রাঙ্গামাটিতে এবার খুন হলেন আওয়ামী লীগ নেতা

জেসমিন পাপড়ি
2019.03.19
ঢাকা
190319_Rangamati_killing_1000.jpg ১৮ মার্চ রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহতদের লাশ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল থেকে গ্রহণ করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক মৃতের স্বজন। ১৯ মার্চ ২০১৯।
[ফোকাসা বাংলা]

মাত্র ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে আবারও রক্তাক্ত হলো পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। এবার জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলিখিয়ং এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে জানান রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর।

তিনি বেনারকে বলেন, “কয়েক ব্যক্তির সাথে ফারুয়ার ওরাছড়ি থেকে ট্রলারযোগে বিলাইছড়ি ফিরছিলেন সুরেশ কান্তি। পথিমধ্যে রাইংখ্যং নদী ধরে আলীখ্যং এলাকায় আসার পরে কয়েকজন অস্ত্রধারী ট্রলারটির গতিরোধ করে সুরেশকে তুলে নিয়ে গুলি করে।”

“আহত সুরেশ কান্তিকে বিলাইছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন,” বলেন তিনি।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারীদের উপর সশস্ত্র হামলায় সাতজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন।

পাহাড়ের এই দুই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে বেনারকে জানান রাঙ্গামাটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছুফিউল্লাহ।

যৌথ অভিযান চলছে

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা হত্যাকাণ্ডের জন্য জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতিকে (জেএসএস) দায়ী করেছেন।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হাজী মো. মুসা মাতব্বর সাংবাদিকদের বলেন, সুরেশকে স্থানীয় রাজনীতির জেরে সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতির লোকেরাই হত্যা করেছে।

সুরেশ হত্যার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে জনসংহতি সমিতি। সংগঠনটির রাঙ্গামাটি সম্পাদক নীলোৎপল খীসা সাংবাদিকদেরকে বলেন, “এ অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন প্রচেষ্টা থেকেই এ ঘটনার সাথে আমাদের নাম জড়ানো হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।”

সোমবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পর্বের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিলাইছড়ি উপজেলায় জয়ী হয়েছেন জনসংহতি সমিতির প্রার্থী বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা।

আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, সোমবারের হামলাও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর বিরোধের জের। অপরাধীদের ধরতে চলছে যৌথ অভিযান।

সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খাগড়াছড়ি সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “জেএসএস মেইন গ্রুপ। তারা সরকারকে এক ধরনের হুমকি দিয়েছিল। আমার ধারণা তারা জড়িত আছে। তাদের সহযোগী হিসেবে ইউপিডিএস একসাথে কাজ করে। তারাও জড়িত থাকতে পারে।”

তিনি বলেন, “উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ধরনের নৃশংস ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যৌথবাহিনী কাজ করবে। পাহাড়ে দ্রুত চিরুনি অভিযান চালানো হবে।”

তবে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও বাঘাইছড়ি উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা বেনারকে বলেন, নির্বাচনের একদিন আগে থেকে ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের এলাকা এমএন লারমার গ্রুপ দখল করে নেয়। ১৭ তারিখ থেকে তারা বেপরোয়াভাবে অস্ত্রসহ চলাফেরা করেছে। তাহলে ভেবে দেখেুন, এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত থাকতে পারে।”

“ওরা হামলা চালিয়ে সেই দায় আমাদের উপর দেওয়ার চেষ্টা করছে,” বলেন তিনি।

পুলিশ হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চালানোর কথা বললেও মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে এই হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করে যাথাযথ শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বাঘাইছড়িতে আহতদের দেখতে এসে একথা বলেন তিনি। পাশাপাশি সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেন সিইসি।

নুরুল হুদা বলেন, “এটি খুবই দুঃখজনক যে, যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের উপর রাতের অন্ধকারে হামলা করা হলো। এর সঙ্গে যারা জড়িত তদন্ত করে তাদের খুঁজে বের করা হবে।”

বাঘাইছড়িতে আহদের মধ্যে ১০ জন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের তিনজনের অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান।

এ ছাড়া আহত আরও ৪ জনকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

“ঢাকা সিএমএইচে আহতের চিকিৎসা চলছে। তারা আপাতত শঙ্কামুক্ত,” বেনারকে জানান আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম শাম্মী।

থমথমে বাঘাইছড়ি

এদিকে সোমবার সন্ত্রাসী হামলায় নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনের হতাহতের ঘটনার পর থেকে বাঘাইছড়িতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে চারদিকে চাপা উৎকণ্ঠা। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি আর পুলিশ। যানবাহনও চলছে না।

স্থানীয় সাংবাদিক মো. সাইফুল বেনারকে বলেন, “বাঘাইছড়িতে রাস্তায় কোনো গাড়ি চলছে না। যারা জরুরি কাজে বের হয়েছেন তাদের মাইলের পর মাইল হাঁটতে হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যটন এলাকা সাজেকেও পর্যটক আসছে না।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।