নাগরিক সমিক্ষায় সরকার প্রশংসিত, সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত রাজনীতি
2016.12.09
ওয়াশিংটন ডিসি
সাম্প্রতিক এক সমিক্ষায় দেখা গেছে নাগরিকরা দেশের চলমান সহিংসতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করলেও মনে করেন যে বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে। জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার খুবই কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও মতামত দেন তারা।
চলতি বছরের ২৩ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড টেলিফোন সার্ভে সিস্টেম (CATSS)-এ ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়েসি ১৪৫৩ জন নাগরিক অংশগ্রহণ করেন।
দেশের দশ লাখের বেশি মোবাইল গ্রাহকদের মধ্য থেকে দৈব চয়নের ভিত্তিতে এই অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচন করা হয়। এতে ৭৭ ভাগ গ্রামীণ এবং ২৩ ভাগ শহুরে নাগরিক অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে নারী ও পুরুষের অনুপাত ছিল সমান।
বাংলাদেশের সার্বিক সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে ৭০ ভাগ মন্তব্য করেন যে ২০১৩’র এপ্রিলের তুলনায় ২০১৬’র অক্টোবরে বাংলাদেশ অনেক বেশি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। অবশ্য ১৯ ভাগের মতে পরিস্থিতি ঠিক তার বিপরীত।
২০ ভাগ অংশগ্রহণকারী সন্ত্রাসীদের দায়ী করলেও ৩১ ভাগ অংশগ্রহণকারী মনে করেন সন্ত্রাস ও সহিংসতার জন্য মূলত রাজনৈতিক দলগুলোই দায়ী। আর সহিংসতার জন্য কারা দায়ী সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই বলে মতামত দেন ২৫ ভাগ অংশগ্রহণকারী।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মতামত ভিত্তিহীন নয় বলে স্বীকার করেন জাতীয় সংসদে সরকারি দলের হুইপ আতিউর রহমান আতিক।
তিনি বেনারকে বলেন “কিছু কিছু নেতা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দায়টা এসে পড়ে রাজনৈতিক দলের উপর।”
তবে তিনি এটাও যোগ করেন যে, বর্তমানে বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সুস্থ ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান সহিংসতার জন্য রাজনৈতিক দলের দায় সম্পর্ক অংশগ্রহণকারীদের মূল্যায়নে পুরোপুরি একমত পোষণ করেন।
তিনি বেনারকে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোই মূলত নিজেদের বিভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সন্ত্রাস ও সহিংসতা লালন করে।”
অন্যদিকে সরকারি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবিএম রেজাউল কবির কাওসার-এর মতে সহিংসতার জন্য মূলত দায়ী ‘সুযোগসন্ধানী নেতারা’।
তার মতে “সুযোগসন্ধানীরা সব সময় সরকারি দলের ভেতরে মিশে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে শেষ পর্যন্ত দায়টা সরকারি দলের ঘাড়ে চাপায়।”
তবে তিনি স্বীকার করেন যে, সাধারণ মানুষের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তি অনেক ক্ষেত্রেই নেতিবাচক।
৭৭ ভাগ অংশগ্রহণকারীর মতে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
৫৮ ভাগ পুরুষ অংশগ্রহণকারী মনে করেন দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে এই মতের সাথে একমত পোষণ করেন ৫০ ভাগ নারী।
সার্বিকভাবে ৩৮ভাগ অংশগ্রহণকারী মনে করেন দেশে রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই।
গত ৬ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ডিসির উইলসন সেন্টারে ডেমোক্রেসি ইন্টারনেশনাল এই সমিক্ষাটি উপস্থাপন করে। ডেমোক্রোসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক সংস্কার এবং নাগরিক সচেতনতা বিষয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে।
এই নিবন্ধে ঢাকা থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কামরান রেজা চৌধুরী