরে সকাল ৯টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে সাহেদকে ঢাকায় এনে র্যাবের সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ। এরপর বুধবার দুপুরে তাঁকে নিয়ে উত্তরার একটি বহুতল ভবনে র্যাব অভিযান চালায়। ভবনটিতে সাহেদের একটি গোপন অফিস রয়েছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তারা।
এর আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে ভুয়া সনদ দেওয়া অপর একটি প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারের দুই কর্ণধার ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তাঁর স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীকে আটক করে পুলিশ।
নিজের নানা কেলেঙ্কারি চেপে রেখে টেলিভিশন টকশোর নিয়মিত মুখ হয়ে ওঠা সাহেদ নিজেকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সহসম্পাদক বলেও পরিচয় দিতেন। যদিও তাঁর গ্রেপ্তারের পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের কোনো উপকমিটির অস্তিত্বই নেই।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে
বুধবার বিকেলে র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাহেদকে গ্রেপ্তারে অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাহেদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
র্যাব প্রধান বলেন, “তিনি (সাহেদ) অনেক কিছু বলেছেন, তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাবে না। তাছাড়া জিজ্ঞাসাবাদ এখনো শেষ হয়নি। আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।”
চৌধুরী আবদুল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুর থেকে আটক রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজের কাছ থেকে সাহেদ কোন পথে দেশ ছাড়তে পারেন সে সম্পর্কে তাঁরা ধারণা পান। তারই প্রেক্ষিতে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাহেদের গ্রেপ্তারের খবরে র্যাব সদরদপ্তরে হাজির হন কয়েকজন ভুক্তভোগী। বিভিন্ন সময়ে সাহেদ তাঁদের সাথে প্রতারণা করেছন। এসব ভুক্তভোগীকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে র্যাব।
তাঁদের বিষয়ে র্যাবের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা অভিযোগ জানালে আইনগত সহযোগিতা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে র্যাব।
ঘটনা সাজানো বলছে বিএনপি
সাহেদকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি সাজানো নাটক বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে সাহেদের আটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই নাটক কমেডি, না এটা ট্র্যাজেডি, আমরা জানি না। আওয়ামী লীগের প্রশাসন নাটক রচনা করতে পারে। এটা নিঃসন্দেহে।”
এর আগে সোমবার তিনি অভিযোগ করেন, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে দুর্নীতির পেছনে সরকার দলীয় লোকজন সম্পৃক্ত। আর এ কারণেই রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথকেয়ারের ঘটনার পেছনের গডফাদারদের ধরতে পারবে না সরকার।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, দলে বা দলের বাইরে যে কেউ এ ধরনের প্রতারণা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, “প্রতারকরা প্রতারণা করবেই। তবে এ ব্যাপারে সজাগ আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।”
বুধবার সচিবালয়ে সাহেদ গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন। করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে সারাবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সাহেদকে দায়ী করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
“সবকিছু মিলিয়ে সাহেদ জঘন্য অপরাধ করেছে। তাঁর বিচার হবেই,’ বলেন আসাদুজ্জামান খান।
ইউনাইটেডকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
আগুন লেগে কোভিড-১৯ ইউনিটে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এ সংক্রান্ত তিনটি রিট আবেদন শুনানির পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।
ইউনাইটেড হাসপাতালের আইনজীবি মোস্তাফিজুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত চারটি পরিবারকে ৩০ লক্ষ টাকা করে এক কোটি ২০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে। আরেকটি পরিবারের সঙ্গে ২০ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়েছে।”
গত ২৯ জুন আদালত এক আদেশে ইউনাইটেড হাসপাতালকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সাথে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে সমঝোতা করতে বলেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার এ আদেশ হলো।
গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে এসি বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজন রোগীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।