ঘূর্ণিঝড়ের পর বন্যার শঙ্কা
2024.05.28
ঢাকা
ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলীয় এলাকা থেকে ধীরে ধীরে মঙ্গলবার সিলেট হয়ে ভারতের আসামে চলে গেছে। যার ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেনারকে বলেন, “আসামে অতি ভারী বৃষ্টির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে; আকস্মিক বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ফেনী, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে।
আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের ভেতরে ও উজানের বিভিন্ন স্থানে মাঝারী থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটি বলছে, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও বিপৎসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা মঙ্গলবার বিকেলে বেনারকে বলেন, “গত দুই দিনের বৃষ্টিতে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে এখন বৃষ্টিপাত কম হবে। তবে আসামের মেঘালয়ের দিকে বড় ধরনের বৃষ্টি হলে সেই বৃষ্টির ঢল থেকে সিলেট অঞ্চলে বন্যা হতে পারে। ”
গবেষকেরা বলে আসছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরের অতি উষ্ণ অবস্থা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করছে। এমন ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে রয়েছে বেশ ক্ষতির কারণ ছিল সিডর, আইলা, আম্পান, মোখা ও ইয়াস।
রিমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯ জেলা
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার রাতে পশ্চিমবঙ্গে সাগর আইল্যান্ড ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া ও মোংলার দক্ষিণ দিকে উপকূলে আঘাত হানে। ঝড়ো হাওয়া, অতি ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৯টি জেলা।
রাজধানী ঢাকায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঢাকার অনেক এলাকা থেকে এখনো জলাবদ্ধতা দূর হয়নি।
সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ছয় জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে ১৬ জনের মৃত্যু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সোমবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান বলেন, “১৯ জেলার ১০৭ উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।”
তিনি বলেন, “৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২ ঘর-বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘর-বাড়ি।”
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, “উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন আট লক্ষাধিক মানুষ।”
এছাড়া, জলোচ্ছ্বাসে ফসলের খেত, মাছের ঘের নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবন, নিঝুম দ্বীপসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মারা গেছে পাখি ও বন্যপ্রাণী।
জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) প্রাথমিক হিসাবে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের ১০ জেলার ৮৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাত লাখের বেশি শিশু এবং প্রায় ৪৩ লাখ নারী।
বিদ্যুৎহীন ৩ কোটি গ্রাহক
ঘূর্ণিঝড়ে মূলত সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তিন কোটি তিন লাখ নয় হাজার ৭০২ জন গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন। এখনো সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করছে। বুধবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ সংযোগ স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।
ফ্লাইট বাতিল
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটের ১০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। বন্ধ রাখা হয় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটও। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ভোট স্থগিত
আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় ২২টি উপজেলার ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম এ কথা জানান।