ভিসা জটিলতা: পাল্টাপাল্টি অভিযোগ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের

জেসমিন পাপড়ি
2019.05.21
ঢাকা
190521_BD-Pakistan_620.jpg পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশন। ১৫ জুন ২০১৬।
[নিউজরুম ফটো]

চলমান বৈরী কূটনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে এবার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ভিসা জটিলতা শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দু’দেশের পরস্পরবিরোধী মন্তব্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করা হয়নি। বরং পাকিস্তানই বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ভিসা দিচ্ছে না।

অন্যদিকে পাকিস্তানের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের ভিসা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এমনকি কূটনৈতিক ভিসাও দীর্ঘদিন অপেক্ষমাণ রাখা হচ্ছে।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকার জন্য মনোনীত পাকিস্তানের হাইকমিশনারের অনুমোদনের বিষয়টিও ঢাকা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ পাকিস্তানের।

কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যেকার বৈরী সম্পর্কের নেতিবাচক প্রভাব দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে পড়তে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেন, “পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের জটিলতা অনেক দিন ধরেই চলছে। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে বাধ্য। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও খুব বেশি উজ্জ্বল হবে না।”

দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশের মধ্যে এমন বৈরী সম্পর্ক এ অঞ্চলের জন্যও সুখকর নয় বলে মনে করেন তিনি।

তারেক শামসুর রেহমান বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বৈরিতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জোট ‘সার্ক’ অনেকটা অকার্যকর হয়ে আছে। এর মধ্যে নতুন করে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি সার্ককে বিলুপ্তির পথে নিয়ে যাবে।”

মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস কাউন্সেলর ও ভারপ্রাপ্ত ভিসা অফিসার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের ভিসার আবেদন চার মাস আটকে রেখেছে পাকিস্তান। এর প্রতিক্রিয়ায় গত ১৩ মে থেকে পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ।

ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র বেনারকে জানায়, দূতাবাসের কাউন্সেলর (প্রেস) ইকবাল হোসেন গত ৯ জানুয়ারিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জমা দেন। নতুন নিয়োগ করা ভিসা অফিসারকে ভিসা না দেওয়ায় গত নভেম্বর থেকে দূতাবাসে পদটি খালি রয়েছে। ইকবাল নিজ দায়িত্বের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে সে বিভাগের দায়িত্বও পালন করছেন।

কিন্তু গত ৩০ মার্চ তাঁরও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এর আগে এ বছরের জানুয়ারিতে ভিসা বাড়ানোর আবেদন জমা দেন ইকবাল। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া স্বত্বেও এখন অবধি ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেরও ভিসা দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই নানা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। মূলত বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরুর পর থেকে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার শুরু।

২০১০ সালে ওই বিচার শুরুর সাথে সাথেই প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান। বিষয়টিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ মন্তব্য করে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।

ভিসা বন্ধ করেনি বাংলাদেশ

মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানান, পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করেনি বাংলাদেশ। উল্টো তারাই আমাদেরে লোকদের ভিসা দিচ্ছে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “কেউ কেউ ভিসা না-ই পেতে পারেন, যেটা সারা দুনিয়ায় হয়। কিন্তু আমরা পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করিনি।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আমাদের নতুন নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাকে ভিসা দেয়নি। ফলে দীর্ঘদিন থেকে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ মিশনে কনস্যুলার উইংয়ে কোনো কর্মকর্তা নেই।

“আরেক কর্মকর্তাকে ওই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমাদের হাইকমিশনার। কিন্তু তাঁর ভিসার মেয়াদও শেষ হয়েছে। পাকিস্তান তাঁর ভিসা নবায়ন করেনি।”

“কনস্যুলার সেকশনের অফিসার যদি না থাকে তাহলে পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা কে ইস্যু করবে? এই কারণে ভিসা ইস্যু ‍করা যাচ্ছে না। কিন্তু ভিসা ইস্যু বন্ধ নেই,” বলে ড. মোমেন।

পাল্টা অভিযোগ পাকিস্তানের

২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের ভিসা পেতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন পাকিস্তান হাই কমিশনের প্রেস কাউন্সিলর মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব হারাল। এমনকি কূটনৈতিক ভিসা পেতেও ৬-৮ মাসের মতো সময় লাগছে বলে জানান তিনি।

বেনারের পাঠানো ই-মেইলের উত্তরে আওরঙ্গজেব জানান, তাঁর সহকারী ব্যক্তিগত সচিব তারিক ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। ২০১৮ ডিসেম্বর মাস পর্যন্তও তিনি কূটনৈতিক ভিসা পাননি। অবশেষে তাঁকে বেইজিংয়ে বদলি করা হয়।

এ ছাড়া ঢাকায় পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইকমিশনারের এগ্রিমো ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে আওরঙ্গজেব বলেন, সরকার এর জবাব দেওয়ার সৌজন্যও দেখায়নি। আমরা আজ পর্যন্ত এটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান সম্পর্কে ঢাকার পক্ষ থেকে লিখিত জবাব পাইনি।

তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বেনারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তান একজনের নাম পাঠিয়েছে আমরা সেটা গ্রহণ করিনি। এখন তারা আরেকজনের নাম পাঠাবে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।”

“কিন্তু তারা নতুন কোনো নামই পাঠায়নি। আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। তারা নতুন নাম দিলে আমরা গ্রহণ করব,” বলেন আবদুল মোমেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।