ফাইজারের টিকা দিয়ে বুস্টার ডোজ শুরু করছে বাংলাদেশ
2021.12.27
ঢাকা
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মঙ্গলবার থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকায় শুরুতে স্বল্প পরিসরে করোনাভাইরাসের টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হচ্ছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর।
এর আগে সোমবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. লোকমান হোসেন মিঞা জানান, দেশে বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে। আপাতত রাজধানী ঢাকায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এটি শুরু হবে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যারা কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছেন (চিকিৎসক, নার্স, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মী) তারাই বুস্টার ডোজের জন্য বিবেচিত হবেন বলে জানান লোকমান হোসেন।
“যাদের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর অন্তত ছয় মাস পেরিয়েছে, তাদের এখন তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এ জন্য নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। তৃতীয় ডোজ পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের কাছে এসএমএস চলে যাবে,” জানান তিনি।
আহমেদুল কবীর বলেন, “সারা দেশে রুটিন টিকাদান কেন্দ্রে শুরু হবে বুস্টার ডোজ টিকার কার্যক্রম। তবে দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ঢাকার এমন কিছু ষাটোর্ধ্ব ও সম্মুখসারির সীমিত সংখ্যক যোদ্ধাদের এসএমএস পাঠানো হয়েছে। শুধুমাত্র তাদেরকেই বুস্টার ডোজ টিকা নিতে কেন্দ্র যাবার আহবান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।”
“সুরক্ষা অ্যাপে বুস্টার ডোজ নিবন্ধন কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি, ফলে আগামীকাল পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত সংখ্যক মানুষদের এসএমএস পাঠাবে কেন্দ্রগুলো,” বলেন তিনি।
সময়ের সাথে সাথে করোনাভাইরাসের টিকার সুরক্ষা সক্ষমতা কমে আসায় কিছু দেশ বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো নাগরিকদের বাড়তি আরেক ডোজ টিকা দিচ্ছে, যাকে বলা হচ্ছে বুস্টার ডোজ। বাংলাদেশও এই তালিকায় নাম লেখালো।
তবে বুস্টার ডোজের কারণে নিয়মিত টিকা কার্যক্রম যাতে ব্যহত না হয় সেদিকে বিশেষ নজরদারির আহবান জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক আহমেদ বেনারকে বলেন, “বুস্টার ডোজ দিতে গিয়ে যেন সাধারণ টিকা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। টিকার সমতা এবং নৈতিকতার জন্য বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের টিকা (দুই ডোজ) দেওয়ার পরেই বুস্টার ডোজ দেওয়া উচিত।”
“তবে বাংলাদেশে টিকার ঘাটতি নেই। টিকাদানে সক্ষমতাও আছে। তাই বুস্টার চালু করা যেতে পারে। তবে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিসহ বেশ কিছু সাংগঠনিক সমস্যা এখনো আছে,” বলেন তিনি।
“টিকার সমতা নিশ্চিতে এখন আগেভাগে রেজিস্ট্রেশন করা ছাড়া সরাসরি টিকাকেন্দ্রে এসে পরিচয়পত্র দেখিয়ে কীভাবে টিকা নিতে পারবে সেই ব্যবস্থা করা দরকার। ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) কেন্দ্রগুলোতে টিকা দেওয়া যেতে পারে,” মনে করেন মুশতাক আহমেদ।
ঝুঁকিপূর্ণ এবং বয়স্কদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুস্টার ডোজে দিতে পরামর্শ দিলেও সেটা ঢালাওভাবে সবাইকে দেওয়া ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক নতুন ধরন অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটি বাংলাদেশেও বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দেয়। এরপর গত ১৯ ডিসেম্বরে ৬০ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে কোভিড টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে চলতি বছরে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়।
কোভিড-১৯ এর টিকার জন্য ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। ওই চুক্তির আওতায় জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও ভারত সরকারের নিষোজ্ঞায় চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে পারেনি সিরাম ইন্সটিটিউট। তবে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সসহ বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র থেকে টিকা আসতে শুরু করলে সংকট কাটিয়ে পুরোদমে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ডোজ করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮২ মানুষকে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৪ কোটি ৯১ লাখ ৪১ হাজার ৬৯৬ জন।
এর বাইরে এখন পর্যন্ত ২৮ লাখ ২১ হাজার ৯৯৬ স্কুলশিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৬ স্কুলশিক্ষার্থী । গত ১ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।
দেশে বর্তমানে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, সিনোফার্ম, মডার্না ও সিনোভ্যাকের টিকা দেয়া হচ্ছে।
এ মুহূর্তে সরকারের হাতে প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি করোনার টিকা আছে বলে গত ১৭ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
শনাক্তের হার ২ শতাংশের ওপরে
গত একদিনের ব্যবধানে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার দুই শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে নতুন রোগী বাড়লেও মৃত্যু কমেছে।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৩৭৩ জন, মারা গেছেন একজন। এর আগের দিন (২৬ ডিসেম্বর) অধিদপ্তর একদিনে ২৬৮ জন শনাক্ত এবং চার জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল।
এই নিয়ে সোমবার পর্যন্ত দেশে করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৬ জন এবং মারা গেছেন ২৮ হাজার ৬১ জন।