টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সশস্ত্র দেহরক্ষীসহ যুবলীগ নেতা শামীম গ্রেপ্তার

জেসমিন পাপড়ি
2019.09.20
ঢাকা
190920_Juboleague_leader_arrested_1000.JPG টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকায় সাত সশস্ত্র দেহরক্ষীসহ যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ সময় নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, প্রায় দুইশ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর), আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ জব্দ করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
[বেনারনিউজ]

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগের আরেক শীর্ষ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

শুক্রবার রাজধানীর নিকেতনে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে নগদ দুই কোটি টাকা, প্রায় দুইশ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর), আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদ জব্দ করা হয়।

একই সাথে আটক করা হয় তাঁর সাত সশস্ত্র দেহরক্ষীকে। র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

জি কে শামীমের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে বলেও জানায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পৃথক আরেকটি অভিযানে শুক্রবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র‍্যাব। এময় তাঁর কাছে নতুন ধরনের ইয়াবা পাওয়ার কথা জানান র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক আশিক বিল্লাল।

দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে চলমান এই শুদ্ধি অভিযান সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সারা দেশের যেখানে দুর্নীতি বা অনিয়ম হবে—শুধু যুবলীগ বা ছাত্রলীগের প্রশ্ন নয়, আওয়ামী লীগেরও যারা অনিয়ম, দুর্নীতি করবে, তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে।”

তবে দলের কিছু নেতার বিরুদ্ধে চলা এই অভিযানকে অনিয়ম–দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান বলতে চাইছেন না বিশ্লেষকেরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বেনারকে বলেন, “এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে বলে আমি মনে করি না। প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে এমন অনেক লোকজন আছেন, যারা ব্যাংক, শেয়ার বাজার লুট করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।”

“সেটা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর নজরে আছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা,” বলেন তিনি।

বিপুল অর্থ উদ্ধার, টেন্ডারবাজির অভিযোগ

শুক্রবার সকালে জি কে শামীম ও তাঁর সাত দেহরক্ষীকে আটকের পরে তাঁর ব্যবসায়িক ভবনে বিকেল চারটা পর্যন্ত অভিযান চালায় র‍্যাব।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এই অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি বেনারকে বলেন, “টেণ্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে জি কে শামীমকে আটক করা হয়েছে। অবৈধ উপায়ে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।”

বর্তমানে র‍্যাবের হেফাজতে থাকা শামীমের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে বা শনিবার সকালের মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।

সারওয়ার আলম জানান, অভিযানে শামীমের অফিস কক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার নথি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তাঁর মায়ের নামে আছে ১৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া নগদ ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার মার্কিন ডলার এবং ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলারও সেখানে পাওয়া যায়।”

তবে অফিস কক্ষে এত টাকা রাখার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে অভিযান চলাকালে শামীমের ব্যক্তিগত সহকারী দিদারুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারির কাজ করছে শামীমের প্রতিষ্ঠান। দিনমজুরদের নগদ টাকা দিতে হয়ে। শুক্রবার ও শনিবার দুদিন সরকারি ছুটি থাকায় এসব টাকা তুলে রাখা হয়েছিল।”

অভিযানে মোট আটটি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে জানিয়ে সারওয়ার আলম বলেন, “প্রাথমিকভাবে এগুলো বৈধ অস্ত্র বলে মনে হলেও এগুলো অবৈধ ব্যবহারের তথ্য রয়েছে।”

উল্লেখ্য, জি কে শামীম রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত।

শামীমের প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কোথায় কোথায় ঠিকাদারীর কাজ করছে জানতে চাইলে দিদারুল জানান, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও আগাঁরগাও পঙ্গু হাসপাতালে চারশ কোটি টাকা করে, মিরপুর ৬-এর একটি প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকার, মহাখালী ডাইজেস্টিভে দুইশ কোটি টাকার, অ্যাজমা সেন্টারে ২০-২৫ কোটি টাকার, সেবা মহাবিদ্যালয়ে ২০-২৫ কোটি টাকার, উত্তরা র‍্যাব হেডকোয়ার্টার্সে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার, বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে তিনশ কোটি টাকা, সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে দেড়শ কোটি টাকার, সচিবালয়ে কেবিনেট ভবনে দেড়শ কোটি টাকা, আগারগাঁ রাজস্ব ভবনে পাঁচশ কোটি টাকা, নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে একশ কোটি টাকা, বিজ্ঞান জাদুঘরে একশ কোটি টাকা, পাবলিক সার্ভিস কমিশনে ১২ কোটি টাকা, গাজিপুরের পোড়াবাড়ি র‍্যাব ট্রেনিং সেন্টারে ৬০ কোটি টাকা, আগারগাঁও এনজিও ফাউন্ডেশনে ৬৫ কোটি টাকার কাজ করছে শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি।

কলাবাগান ক্লাবে নতুন ইয়াবার সন্ধান

র‍্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাল সাংবাদিকদের জানান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযানের সময় সাত প্যাকেট হলুদ রঙের ইয়াবার সন্ধান পাওয়া গেছে। আগে বাংলাদেশে এ ধরনের ইয়াবা পাওয়া যায়নি। গন্ধহীন এই ইয়াবা নতুন ধরনের বলে মনে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া অভিযানে একটা বিদেশ পিস্তলসহ তিন রাউন্ড গুলি, ক্যাসিনোতে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি খেলার কয়েন, স্কোরবোর্ড ও ৫৭২ প্যাকেট তাস উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তার হওয়া শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হবে জানান আশিক বিল্লাল।

আওয়ামী লীগের অনেকে নজরদারিতে

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগ নয়, আওয়ামী লীগেরও যারা অনিয়ম দুর্নীতি করবে, তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে।”

শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দুর্নীতি, অপকর্ম, শৃঙ্খলাভঙ্গ- এসবের জন্য অনেকেই নজরদারিতে আছেন এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

এদিকে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর (খালেদ মাহমুদ) বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় যুবলীগ জরুরি ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ।

রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ চালানোর অভিযোগে অস্ত্রসহ খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করে র‍্যাব।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।