করোনাভাইরাস: বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি টিকা দেওয়া শুরু
2021.11.01
ঢাকা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু করল বাংলাদেশ। সোমবার সকালে ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে প্রতিষ্ঠানটির নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
“ভালো আছি। হাতে একটু ব্যথা হয়েছে। এর আগে টিকা নেওয়া পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, এমন ব্যথা স্বাভাবিক। তাই কোনো ভয় পাচ্ছি না,” টিকা নেবার পরে বেনারকে বলেন প্রথম টিকা গ্রহণকারী নবম শ্রেণীর ছাত্র তাহসান রহমান।
প্রথম দিন এই কেন্দ্র দুই হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, মঙ্গলবার থেকে ঢাকার আটটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের টিকাদান চলবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ হাজার করে দৈনিক ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে।
“এরপর আমরা ঢাকার বাইরে ২১টি জেলায় টিকাদান শুরু করব। পর্যায়ক্রমে উপজেলাতেও শিশুদের টিকা দেওয়ার চিন্তা আছে,” জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের একটি শিশুও টিকার বাইরে থাকবে না।”
দেশে টিকার সংকট নেই বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য তিন কোটি টিকা লাগবে। আমাদের কাছে দুই কোটির ব্যবস্থা আছে। বাকি এক কোটিও ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর শিক্ষার্থী আছে প্রায় এক কোটি, যারা এখন টিকা পাবে।
মন্ত্রী বলেন, ফাইজারের টিকা দিয়ে সহযোগিতা করায় যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ। এ টিকা শিশুদের জন্য পরীক্ষিত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত।
তিনি জানান, কেনা এবং উপহার হিসেবে এখন পর্যন্ত ২১ কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশে পেয়েছে বাংলাদেশ, আরো টিকা কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশজুড়ে চলমান টিকা কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে বলে জানান মন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছি, কিন্তু সীমিত আকারে। টিকাদান কার্যক্রম যত সফল হবে তত দ্রুত স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম চালু করতে পারব।”
“আমরা আশা করছি, নতুন বছরের শুরু পর্যন্ত আমরা টিকাদান কার্যক্রমে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারব,” বলেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার।
শিশুদের জন্য অন্য টিকাও ভাবা যেতে পারে
বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের শিশুদের টিকা দেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে শিশুদের ওপর প্রয়োগ করা ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ তাপমাত্রার প্রয়োজন হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে টিকাটির প্রয়োগ কঠিন হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
“সারা বিশ্বে এখনও শিশুদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়েছে,” জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন বেনারকে বলেন, “কিন্তু এই টিকা যে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, সেটি দেশের বড়ো বড়ো নগরগুলোর বাইরে সংরক্ষণ এবং পুশ করা কঠিন হয়ে যাবে।”
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় “ফাইজারের টিকার পাশাপাশি শিশুদের ওপর অন্য টিকার ট্রায়াল দেয়া যেতে পারে,” বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং চীনে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা। আমিরাতে এই টিকার থার্ড স্টেপ ট্রায়াল বহুজাতিক শিশুদের ওপর হয়েছিল। সেখানে ভারতীয় শিশুরাও ছিল; ট্রায়ালে ওই টিকা নিরাপদ এবং কার্যকর ছিল। এই টিকাও শিশুদের জন্য ভাবা যেতে পারে।”
শিশুদের পাশাপাশি বয়স্ক ব্যক্তিদেরও টিকার আওতায় আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ১৬-১৭ লাখের বেশি ষাটোর্ধ মানুষ টিকা পায়নি। অথচ তারাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।”
“তাঁদেরকে টিকা দেয়ার জন্য বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করে সেটা বাস্তবায়ন করা উচিত। একই সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে কীভাবে টিকা দেব তার কলাকৌশল উদ্ভাবন করা দরকার,” বলেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
আইইডিসিআর উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেনের মতে, শুধু টিকাতেই সমস্যা দূর হবে না, টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহায়তায় টিকার জন্য ঢাকায় আটটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্য সব স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়াকালীন সময়ে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকবে।
ফাইজারের টিকা দেওয়া এবং ডাইলুয়েন্ট মিশ্রণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন হয়। এ কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগ।
২৪ ঘণ্টায় দুই মৃত্যু
স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দু’জন মারা গেছেন, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত বছরের ১৮ মার্চ এই রোগে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ওই বছরের ৫ মে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এরপর থেকে মৃত্যু বাড়তেই থাকে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একদিনে মারা যাওয়া দুজনই ছিলেন নারী এবং ঢাকা জেলার। অর্থাৎ একটি জেলা ব্যতীত সারাদেশ ছিলো মৃত্যুহীন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আরো ২১৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫৩ জনে আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭ হাজার ৮৭০ জন।