পাথর তুলতে গিয়ে নিহত পাঁচ মাদ্রাসা ছাত্রসহ ছয়জন

জেসমিন পাপড়ি
2017.11.07
স্থানীয়দের সহায়তায় ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালায় ফায়ার সার্ভিস। স্থানীয়দের সহায়তায় ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালায় ফায়ার সার্ভিস। ৭ নভেম্বর ২০১৭।
বেনারনিউজ

পাথর বিক্রি করে স্থানীয় মেলার টাকা জোগাড় করাই ছিল লক্ষ্য। আর তাই শাবল ও লোহার রড নিয়ে নদীর তীর থেকে পাথর তুলতে গিয়েছিল ওরা। অথচ ভূমি ধসের শিকার হয়ে সেই পাথরের নিচেই প্রাণ গেলো পাঁচ মাদ্রাসার ছাত্রসহ ছয়জনের। এসব ছাত্রদের বয়স ১২-১৬ বছর।

মঙ্গলবার সকালে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার চাণ্ডালা বাংলাটিলা এলাকার লোভাছড়া নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার।

নিহতরা হলো ডাউকেরগুল নেসারুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র বাংলাটিলা এলাকার ইউনূস আলীর ছেলে জাকির (১৬), মুসাব্বির আলীর ছেলে মারুফ (১৩), আলমাস মিয়ার দুই ছেলে নাহিদ (১৩) ও শাকিল (১২), আনা মিয়ার ছেলে আবদুল কাদির (১৩) এবং স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল বারীর ছেলে সুন্দর আলী (৩৫)।

“মাদ্রাসাটির বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীরা ওই মেলার খরচের জন্য টাকা সংগ্রহ করতে নদীর তীরে পাথর সংগ্রহ করতে গিয়েছিল। তারা পেশাদার নয়,” বেনারকে বলছিলেন শামসুল আলম সরকার।

“এই অঞ্চলের অনেক মানুষ নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। লোভাছড়া নদীর পানি শুকিয়ে আসায় তলদেশে অনেক পাথর বেরিয়ে এসেছে,” জানান তিনি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, পাথর তুলতে গিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। এই স্থান থেকে পাথর তোলার কোনো বৈধতাও নেই।”

জায়গাটি অত্যন্ত প্রত্যন্ত এবং সীমান্তবর্তী জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল নোমান বেনারকে বলেন, “বেশ কয়েক বছর ধরে একটি প্রভাবশালী মহল লোভা নদীর তীরবর্তী এলাকায় সুড়ঙ্গ তৈরি করে পাথর তুলে আসছিল। সেখান থেকে অবৈধভাবে হাজার হাজার ঘনফুট পাথর তুলে নেওয়ায় এই নদী তীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।”

“নিহতরা দেশীয় শাবল ও লোহার রড দিয়ে মাটি খুঁড়ে বারকি নৌকা দিয়ে লোভাছড়া নদীর তীরবর্তী ওই অংশ থেকে পাথর উত্তোলন করছিল। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিশাল আকৃতির পাথর বেষ্টিত একটি অংশ ৭ জনের দলটির ওপর ধসে পড়ে। তাদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে একজনকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়,” জানান আবদুল্লাহ আল নোমান।

এ ঘটনা শিশু শ্রম বন্ধ এবং নদী ভাঙন ও বিপর্যয় ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ কতটা উদাসীন সে দুটোরই প্রমাণ দেয়—বেনারকে বলেন মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী।

তিনি বলেন, “বছরের পর বছর ধরে নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে পাথর তুলে নিয়ে পুরো এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা ব্যক্তিদের যেমন আইনের আওতায় আনা হয়নি, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানটিকেও চিহ্নিত করা হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে প্রাণ গেলো কয়েকজন ছাত্রের। এ দায় কোনোভাবেই সরকার এড়াতে পারে না।”

এটাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে দোষীদের দ্রুত শাস্তি দাবি করেন তিনি।

তবে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা।

তদন্ত কমিটি গঠন

পাথর তুলতে গিয়ে পাঁচ ছাত্রসহ ছয় জনের মৃত্যুর ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার।

তিন সদস্যের একটি কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সৈয়দ হামিদুর রহমানকে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাতকে প্রধান করে পুলিশের পক্ষ থেকেও আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনে জমা দেবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।