প্রবল বর্ষণে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.07.24
ঢাকা
180724_Weather_1000.jpeg প্রবল বর্ষণে ঢাকা শহরের অনেক রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ২৪ জুলাই ২০১৮।
বেনারনিউজ

বর্ষণের মাস শ্রাবণে দুই সপ্তাহের দাবদাহের পর দুদিনের প্রবল বৃষ্টিপাতে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সোমবার শুরু হওয়া বৃষ্টিপাতের মাত্রা মঙ্গলবার বৃদ্ধি পায়। ফলে জলাবদ্ধতায় নাকাল হয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় দুই কোটি মানুষ।

এই দুই মহানগরীর অধিকাংশ রাস্তা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে যায়। জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। ভূমিধসের আশঙ্কায় চট্টগ্রামের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।

শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম নয়, দেশের অন্যান্য এলাকায়ও প্রবল বর্ষণের খবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া বিশারদরা বলছেন, এ বছর কম সময়ের মধ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। সৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতা। তাঁদের মতে, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টিসহ স্বল্প সময়ে ভারী বর্ষণ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ফলাফল।

শনিবার পর্যন্ত আগের দুই সপ্তাহ ছিল প্রায় বৃষ্টিহীন। বর্ষণের মাস শ্রাবণেও বৃষ্টির দেখা মিলছিল না। ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা পৌঁছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে।

সেই দাবদাহ শেষে পরের সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়। মঙ্গলবার বৃষ্টিপাত তীব্র হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনায় প্রবল বর্ষণ হয়েছে। সেখানেও জনজীবন হয়েছে বিপর্যস্ত।

মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে শুরু হয়ে দুপুর তিনটার মধ্যে রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলোর অনেক স্থানেই হাঁটু পানি জমে যায়। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। যানবাহনের স্বল্পতার কারণে স্থবির হয়ে যায় পুরো ঢাকা মহানগরী।

যে অল্পসংখ্যক যানবাহন রাস্তায় ছিল সেগুলো চলাচল করে খুবই ধীর গতিতে। সৃষ্টি হয় অস্বাভাবিক যানজট।

সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া বর্ষণে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে যায়। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু চট্টগ্রামের প্রধান সড়কসহ আশপাশের অনেক রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কমপক্ষে দুই-তিন দিন দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী সাত দিন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে মঙ্গলবার বিকেল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত্রি সাড়ে দশটা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়নি।

আবহাওয়া ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বেনারকে বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ভারত ও বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত ঘটায়। কিন্তু এ বছর সেই মৌসুমি বায়ু পাকিস্তান ও পশ্চিম ভারতে প্রভাবিত হয়ে সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছে।

সেকারণে আগের দুই সপ্তাহে কোনো বৃষ্টি হয়নি। সারা দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। দেশের অধিকাংশ এলাকায় তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়।

তিনি বলেন, এ সপ্তাহে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বাংলাদেশে এসেছে। ফলে, সারা দেশে বৃষ্টিপাত হবে। আগামী সাত দিন প্রবল বর্ষণ হবে। অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। ফলে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে।

বৃষ্টিপাতের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা উপকূলীয় এলাকার বাঁধগুলো হুমকির মধ্যে থাকবে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দুই দিন পানি বৃদ্ধির এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও এর ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও এর ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ওই অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, ফেনী, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

কেন্দ্রের মতে, আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

ঢাকায় জলাবদ্ধতা

ঢাকায় প্রবল বর্ষণ চলে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত। তবে, প্রথম দুই ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের মাত্রা ছিল তীব্র। এই দুই ঘণ্টায় রাজধানীর মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, মতিঝিল, কমলাপুর, শান্তিনগর, বসুন্ধরা ও আরও এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়।

যারা সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যান তারা পানিবন্দী হয়ে পড়েন বিকেলে। চলাচলের প্রয়োজনীয় যানবাহন না পেয়ে নোংরা পানির মধ্যেই হেটে গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা যায় শত শত মানুষকে।

একটি বেসরকারি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন বেনারকে বলেন, সকালে কোনো বৃষ্টি ছিল না। খুব ভালোভাবেই কাজীপাড়া থেকে মতিঝিলে অফিসে আসি। কিন্তু আমাদের অফিসের সামনে জমে যায় হাঁটুপানি। কোনো যানবাহন না পেয়ে অবশেষে নোংরা পানির মধ্যে দিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে এসে একটি গাড়িতে উঠি।

তিনি বলেন, মতিঝিলে রাস্তার দুই পাশ দিয়ে কেউ প্যান্ট ভাঁজ করে আবার কেউ লুঙ্গি কাছা মেরে হেঁটে পানি পার হয়েছেন। যেহেতু রাস্তায় পানি সেহেতু বাসগুলো খুব ধীর গতিতে চালিয়েছে। আর এর ফল অসহনীয় যানজট।

হাফিজ বলেন, দুই ঘণ্টার রাস্তা আসতে লেগেছে চার ঘন্টা। ফার্মগেটসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘন্টার পর ঘন্টা।

যানবহানের অভাবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন কর্মজীবী নারীরা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।