ডলার সংকট মোকাবেলায় বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নতুন শুল্ক
2022.05.24
ঢাকা
বিদ্যমান ডলার সংকট মোকাবেলায় নানামুখী উদ্যোগের অংশ হিসেবে এবার বিদেশি ফুল-ফল, ফার্নিচার ও প্রসাধনী সামগ্রী আমদানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানিয়েছে, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাসকরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিদেশী ফল-ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি পণ্যের আমদানি পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রায় ৪৮ ধরনের পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে, যা সোমবার থেকেই কার্যকর করা হয় এবং বিভিন্ন মাত্রায় শুল্ক বাড়ানো হয়েছে আরো কিছু পণ্যে।
এই নির্দেশনার ফলে শুল্ক বাড়বে সব ধরনের বিদেশি ফুল, কলা, শুকনা ও তাজা ডুমুর, আনারস, অ্যাভোকাডো, পেয়ারা, গাব জাতীয় ফল, আম, কমলালেবু ও লেবুজাতীয় ফল, আঙ্গুর, তরমুজ, আপেল, নাশপতি, পেঁপে, বাদাম ইত্যাদি আমদানিতে।
এ ছাড়া প্রসাধনী সামগ্রীর মধ্যে আছে সুগন্ধি (পারফিউম), সৌন্দর্য বর্ধনের নানা উপাদান (যেমন: সানস্ক্রিন, সান টান ইত্যাদি), হাত-পায়ের নখের প্রসাধনী, দাঁতের পেস্ট ও পাউডার এবং সেভ করার প্রসাধনী।
অন্যদিকে শোবার ঘর, রান্না ঘর ও অফিসের জন্য লোহা, কাঠ বা প্লাস্টিকের যেকোনো ধরনের আসবাব আমদানিতেও এখন থেকে বাড়তি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিতে হবে বলেও জানিয়েছে এনবিআর।
“বাংলাদেশ ফুল ও ফল চাষে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী। নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় ফুল ও ফল চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাবে এবং ফুল-ফল চাষে উৎসাহিত হবে। এতে করে দেশের প্রান্তিক চাষীরা লাভবান হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে,” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এনবিআরের তথ্য মতে, বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের ফল আমদানিতে ৫৮ শতাংশ থেকে প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কর রয়েছে, যার মধ্যে তিন শতাংশ আরডি রয়েছে। নতুন করে এসব ফলের উপর ২০ শতাংশ আরডি আরোপ হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস আইটেমে ১০৪ শতাংশ থেকে ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক-কর রয়েছে এবং ফুল আমদানিতে রয়েছে ৫৮ শতাংশ।
রাজধানীর হাতিরপুলের ফল ব্যবসায়ী শরিয়ত উল্লা বেনারকে বলেন, বাংলাদেশ যেসব ফল আমদানি করা হয় সেগুলো মূলত বিভিন্ন ধরনের কমলা, আপেল, আঙ্গুর, খেজুর এবং মাল্টা।
বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফার্নিচার ও কসমেটিকস যথেষ্ট মানসম্পন্ন এবং দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফার্নিচার ও কসমেটিকসে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশী পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প বিকশিত হবে।
এছাড়াও এ ধরনের পণ্যের অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে তা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, মনে করে এনবিআর।
এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে এসব পণ্য কিনতে খরচ বাড়বে এবং বাজারে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ।
“এনবিআর সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই বাজার গবেষণা করে এই উদ্যোগ নিয়েছে। আমি মনে করি এর ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এর তাৎক্ষনিক প্রভাব পড়বে আমদানিকারক ও ভোক্তা পর্যায়ে,” বলেন মজিদ।
কোনো পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক কর আরোপের বিষয়টি সাধারণত বাজেটে নির্ধারণ হয়ে থাকলেও এবার বাজেটের ১৫ দিন আগেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিলো।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, আগামী ৯ জুন তিনি সংসদে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও অর্থনীতিতে কোভিডের প্রভাব সামাল দিতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বিশেষ করে রপ্তানির তুলনায় আমদানির হার বেড়ে যাওয়া ও যুদ্ধ পরিস্তিতিতে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় দেশের বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে বহুগুন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ডলারের বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চলতি মে মাসে ইতোমধ্যে তিনবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের বিনিময় হার ছিল প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা, যা রোববার পর্যন্ত ছিলো ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার ৪০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।
তবে খোলা বাজারের (কার্ব মার্কেট) মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ডলার বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডলার ৯৮ টাকা ২০ পয়সা মূল্যে। এর আগে গত ১৭ মে খোলা বাজারে ডলারের দাম ১০২ টাকায় উঠেছিল।
ফার্মগেট এলাকার ভাই ভাই মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হাতেম আলী বেনারকে বলেন, বাজার পরিস্থিতির কারণে এর চেয়ে কম দামে তারা ডলার বিক্রি করতে পারছেন না।
বুধবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, খাদ্য, সার, মূলধনী যন্ত্রাংশ, জ্বালানীসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলার নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই।
এদিকে ডলারের বাজার নিয়ে চলমান অস্বস্তির মধ্যে বিদেশ থেকে ডলার আনার প্রক্রিয়া উদার করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এখন থেকে প্রবাসী আয় বাবদ দেশে যত পরিমাণ ডলার পাঠানো হোক না কেন, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো এবং এর বিপরীতে আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনাও বলবৎ থাকবে।
এর আগে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয় পাঠাতে আয়ের নথিপত্র জমা দিতে হতো।