মোখা আঘাত হানার একদিন পরও সহায়তা পাননি রোহিঙ্গারা
2023.05.15
কক্সবাজার
ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার একদিন পেরিয়ে গেলেও কোনো সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দারা।
টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা আবুল কাশেম সোমবার বেনারকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে আমার ঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আমি পরিবার নিয়ে বড়ো ভাইয়ের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা খাবার আর থাকার ব্যবস্থা নিয়ে খুব কষ্টে আছি।”
ঝড়ে ঘর ভেঙে পড়ার পর কোনো সহায়তা পাননি জানিয়ে লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারী নুর কলিমা বেনারকে বলেন, “ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খাবারের অভাবে আছি।”
লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বেনারকে জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে তাঁর শিবিরে ২৮ হাজারের বেশি ঘরের মধ্যে প্রায় “দেড় হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
“পাহাড়ি ঢলের কারণে অনেকে ক্যাম্পের মসজিদ-মাদ্রাসা ও এনজিও কার্যালয়গুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন,” জানিয়ে তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তালিকা তৈরি করছি, ক্ষতিগ্রস্ত কেউ এখনো সহায়তা পায়নি।”
উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের ১১৮টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এই শিবিরের বাসিন্দা সুলতান আহম্মদ বেনারকে বলেন, “কোনো রকমে কষ্টের মধ্যে আছি। এই কারণে ভয় লাগছে, যদি বৃষ্টি হয় তাহলে কোথায় যাব, কী করব!”
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের বেনারকে বলেন, “চারপাশে চারটি বাঁশের খুঁটি আর ওপরে ত্রিপল লাগানো। এটাই হচ্ছে রোহিঙ্গাদের থাকার ঘর। ছোটখাটো বাতাসে এসব বাড়ি-ঘরের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছে। এত বড়ো বিপদেও কিছুই হয়নি।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা শিবিরের দুই হাজার ৮২৬টি ঘর, লার্নিং সেন্টার, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের কবলে সাত রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে শিবিরগুলোর অনেক শৌচাগার, গোসলখানা, নলকূপসহ বেশ কিছু রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১২০টি স্থানে ভূমিধস ও ২২৬টি গাছ উপড়ে পড়েছে।
“মোখার প্রভাবে বৃষ্টিপাতে ভূমিধসের আশঙ্কায় আগেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে পাঁচ হাজার ৩৮৬ রোহিঙ্গাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর ও অন্যান্য স্থাপনা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের চেষ্টা চলছে,” বলেন মিজানুর রহমান।
খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিনের ঘরহারা মানুষ
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর জালিয়াপাড়া, উত্তর চপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পুরান মুণ্ডার ডেইল, মহেষখালিয়াপাড়াসহ বেশির ভাগ গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে ঘূর্ণি ঝড়ের ক্ষত চিহ্ন।
বিধ্বস্ত হয়েছে এসব এলাকায় প্রায় সব কাঁচা ঘর-বাড়ি। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ।
আশ্রয়কেন্দ্রে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ডেইলপাড়া গ্রামের জেলে কোরবান আলীর এক রাত এক দিন কেটেছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে।
সোমবার বিকেলে বাড়ি ফিরলে তাঁর উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়, কারণ তাঁর বাড়ির কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট রাখেনি মোখা। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে দ্বীপ।
কোরবান আলী তার রান্নাঘরের সরঞ্জামগুলোও খুঁজে পাননি। পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে পড়েছেন খাবার সংকটে।
সেন্টমার্টিনের বাজারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আলীম একটি চা দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। তার একমাত্র সম্বল সেই দোকান আর ঘর নেই। ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে ছনের ছাউনি দেওয়া বসতঘরটিও।
ফোনের ওপার থেকে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বেনারকে জানাচ্ছিলেন তাঁদের পরিস্থিতি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পুনর্বাসনের জন্য তালিকা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ চলছে।
শাহপরীর দ্বীপে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে দুর্গত হাজারো মানুষকে। নাফ নদীর তীরে শাহপরীর দ্বীপ আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণের জন্য এসেছেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ সুফিয়া খাতুন। তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। গতকাল থেকে একমুঠো খাবার মুখে দিতে পারিনি। ত্রাণ দেওয়ার খবরে এখানে ছুটে এসেছি।”
“সকাল থেকে এখানে বসে আছি,” বলেন তিনি।